×

পুরনো খবর

শক্ত অবস্থানে আ.লীগ, বিশাল ভোট ব্যাংক বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০৫:০৬ পিএম

শক্ত অবস্থানে আ.লীগ, বিশাল ভোট ব্যাংক বিএনপির
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার নাগরপুর উপজেলার ১২ ও দেলদুয়ার উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৬ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অন্তত দুডজন সম্ভাব্য প্রার্থী তৎপর হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বর্তমান এমপি খন্দকার আব্দুল বাতেনের সামনে এবারো প্রধান বাধা দীর্ঘদিনের প্রতিদ্ব›দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটু। তবে এ দুজনের দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে এবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ক্লিন ইমেজ এবং সততার সঙ্গে মন্ত্রণালয় পরিচালনায় সারা দেশের ন্যায় নির্বাচনী এলাকা নাগরপুর-দেলদুয়ারেও তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এ কারণে তিনি এ আসনের বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুদান, বন্যার্ত ও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন এবং সহায়তা করে আলোচনায় উঠে এসেছেন। এ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী এডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী এবং নূর মোহাম্মদ খান দুজনই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে গণসংযোগে নেমেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের যেমন শক্ত অবস্থান রয়েছে তেমনি বিএনপির রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আর এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে শেষ পর্যন্ত ঠিক কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তা নিয়ে এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে চলছে নানামুখী আলোচনা। তবে এ নির্বাচনী এলাকায় কোনো দলের একচ্ছত্র আধিপত্য নেই। জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে কমবেশি সব দলের প্রার্থীই জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভাবছে প্রেসটিজ ইস্যু বলে। আওয়ামী লীগ চায় জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে। আর বিএনপি মরিয়া হয়ে উঠেছে আসন পুনরুদ্ধারে। এদিকে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দলীয় কোন্দল ততই প্রকট হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে এ মুহূর্তে মামুনুর রহীম সুমন ছাড়া আপাতত আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। জাপা প্রার্থী মামুনুর রহীম সুমন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মৌসুমি প্রার্থীদেরও কদাচিৎ এলাকায় দেখা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটাররাও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও চায়ের দোকানে আড্ডায় প্রাধান্য পাচ্ছে ভোটের রাজনীতি। এদিকে দলীয় টিকেট বাগিয়ে আনতে কেন্দ্রের সঙ্গে জোর লবিংসহ এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন নেতারা। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট সেতাব আলী খান এ আসনে জয়লাভ করেন। এরপর এ আসনটি থেকে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী নূর মোহাম্মদ খান আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেতাব আলী খানকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে নূর মোহাম্মদ খান বিজয়ী হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির আবু তাহের নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের খন্দকার আব্দুল বাতেন বিএনপির এডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর কাছে পরাজিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও এডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী আব্দুল বাতেনকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জোট সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন খন্দকার আব্দুল বাতেন। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটুকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে খন্দকার আব্দুুল বাতেন আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেনÑ তথ্য প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট তারানা হালিম, বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আব্দুুল বাতেন, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম, তারেক শামস খান হিমু, শেখ আব্দুর রহিম ইলিয়াস, সৈয়দ মাহমুদুল ইলাহ লিলু, শেখ হাসিনা পরিষদের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মো. ফজলুল হক মল্লিক, কৃষক লীগ নেতা কাজী আনিছুর রহমান বুলবুল, ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম, ডা. আব্দুস সালাম প্রামাণিক প্রমুখ। অপরদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন যুদ্ধে অনড় অবস্থানে রয়েছেন সাবেক দুই মন্ত্রী এডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী ও নূর মোহাম্মদ খান। এ ছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা রবিউল আওয়াল লাভলু, এডভোকেট ইকবাল হোসেন খান, মো. শরিফুল ইসলাম স্বপন, সাবেক ছাত্রনেতা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মনোনয়ন চাইবেন। তবে জাপার সঙ্গে জোটগত ভোট হলে সে ক্ষেত্রে পাল্টে যাবে এ আসনের ভোটের হিসাব। আর রাজনৈতিক অঙ্গনে এমনটিই গুঞ্জন চলছে। অন্যদিকে কোন্দল নিরসন করা না হলে আগামী নির্বাচনে এ আসনটি হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচন ভাবনা নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এমপি বলেন, নাগরপুর-দেলদুয়ারের উন্নয়নে আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আমি আগামীতেও জনগণের সেবা করতে চাই। এ কারণে আমি দল থেকে মনোনয়ন চাইব। তবে নেত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই মনোনয়ন দেবেন। আমি জনগণের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ইতোমধ্যেই নাগরপুর-দেলদুয়ারের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন এবং এলাকার সাধারণ জনগণেরও বিপুল সাড়া পাচ্ছি। এ আসনে মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হব বলে আশা করছি। বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আব্দুল বাতেন গত দুই মেয়াদে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, থানা কমপ্লেক্স ভবন, উপজেলা পরিষদ ভবন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, এলাসিনে শামছুল হক সেতু ও কেদারপুরে শেখ হাসিনা সেতুসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তার অবদান রয়েছে। খন্দকার আব্দুল বাতেন বলেন, আমি এ আসনের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামীতেও জনগণের সেবা করতে চাই। দল মনোনয়ন দিলে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলেই থাকবে। কোন্দল অস্বীকার করে বাতেন বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ শক্তিশালী দল। বড় দলে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকতেই পারে। জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটু দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় কর্মকাÐ ছাড়াও এলাকার উন্নয়নে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরে অনুদান অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়া এলাকার মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এ ব্যাপারে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। দুর্দিনে আমি দলের হাল ধরেছি। সেই থেকে দলের জন্য আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মূল্যায়ন করবেন নেত্রী। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই মনোনয়ন দেবেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি মো. জাকেরুল ইসলাম উইলিয়াম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে দল গোছানোসহ দলীয় কর্মকাÐ চালিয়ে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের বড় রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপি। এ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন সাবেক মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী হামলা-মামলা উপেক্ষা করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভ‚মিকা রেখে চলেছেন। গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে আমি বিজয়ী হয়ে এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দেই। আমার দুই মেয়াদে ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্টসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। আরেক প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী বিএনপির হেভিওয়েট নেতা নূর মোহাম্মদ খান দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগের পাশাপাশি দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নূর মোহাম্মদ খান বলেন, দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি মূল্যায়ন করবেন নেত্রী। এদিকে নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে না আসতেই বিএনপিতেও মনোনয়নকেন্দ্রিক কোন্দল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগের পাশাপাশি দলাদলিতেও ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App