×

মুক্তচিন্তা

প্রত্যাবাসনে বিশ্বের জোরালো ভূমিকা দরকার

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০১৮, ০৭:০৬ পিএম

 
বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের নাগরিক পরিচয়ের স্বীকৃতি, তাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করা ও নিরাপদ বসবাসের নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা আশা করছি, দ্রুত এই সংকটের সমাধান হবে। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য।
চলমান রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। এ সংকট সমাধানের দিশা মেলেনি আজো। ভেস্তে যেতে বসেছে রোহিঙ্গাদের নিজভূমে প্রত্যাবাসনের গোটা পরিকল্পনাটাই। রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া গত ২৩ জানুয়ারি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে তা আর হয়নি। উপরন্তু তহবিল সংকটে হোঁচট খাচ্ছে জাতিসংঘের নেতৃত্বে উদ্বাস্তুদের সহায়তায় নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ। এ সংকট দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। মানবিক সংকট হিসেবে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে ভূরাজনৈতিক সংকটে রূপ নিচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। এ সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মূল ভূমিকা হবে। জাতিগতভাবে নিধনের উদ্দেশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে গত কয়েক দশক ধরে। কিন্তু গত ২০১৬ সালের অক্টোবর এবং সর্বশেষ গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে অভিযানের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে নির্মমভাবে। সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা, ধর্ষণের শিকার হয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী। সহিংসতার ঘটনায় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকেই আরো অন্তত চার লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গত ২২ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা শুরু হয়নি। এমনকি কবে থেকে শুরু হবে তাও নির্দিষ্ট করে জানা যাচ্ছে না। কাজেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু বা সম্পন্ন হওয়া নিয়ে একটা বড় আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়ে জাতিসংঘে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। আশার কথা হলো, এখনো আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে তৎপর রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচ দেশের ১৩২ জন আইনপ্রণেতা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের নাগরিক পরিচয়ের স্বীকৃতি, তাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করা ও নিরাপদ বসবাসের নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। মানবিক কারণেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা। আমরা আশা করছি, দ্রুত এই সংকটের সমাধান হবে। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App