দামুড়হুদায় পাট চাষে আগ্রহ নেই কৃষকের
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০৩:৩৭ পিএম
দামুড়হুদা উপজেলাসহ চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ক্রমাগত লোকসান আর নানা প্রতিক‚লতায় পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার পাটচাষিরা। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর অর্ধেকে নেমে এসেছে পাট চাষ।
জানা যায়, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, পচানোর জন্য পানির অপ্রতুলতা ও শ্রমিক সংকটের কারণে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। আর পাটের পরিবর্তে অর্থকরী ফসল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে ভুট্টা, ধান ও সব্জি চাষ। এভাবে চলতে থাকলে সোনালি আঁশখ্যাত পাট চাষ একদিন জেলা থেকে বিলুপ্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর ২২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হলেও চলতি বছরে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।
পাট বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী আঁশ উৎপাদনকারী অর্থকরী ফসল। পাট চাষ ও পাট শিল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জড়িত। স্বাধীনতার পরও প্রায় দেড় যুগ ধরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটের অবদান ছিল মুখ্য। পাট উৎপাদনকারী পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পাটের মান সবচেয়ে ভালো এবং উৎপাদনের বিবেচনায় ভারতের পরে দ্বিতীয় স্থানে এর অবস্থান।
জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতন, উৎপাদন খরচ বেশি ও পাট ছাড়ানোর পানির অভাবে কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে সাত-আট মণ পাট উৎপাদন হয়। প্রতি মণ পাট সর্বোচ্চ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ক্ষেত্রে বাজারমূল্য হিসেবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। ষাটের দশকেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাট ক্রয় কেন্দ্র ছিল। আবার বড় বড় জুটমিলের চাহিদা পূরণে কৃষকরা পাট চাষে ব্যাপক লাভবান হতেন। অপরদিকে ক্রয় কেন্দ্রগুলো পাট সংগ্রহ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতেন। ফলে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে কৃষকরাও ঝুঁকে পড়তেন পাট চাষে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার ৪টি উপজেলায় সর্বমোট পাট চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমি। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৯৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৫ হাজার ২৫০ হেক্টর এবং জীবননগর উপজেলায় মাত্র ৮শ হেক্টর জমি। গত বছর জেলায় পাট চাষ হয়েছিল ২২ হাজার ৭০ হেক্টর। এ বছর পাট চাষ কম হয়েছে ১২ হাজার ৬৭৬ হেক্টর, যা অর্ধেকেরও কম। জেলায় এ বছর ২২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তার ধারের কাছেও নেই লক্ষ্যমাত্রা। আষাঢ় মাস শেষ হয়ে এলেও তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। এলাকার বেশির ভাগ খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় অল্পসংখ্যক কৃষক, যারা পাট চাষ করছেন তারা চিন্তিত। পাট ঠিকমতো পচাতে না পারলে এর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চাষিরা জানিয়েছেন, যখন পাট চাষ করে ঘরে তোলেন তখন পাটের দাম থাকে ৯শ থেকে ১ হাজার ২শ টাকা। এক বিঘা জমিতে পাট হয় ৭ থেকে ৮ মণ। সে হিসেবে এক বিঘা জমির পাট বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়। অথচ এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে গিয়ে খরচ হয় সর্বনি¤œ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। সবচেয়ে বড় সমস্যা পাট কেটে জাগ দেয়া। তার ওপর পাট চাষ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির নিশ্চয়তা নেই।
পাট চাষ করেন চাষিরা। এর সুবিধা ভোগ করেন আড়ত ব্যবসায়ীসহ বড় বড় মহাজন। দেশে এখন অনেক ধরনের চাষ উঠেছে। এক বিঘা জমিতে বছরে তিনবার চাষাবাদ করার মতো ফসল আছে। লোকসান জেনে কেউ পাট চাষ করবেন কেন। যতটুকু চাষ হয়েছে জ্বালানির পাটকাঠি চাহিদা মেটানোর জন্য। তার ওপর কৃষি বিভাগের পাট চাষের ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। সরকারিভাবে জেলাতে নেই কোনো পাট ক্রয় কেন্দ্র।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাঈম আস শাকিব বলেন, ধানের দাম ভালো পাওয়ায় পাট চাষ থেকে মুুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন চাষিরা। তার ওপর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেয়ার জায়গার সমস্যাতো আছেই। এ ছাড়া বর্তমানে ধান, পাট চাষের চাইতে কৃষকরা সব্জি চাষে বেশি আগ্রহী। যার কারণে জেলাতে পাট চাষ হ্রাস পেয়েছে।