×

জাতীয়

জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে নিজামপুরবাসীর জীবনযাপন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০৩:১৯ পিএম

জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে নিজামপুরবাসীর জীবনযাপন
সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত পটুয়াখালীর মহিপুর থানার নিজামপুর গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ এক যুগেও লাঘব হয়নি। আন্ধার মানিক ও সাগর মোহনায় অবস্থিত নিজামপুর গ্রাম। সিডরে বেড়িবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে নিজামপুরসহ কয়েকটি গ্রাম। ভিটেমাটি রেখে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছেন হাজারো মানুষ। জোয়ার ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে নিজামপুরবাসীর জীবনযাপন। অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, পুকুর, বাড়িঘর। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দিন আগেই। গ্রামের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের নিচতলা অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় ৩ ফুট পানির নিচে থাকে। তখন বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। যেসব পরিবারের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, স্কুলের কাছাকাছি বসবাস করেন এমন কয়েকটি পরিবারের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার টানে প্রতিদিন সাঁতরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। মাচাং তৈরি করে কোনোরকম চলছে রান্না খাওয়া। ফসলি জমিতে লবণ পানি ঢুকে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগে। অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রভাব কেটে গেলে পরে তারা আবার বাড়ি ফেরে। সিডরের পর থেকে এমন দুর্ভোগের মধ্যে দিন পার করছেন নিজামপুর গ্রামের মানুষ। তাদের এ দুঃখ দুর্দশার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মিডিয়া কর্মীরা তুলে ধরেছেন প্রতিনিয়ত। তারপরও পরিবর্তন আসেনি নিজামপুরবাসীর জীবনমানের। পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে বেড়িবাঁধ তৈরি করে দেবে এমন আশ্বাসের ওপর ভর করে এখনো বসে আছেন নিজাম গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। তবে এখন আর কোনো আশ্বাস শুনতে চান না নিজামপুরবাসী। চান দ্রæত বেড়িবাঁধ মেরামত। নিজামপুর গ্রামের সচেতন মানুষ তাদের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করছেন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় নানা দুর্ভোগের কথা। বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়ে ১ কিলোমিটার অংশের কাজ সম্পন্ন হলেও বাকি অংশের কাজ করছেন না ঠিকাদার। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন ঠিকাদার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ ফেলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের নির্বাচনে ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে এখন আর তিনি কাজ করতে আসছেন না। অপর এক ঠিকাদার মৎস্য ব্যবসায়ী, তিনি ব্যস্ত থাকায় বেড়িবাঁধের কাজ বন্ধ রয়েছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদাররা সাংবাদিকদের বলেন, জমি না দেয়ায় তারা কাজ করতে পারছেন না। শিগগিরই কাজ শুরু করবেন বলে তারা জানান। নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশ্রাফ মৃধা বলেন, গত অমাবস্যার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তান্ডবে ১৫টি বাড়িঘর ভেঙে আন্ধার মানিক নদীতে তলিয়ে গেছে। অমাবস্যা পূর্ণিমার জো এলেই গ্রামের মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বন্দরে গিয়ে আশ্রয় নেন। জো চলে গেলে পরে তারা আবার বাড়ি ফেরেন। এমন অবস্থা সিডরের পর থেকেই। বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করলে স্থানীয় ছালাম হাওলাদারসহ দুই-তিন জন লোক দেড় থেকে দুইশ ফুট জমি নিয়ে একটু ঝামেলা করেছিল। তা এখন মিটে গেলেও ঠিকাদারের খামখেয়ালির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ হচ্ছে না। ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে গেছে আর ফিরে আসেনি। নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মহিপুর কো-অপ্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন জানান, সিডরের পর থেকে তারা সমুদ্রের পানির সঙ্গে এক প্রকার যুদ্ধ করে বসবাস করে আসছেন। বর্তমানে জোয়ারের পানির চাপ এতই বেড়েছে যে তাদের বাড়িঘর রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের ভাটা জোয়ারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। নাসির মাস্টার আরো জানান, বর্তমানে তার পরিবারসহ একাধিক পরিবার নিজামপুর গ্রাম ছেড়ে মৎস্যবন্দর মহিপুরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। মহিপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আ. ছালাম আকন সাংবাদিকদের জানান, জমি নিয়ে যে সমস্যা ছিল তা মিটে গেছে। ঠিকাদার মাসুম ব্যাপারী ও লিটন সাউগারের অবহেলা ও খামখেয়ালির কারণে নিজামপুর গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঠিকাদার একজন মৎস্য ব্যবসায়ী এবং অপরজন ইউপি সদস্য তারা তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। তাদের কাজের কথা বললে আজ-কাল বলে সময় পার করে দিচ্ছেন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের এ প্রতিনিধিকে বলেন, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের সুধীরপুর কোমরপুর গ্রাম ও নিজামপুর গ্রামের আংশিক নতুনভাবে বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন হলেও নিজামপুর স্কুলের কাছে কিছু অংশে স্থানীয়রা জমি না দেয়ায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় সংসদ সদস্যকে এ বিষয়ে অবহিত করলে তারা স্থানীয় চেয়ারম্যান আ. ছালাম আকনকে স্থানীয়দের সঙ্গে বসে ফয়সালা করে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কেউ জমি না দেয়ায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App