×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী, বিএনপিতে একক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০২:৪৬ পিএম

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী, বিএনপিতে একক
জেলার রানীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি ধরে রাখার চেষ্টা আওয়ামী লীগের। অপরদিকে আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি। তবে দলীয় কোন্দল সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন বেশ সক্রিয়। নিজেকে নানাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তারা। নিজেদের ছবিসংবলিত ব্যানার ও পোস্টার সাঁটিয়েছেন এবং বিলবোর্ডও স্থাপন করা হয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৩৬ ও মহিলা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৮ জন। একসময় এ আসন জঙ্গি এলাকা ও রক্তাক্ত জনপথ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এখানে উত্থান ঘটে জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ জেএমবির। এর নেতৃত্বে ছিলেন সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই। এ আসনে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন আলমগীর কবীর। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় পুনরায় নির্বাচিত হন তিনি। ইসরাফিল আলম নির্বাচিত হওয়ার পর একসময়ের রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাত এ দুই উপজেলায় শান্তির সুবাতাস বইতে থাকে। সর্বস্তরের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করে এ দুই উপজেলাকে শান্তির জনপদে রূপান্তর করেছেন বলে জানান তার সমর্থকরা। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে রানীনগরের কাশিমপুর এলাকায় প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর নিজ উদ্যোগে ‘পল্লী শ্রী নিকেতন’ নামে একটি প্রদর্শনী খামার গড়ে তোলা হয়েছে। প্রদর্শনী খামারের বিভিন্ন প্রকল্প দেখে অনেক বেকার যুবক ও কৃষক উপকৃত হচ্ছেন। কৃষিতে অসামান্য অবদান রাখায় গত ১ ফেব্রæয়ারি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার-১৪২৩ এ ভ‚ষিত হন ইসরাফিল আলম এমপি। তবে এ আসনে আ.লীগে গ্রæপিং আছে। এক অংশের নেতৃত্বে ইসরাফিল আলম এমপি অপর অংশে শক্তিশালী অবস্থানে আছেন রানীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম এমপি, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, রানীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল, বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলহাজ আব্দুর রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, ১৯৯০ সালে এলাকায় এসে সংগঠনকে সংগঠিত করেছি। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি তৈরি করে দিয়েছি। দলীয় কার্যালয় তৈরি করেছি। যার কারণে নেতাকর্মী এবং এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। এলাকাবাসী আশা করে ভোট দিয়েছিলেন। আমি আশাতীত কাজকর্ম করেছি। আ.লীগ এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আমি আশাবাদী আগামীতে মনোনয়ন পাব। এবার নির্বাচনে জেতার জন্য তেমন কষ্ট পেতে হবে না। তিনি আরো বলেন, এলাকার রাজাকার, নকশাল, সর্বহারা ও জেএমবি উৎখাত হবে নির্বাচনে আমার অঙ্গীকার ছিল এবং করেছিও তাই। বিশেষ করে অসহায় পরিবারগুলোকে চাকরি দেয়ার চেষ্টা করেছি। নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ওমর ফারুক সুমন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। বাবা ওহিদুর রহমান কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টামÐলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং মা মরহুম ফেরদৌসী রহমান ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মহিলা লীগের যুগ্ম আহŸায়ক। তরুণ এ নেতা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠা নিরবচ্ছিন্ন গণসংযোগ আর সামাজিক কমর্কাÐের মাধ্যমে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন বলে তার সমর্থকরা জানিয়েছেন। উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, আমার পরিবার বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী। যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন আওয়ামী লীগের আদর্শে চলব। মাঠে আমার অবস্থান ভালো। নেত্রী শেখ হাসিনা যদি মনোনয়ন দেন তাহলে নির্বাচন করব এবং বিজয়ী হব বলে আশাবাদী। ১৯৭২ সালে রানীনগর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৭৩ সালে থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী বর্তমানে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে আসীন আছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি লিফলেট বিতরণ ও প্রচার-প্রচারণা করছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন। ফলে বিএনপির এ দুঃসময়ে কাÐারি হিসেবে শক্ত হাতে দলের হাল ধরেছিলেন তারই ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্থীরা। কেন্দ্রে লবিং-গ্রæপিং চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন এবং নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও সরব। তার ঝুড়িতেই মনোনয়ন যাবে এমন মন্তব্য করেন তার সমর্থকরা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের সহসাধারণ সম্পাদক এছাহাক আলী, বিএনপি জেলা শাখার সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, আরেক সহসভাপতি এ জেড এম রফিকুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আমিনুল হক বেলালও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, চরম প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতেও বিএনপির হাল ছাড়িনি। মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের সংগঠিত রাখতে অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে সংগঠনের নানা কর্মসূচি পালন করছি। বর্তমানে সাংগঠনিক অবস্থা অনেক ভালো। রাজনৈতিক কাজের পাশাপাশি সামাজিক কাজও করে চলেছি। এ দুই উপজেলার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে শক্তিশালী সংগঠন আছে। সেই সংগঠন আগামী নির্বাচন মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। তবে মাঠ পর্যায়ে গুঞ্জন, ইসরাফিল আলম এমপির জয় শতভাগ নিশ্চিত। তিনি ইতোমধ্যেই এলাকায় ডিজিটাল এমপি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App