×

পুরনো খবর

বড় দুদলেই ডজন হেভিওয়েট প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০৩:০৪ পিএম

বড় দুদলেই ডজন হেভিওয়েট প্রার্থী
জেলার পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৫ সংসদীয় আসন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। মাঠে আছেন ডজনখানেক প্রভাবশালী নেতা। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকায় জনসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ দলীয় নানা কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, পথ-প্রান্তর, হাট-ঘাট আর মাঠ শুভেচ্ছা ব্যানার-ফেস্টুন আর পোস্টার টাঙ্গিয়ে রঙিন করে ফেলেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সাধ্যমতো তৃণমূল ভোটারদের সাহায্য-সহযোগিতায় পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করছেন তারা। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়নযুদ্ধে জয়ী হতে দলের ওপর মহলে চালিয়ে যাচ্ছেন লবিং। জেলার পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই আসনটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের দখলে থেকেছে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আসনটিতে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ১৯৯৬ সালে এমপি ফারুককে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন বিএনপি নেতা নাদিম মোস্তফা। তিনি টানা ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। আসনটিতে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই দলের নবীন-প্রবীণ মিলে অন্তত ডজনখানেক নেতা দলীয় মনোনয়নের আশায় মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ তুলে এলাকায় ভোটারদের কাছে প্রচার করছেন। এমনকি দারার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা দুর্র্র্নীতির খবরও প্রকাশিত হয়েছে। তবে সংসদ সদস্য দারা ও তার সমর্থকদের দাবি, এমপি দারার উন্নয়নমূলক নানা কর্মকাÐ এবং তৃণমূলে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার কারণে ইর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এদিকে দুইবারের সংসদ সদস্য বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নাদিম মোস্তফার বিরুদ্ধেও দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে জনসংযোগে নেমে পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা, সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও দলের জেলা শাখার স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মুনসুর রহমান, জেলা শাখার সহসভাপতি আব্দুল মজিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ ও জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ওবাইদুর রহমান। সংসদ সদস্য হিসেবে ওদুদ দারার ভ‚মিকার কারণে তার বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটা অংশ প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। তবে এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ডা. মনসুর রহমানের পক্ষে এবার বেশ গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। তিনি স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে রাজশাহীতে বিএমএর নেতৃত্ব দিয়েছেন। এলাকাবাসী বলছেন, তৃণমূলে ডা. মনসুর রহমানের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকার মানুষদের সাহায্য ও সহযোগিতা করছেন। ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এলাকার মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী নানা কর্মকান্ডে সব সময় তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান বলেন, আমি গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরেই পুঠিয়া-দুর্গাপুরের মানুষের সঙ্গে আছি। আমি একজন পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ। জীবনে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। এলাকার জনগণের জন্য কিছু করতে পারলেই সেটা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি আনন্দের হবে। কাজেই আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে অনেক নেতা আছেন। সবাই যে যার মতো করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে দুয়েক জন নেতা যাদের দলে অবস্থান নেই তারা দলের নিকট থেকে সুবিধা নিয়ে দলের মধ্যেই বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে এলাকার জনগণ আবারো উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আমাকেই নির্বাচিত করবে। ১৯৯৬ সাল থেকে দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফা। তিনি ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মন্ডল, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা আবু বকর সিদ্দিক, দুর্গাপুরের দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সাকলাইন, পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জুম্মা এবং দুর্গাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মন্টু। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী গোলাম সাকলায়েন বলেন, আমার প্রতি সাধারণ মানুষের অগাধ আস্থা রয়েছে। আশা করি, দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারব। পুঠিয়া ও দুর্গাপুরের বিএনপি নেতাকর্মীদের সংগঠিত করাই এখন আমার মূল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে এরই মধ্যে অনেকটা এগিয়ে গেছি। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলাম। বিভিন্ন সময় আমাকে বিরোধীদের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। শুধু সাধারণ জনগণের সেবা করাই আমার কাজ। এ জন্য আসনটিতে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে আশা করি, বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারব। বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ২০০৮ সালে যখন সবাই পলাতক, তখন আমি নেতাকর্মীদের পাশে থেকে নির্বাচন করেছি। তবে সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছিলাম। সেই থেকে জনগণের সঙ্গেই আছি। এবারো দল আমার প্রতি আস্থা রাখবে বলে বিশ্বাস করি। সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা সভাপতি নাদিম মোস্তফা বলেন, আমি পুঠিয়া-র্দুগাপুরবাসীর জন্য যা করে দিয়েছে তা ১০০ বছরেও অন্য কোনো এমপি করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি রাজনীতি করেছি সাধারণ মানুষ নিয়ে। সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করি। বর্তমান সরকারের প্রতিনিধিরা এলাকায় গেলেই ১৪৪ ধারা জারি করে। আমার নামে ৩০-এর অধিক মামলা দেয়া হয়েছে। এই সুযোগে যাদেরকে আমি নিজের হাতে নেতা বানিয়েছি তারাই এখন আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে। এর ফলে তৃণমূলে আমার জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে। আমাকে মনোনয়ন দিলে পুঠিয়া-দুর্গাপুরের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে চাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App