×

মুক্তচিন্তা

উন্নত চিকিৎসায় সরকারি উদ্যোগ জরুরি

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০৭:২৭ পিএম

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, শয্যাশায়ী রমা চৌধুরীর চিকিৎসায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রিয় রমা চৌধুরী, যিনি এ দেশের আলো-হাওয়া ছেড়ে স্বর্গেও যেতে চান না আমরা তাকে দেখতে চাই চট্টগ্রামের পথে পথে বই ফেরি করতে, তাকে দেখতে চাই সুন্দর সুন্দর কথামালার ভেতরে। এবং তার সেই স্বাভাবিক, মানবিক জীবন আরো আরো দীর্ঘায়িত হোক আমাদেরই মঙ্গলের জন্য।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে একাত্তরের বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন। তার রক্তচাপ দ্রুত ওঠানামা করছে। শরীরের অনেকাংশই ফুলে গেছে। রক্তশূন্যতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস সমস্যাও দেখা দিয়েছে। তাঁর এমন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন। ১৯৪১ সালে বোয়ালখালীর পোপাদিয়া গ্রামে রমা চৌধুরীর জন্ম। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। শত বাধা পেরিয়ে মা মোতিময়ী চৌধুরীর প্রেরণায় পড়াশোনা চালিয়ে যান। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাস করেন রমা চৌধুরী। তিনিই ঢাবি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী। একাত্তরের ১৩ মে ভোরে নিজবাড়িতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসরদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন রমা চৌধুরী। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে হারিয়েছেন তিন ছেলে। দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন শেষে লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। একজন শহীদ জননী, একজন বীরাঙ্গনা, একজন মমতাময়ী মা এই মাটিতেই খুঁজে পায় শ্রদ্ধা আর অনুভবের সবটুকু। মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রায় সর্বস্ব হারিয়েছেন। যুদ্ধকালে এবং পরে একে একে হারান তিন সন্তানকে। পুত্রশোকে তিনি এরপর থেকে পাদুকা না পরে খালি পায়ে চলাফেরা করে আসছেন। তার আকুতি, যে মাটিতে সমাহিত অকালপ্রয়াত তিন সন্তান, সেই মাটির ওপরে তিনি স্যান্ডেল পরে হাঁটবেন কীভাবে? আমরা নির্লজ্জ হাঁটতে পারি, গাইতে পারি- পারেন না একজন রমা চৌধুরী। তিনি খালি পায়ে হাঁটেন এ মাটিতে, জুতো তাকে নিতে পারে না সময়ের সঙ্গে। যে জননী বাংলাদেশের, প্রিয় জন্মভূমির প্রতিটা ইঞ্চি মাটিতে জিইয়ে রাখেন তার সাধনা আর স্বপ্নের বীজ- তিনি যুগের অবতার হয়ে আমাদের শিক্ষা দিয়ে যান কীভাবে ভালোবাসতে হয় মাটিকে-মানুষকে-স্বাধীনতাকে। রমা চৌধুরীর দীর্ঘ যাপন আর বিশ্বাসের বিশদ খতিয়ান আমরা দেখতে পাই তারই রচিত বিভিন্ন গ্রন্থে। তিনি জেগে থাকেন তার কবিতায়, উপন্যাসে, গল্পে, প্রবন্ধে এবং গবেষণায়। রমা চৌধুরী আর দশজন লেখকের মতো নন, ফলে তার রচিত বই যে কোনো লাইব্রেরিতে পাওয়া যায় না; তিনি নিজ হাতে ফেরি করেন তার রচিত বইগুলো। জীবন শেষে জীবিকা হিসেবে বেছে নেন লেখালেখিকে। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও কবিতা মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার ১৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

রমা চৌধুরীকে নিয়ে একটি অনলাইন পত্রিকায় মর্মস্পর্শী এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৩ সালে তাকে গণভবনে ডেকে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বীরাঙ্গনার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা আশা করব, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, শয্যাশায়ী রমা চৌধুরীর চিকিৎসায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রিয় রমা চৌধুরী, যিনি এ দেশের আলো-হাওয়া ছেড়ে স্বর্গেও যেতে চান না আমরা তাকে দেখতে চাই চট্টগ্রামের পথে পথে বই ফেরি করতে, তাকে দেখতে চাই সুন্দর সুন্দর কথামালার ভেতরে। এবং তার সেই স্বাভাবিক, মানবিক জীবন আরো আরো দীর্ঘায়িত হোক আমাদেরই মঙ্গলের জন্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App