×

মুক্তচিন্তা

সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করুন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০১৮, ০৭:৩৯ পিএম

আমরা চাই খুন করে যেন খুনিরা পার পেয়ে না যায়। প্রত্যেক মানুষ যেন স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা পায়। সুবর্ণা নদীর হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জোরদার উদ্যোগ নিতে হবে।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক জাগ্রত বাংলার সম্পাদক সুবর্ণা নদীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত বুধবার পুলিশ মামলার প্রধান আসামি নদীর সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাসার সামনে এই সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এই মর্মান্তিক ও নির্মম ঘটনায় আমরা শোকাহত, ক্ষুব্ধ।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ রোডে অবস্থিত নিজ কার্যালয় থেকে রাধানগর মহল্লায় ভাড়া বাসায় ফেরার সময় আক্রান্ত হন সুবর্ণা আক্তার নদী। বাসার সামনে মুখ ঢাকা দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে চলে যায়। পাবনা সদর হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। পুলিশের ধারণা, সুবর্ণার সাবেক স্বামীর পরিবারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। ওই দিন সকালে তিনি তার দায়েরকৃত বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন। বিচ্ছেদের পর নদীর সাবেক স্বামী রাজীবের বিরুদ্ধে মামলাটি নদীই দায়ের করেছিলেন। এই মামলা করার পর থেকে রাজীব ও তার বাবা আবুল হোসেন নদীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এর জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে নদীর পরিবারের লোকজন মনে করছেন। মামলা করার পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী তাকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দেয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২২ জুলাই পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ কার্যালয়ে সুবর্ণা সংবাদ সম্মেলন করে স্বামী- শ্বশুরের হাত থেকে বাঁচতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন। যে কারণেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটুক না কেন, এর রহস্য উন্মোচন করে খুনিদের কঠোর আইনের আওতায় এনে ত্বরিত বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বলা যায়, সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। বিচারহীনতা অপরাধকে আরো উৎসাহিত করে। বছরের পর বছর চলে যায়। সাংবাদিক শামছুর রহমান, হুমায়ুন কবীর বালু, মানিক সাহার খুনিরা শাস্তি পায় না। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ এরকম কত আলোচিত হত্যাকাণ্ডেরই বিচার ঝুলে রয়েছে। কত ঘাতক প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইন-আদালতের ভয় না থাকলেই তো খুনিরা পরিকল্পিতভাবে খুন করার সাহস পায়। তাই আজ সুবর্ণার ঘাতকদের শাস্তি দিতে না পারলে কাল সেই একইভাবে আরেক জনকে খুন হতে হবে- এটা অভাবনীয় কিছু নয়! বলাই বাহুল্য, বর্তমানে সাংবাদিকদের জীবন চরম অনিরাপদ। দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে সাংবাদিকতায় নিয়োজিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘাতকদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যমন্ত্রী স্বল্পতম সময়ে অপরাধীদের বিচারাধীন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা এই প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আমরা চাই খুন করে যেন খুনিরা পার পেয়ে না যায়। প্রত্যেক মানুষ যেন স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা পায়। সুবর্ণা নদীর হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জোরদার উদ্যোগ নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App