×

মুক্তচিন্তা

রক্তের হোলিখেলা কতদিন চলবে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০৯:২৯ পিএম

বর্তমান প্রেক্ষাপটে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। আঞ্চলিক গ্রুপগুলোর সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করে এর সুফল দৃশ্যমান করতে হবে পার্বত্যবাসীর কাছে। পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় নেতৃত্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বশীল ভূমিকাও দরকার।

আঞ্চলিক রাজনীতি বিভক্তিতে পাহাড়ি সংগঠনের মধ্যে চলছে খুনোখুনি। বারবার সবুজ পাহাড় রক্তাক্ত হচ্ছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে টার্গেট করে হত্যার মিশনে নেমেছে। এমতাবস্থায় পার্বত্য এলাকায় সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সর্বশেষ গত শনিবার খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকার একটি বাজারে প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের হামলায় ইউপিডিএফের নেতাকর্মীসহ সাতজন খুন হয়েছে। গত দশ মাসে পার্বত্য এলাকায় এ নিয়ে ৩৫ জন খুন হলো। এ সব হত্যার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে অশনিসংকেত ধ্বনিত হচ্ছে। কিছুদিন পরপরই অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্যাঞ্চল। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঘটছে প্রাণহানি। পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের নামে সক্রিয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নিজেরাই পারস্পরিক দ্বন্দ্ব লিপ্ত থাকছে সব সময়। আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিনিয়ত চলছে বন্দুকযুদ্ধ ও অপহরণের ঘটনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, সংস্কার (এম এন লারমা) গ্রুপের মধ্যে সংঘাত লেগেই রয়েছে। জানা যায়, ২০১৫ সালের দিকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন রাজনৈতিক দল জেএসএস, ইউপিডিএফ ও জেএসএস (এম এন লারমা) একটি গোপন সমঝোতা করে বলে জানা যায়। মূলত পাহাড়ি সুশীল সমাজের উদ্যোগে এই সমঝোতা হলেও দলগুলোর পক্ষে কখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। সাত খুনের নেপথ্যে মূল কারণ হলো পাহাড়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ আর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংগঠনগুলোর মধ্যে সৃষ্ট সংঘাত। তিনটি পার্বত্য জেলা ভাগ করে চারটি গ্রুপ চাঁদাবাজি আর আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। সাত খুনের ঘটনায় জেএসএস (এম এন লারমা) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করেছে প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হলেও চুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ পাহাড়িদের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর রক্তের হোলিখেলার অপতৎপরতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজীবনকে ক্রমাগতভাবে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে নিয়ে যাচ্ছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের অস্ত্রধারীদের উন্মাদনায় সাধারণ মানুষকে শঙ্কিত অবস্থায় রেখেছে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় সে সময়কার বিচ্ছিন্নতাবাদী শান্তিবাহিনীর দুই হাজার সশস্ত্র কর্মী অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। অবসান ঘটে অব্যাহত রক্তপাতের। সন্দেহ নেই, দীর্ঘদিন চলা সংঘাতময় পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির এই ঘটনা সমকালীন বিশ্ব পটভূমিতে একটি অনন্য ঘটনা। সে দিন এ চুক্তি স্বাক্ষর না হলে আজকের পরিস্থিতি কী হতো তা কল্পনা করাও কঠিন। আজ সে ভয়ঙ্কর অবস্থা বিরাজ করছে না সত্য কিন্তু পাহাড়ে পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বলা যাবে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। আঞ্চলিক গ্রুপগুলোর সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করে এর সুফল দৃশ্যমান করতে হবে পার্বত্যবাসীর কাছে। পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় নেতৃত্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বশীল ভূমিকাও দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App