×

জাতীয়

মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০১৮, ০১:৪৪ পিএম

মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস আজ
আজ ১৮ আগস্ট বানিয়াচং মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন সকালে নর-নারী এবং শিশুদের দাঁড় করে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। নৃশংস এই হত্যাকান্ডে বানিয়াচং থেকে যোগ দেন রাজাকাররা। বাড়িঘর লুটপাট করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয় পুরো গ্রাম। দিবসটি ঘিরে স্থানীয় শহীদ পরিবারের সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ ও শহীদ পরিবারগুলোকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আজও দেয়া হয়নি। বিচার করা হয়নি এ কাজে হানাদারদের সহযোগী রাজাকারদের। দেয়া হয়নি গ্রামবাসীকে গৃহনির্মাণের কোনো অনুদান। অপরদিকে গ্রামে পৌঁছেনি শিক্ষার ভালো পরিবেশ। বিশাল হাওরের মাঝখানে ভেসে আছে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার সবচেয়ে নির্যাতিত হিন্দু অধ্যুষিত মাকালকান্দি গ্রামটি। জানা যায়, ১৯৭১ সালে বানিয়াচংয়ের রাজবাড়ীর আত্মীয় সৈয়দ ফজলুল হক মোতোয়াল্লির নেতৃত্বে বানিয়াচংয়ে রাজাকার বাহিনী গড়ে ওঠে। ১৫ আগস্ট রাজাকারদের সঙ্গে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউসে হানাদাররা বৈঠক করে বানিয়াচং মাকালকান্দি গ্রামে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক ১৮ আগস্ট বুধবার কাক ডাকা ভোরে ৫০-এর বেশি নৌকা নিয়ে রওয়ানা হয় পাক সেনারা। বানিয়াচং থেকে স্থানীয় রাজাকাররা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। আনুমানিক সকাল ৮টায় ঘাতকরা পৌঁছায় দুর্গম মাকালকান্দি গ্রামে। ওই সময় গ্রামবাসী চন্ডি মন্দিরে মনষা পূজা করছিলেন। কোনো কিছু বোঝার আগেই নিরীহ নর-নারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক বাহিনী। কাতারে কাতারে দাঁড় করে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর ব্রাশফায়ার চালানো হয়। শতাধিক নারী-পুরুষকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এর মধ্যে ৭৮ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। নরপশুরা মিনতী রানী পাল নামের এক পূজারীর কোল থেকে তার ৩ বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। রাজাকারদের সহযোগিতায় হানাদাররা সে দিন চালায় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। যারা নৌকা দিয়ে পালাতে পেরেছিলেন তারা প্রাণে বেঁচে যান। হানাদাররা গণহত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। আতঙ্ক কেটে যাওয়ার পর নিহতের স্বজনরা বাড়িতে আসার আগেই শতাধিক লাশ নদীতে পচে ভেসে ওঠে। দুর্গন্ধে নিহতের স্বজনরা লাশগুলো সৎকার না করে পাশের নদীতে ভাসিয়ে দেন। এ গ্রামের হরিপদ চৌধুরী বলেন, ওই দিন তার মা-বাবা, ভাই-বোনসহ ৭ জনকে পৈশাচিকভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। কৃপেশ চৌধুরী গোপাল বলেন, তখন আমার বয়স ছিল ৫ বছর। নরপিশাচরা আমার মা-বাবা, ভাই-বোনসহ পরিবারের ৯ সদস্যকে হত্যা করেন। এ গ্রামেরই যুবক প্রদীপ দাশ জানান, ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট তৎকালীন ইউএনও মো. নুরে আলম সিদ্দিকীর প্রচেষ্টায় গ্রামে স্থাপিত হয় একটি স্মৃতিসৌধ। গ্রামবাসী আরো জানান, মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরও শহীদ পরিবারের কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। হয়নি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App