×

জাতীয়

বর্তমান সরকারের মেয়াদে থার্ড টার্মিনাল হচ্ছে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০১৮, ১২:০০ পিএম

বর্তমান সরকারের মেয়াদে থার্ড টার্মিনাল হচ্ছে না
নির্ধারিত সময়ের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও শুরু করা যায়নি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ। গত এপ্রিলে কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এখনো ৫ মামলায় ঝুলে আছে বিষয়টি। আবার মামলা নিষ্পত্তি হলেও দরপত্র প্রক্রিয়ায় লাগবে আরো ৭-৮ মাস। ফলে এ সরকারের মেয়াদে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে না। দেশের প্রধান এ বিমানবন্দরটির সক্ষমতা বাড়াতে আরেকটি টার্মিনাল ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। থার্ড টার্মিনাল ভবনের আয়তন হবে ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার। এ টার্মিনাল ভবন তৈরি করতে গিয়ে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে কার্গো ভিলেজ। সেটির আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভাঙতে হবে ভিভিআইপি কমপ্লেক্সও। নতুন কমপ্লেক্সের আয়তন হবে ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার। পার্কিং অ্যাপ্রোন রাখা হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। এ ছাড়া, র‌্যাপিড এক্সিট এন্ড কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে ও টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে বিমানবন্দর মূল সড়কের সংযোগ তৈরি করা হবে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। ২০১৭ সালের ১১ জুন প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে ৪ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বেবিচক। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো জাপানের নিপপন কায়ো এবং ওরিয়েন্টাল কন্সালটেন্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি কন্সালটেন্ট ও বাংলাদেশের ডিজাইন কন্সালটেন্টস লিমিটেড। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তৎকালীন বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের এপ্রিলে থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের সফট ওপেনিং এবং ২০২১ সালের এপ্রিলে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। তিনি আরো জানান, শাহজালাল বিমাবন্দরের যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ৮০ লাখ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ২ লাখ টন। বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ইতোমধ্যেই নিঃশেষ হয়ে প্রতিনিয়ত কার্গোজট সৃষ্টি হচ্ছে। চলতি বছর যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটিও ফুরিয়ে যাবে। তাই সময়ের পরিবর্তিত চাহিদানুসারে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের পর শাহজালালে যাত্রী হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা বছরে ২ কোটি এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বছরে ৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। সূত্র জানায়, চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে তাদের সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। টার্মিনালের বিস্তারিত ডিজাইন ও মূল নির্মাণ কাজের দরপত্রের খসড়াও তৈরি করেছে তারা। কিন্তু বিমানবন্দরের ভেতরে হেলিকপ্টার সেবাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দেয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরে যেতে না চাওয়ায় থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজে জটিলতা দেখা দেয়। শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বর্তমান কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, বেঙ্গল এভিয়েশনের হ্যাঙ্গার, পদ্মাওয়েল ডিপোর ভবন, হেলিকপ্টার পরিচালনাকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনাসহ বেশ কিছু অবকাঠামো অপরসারণ করতে হবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নেয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে মামলা ঠুকে দিয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসব মামলা নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। মামলা দ্রæত নিষ্পত্তির জন্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ কয়েক জন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত বুধবার তাদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠকও করেছেন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে, মামলা নিষ্পত্তির পরপরই থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হবে। কিন্তু হিসেব অনুযায়ী মামলা নিষ্পত্তির পর দরপত্র আহ্বান করে উপযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতেই আরো ৭-৮ মাস সময় লেগে যাওয়ার কথা। ফলে চলতি বছর এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ যে শুরু হচ্ছে না তা অনেকটাই নিশ্চিত। এ প্রসঙ্গে বেবিচকের আইন কর্মকর্তা এ কে এম নুরুন্নবী জানান, অনেকগুলো অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে এখনো ৫টি মামলা চলমান রয়েছে। নানা জটিলতা কাটিয়ে মামলাগুলোর রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি, দ্রæত রায় হবে এবং সংকট কেটে যাবে। এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেন, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ দ্রুত শুরুর ব্যাপারে আমরা সব পদক্ষেপই নিয়েছি। কিন্তু কিছু বিষয় আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। আমাদের আইনজীবীরা চেষ্টা করছেন যেন মামলাগুলোতে জিততে পারি এবং দ্রুত রায় আনতে পারি। এ ছাড়া আলোচনার মাধ্যমে কিছু বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App