×

মুক্তচিন্তা

চামড়া ব্যবস্থাপনায় সংকট কাটিয়ে ওঠা দরকার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০১৮, ০৭:২৬ পিএম

চামড়া কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এতে চামড়া পাচার যেমন বন্ধ হবে, তেমনি চামড়া বিক্রেতারা ন্যায্যমূল্য পাবেন। চামড়া শিল্পও গতিশীল হয়ে উঠবে। ভারতে চামড়া পাচার রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীকে সতর্ক ও কঠোর অবস্থান নিতে হবে। পাশাপাশি সাভার ট্যানারি পল্লী নির্মাণকাজে গতি বাড়াতে তদারকি জোরদার করতে হবে।

কুরবানি ঈদের পর প্রায় প্রতি বছর চামড়া পাচারের ঘটনা ঘটে থাকে। পাচার হওয়ার জন্য চামড়ার দাম কম নির্ধারণকে দায়ী করা হয়। অন্যদিকে সাভার ট্যানারি শিল্প প্রস্তুত না হওয়ায় চামড়া সংরক্ষণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। আগামী বুধবার ঈদুল আজহা। দেশের ট্যানারি শিল্পের প্রধান উপাদান কাঁচা চামড়ার প্রায় ৬০-৭০ শতাংশই আসে এ সময়। দেশে এখন প্রতি বছর এক কোটির কিছু বেশি পশু কুরবানি দেয়া হয়। চলতি বছর ২০ কোটি বর্গফুট চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একদিকে হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশ বন্ধ, অন্যদিকে অপ্রস্তুত সাভারের ট্যানারি পল্লী। ফলে পশুর চামড়া সংরক্ষণে অনিশ্চয়তায় পড়বে ব্যবসায়ীরা। গত বছরও একই ধরনের সমস্যায় ভারতে পাচার হওয়ার পাশাপাশি সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়েছিল কুরবানির মৌসুমের প্রায় ২৫ শতাংশ চামড়া। তাই আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এবারো চামড়া পাচারের পাশাপাশি কাঁচা চামড়া নষ্টও হতে পারে। প্রতি বছর পশু কুরবানির পর সারা দেশ থেকে সংগৃহীত কাঁচা চামড়া রাজধানীর পোস্তগোলাসহ বিভিন্ন আড়তে সংরক্ষণ করা হয়। এর দুয়েক দিন পর থেকে ট্যানারির মালিকরা এসব চামড়া কিনে নিজস্ব ট্যানারিতে নিয়ে সংরক্ষণ করেন। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে সুবিধামতো সময়ে পাকা করা হয়। কিন্তু পরিবেশ দূষণের কারণে ইতোমধ্যে হাজারীবাগের সব ট্যানারি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কুরবানির চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য সাভারের ট্যানারি পল্লী প্রস্তুত নয়। প্রায় দেড় বছরেও কঠিন বর্জ্য ফেলার বিষয়টি সুরাহা করতে পারেনি শিল্প মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে (সিইটিপি) নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক ক্রোমিয়াম পুনরুদ্ধার বা রিকভারি ইউনিট চালু হয়নি। রাস্তাঘাট সংস্কার কাজের অগ্রগতি সামান্যই। ১৫৪ ট্যানারির মধ্যে প্রায় ৫০টির মতো ছোট বড় প্রতিষ্ঠান ব্ল ওয়েটের কাজ করছে। বাকি প্রতিষ্ঠান এখনো কার্যক্রম শুরু করেনি। ফলে এসব ট্যানারি কারখানা কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে উপযুক্ত নয়। চামড়া সংরক্ষণে এই অনিশ্চয়তায় পাচার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। চামড়ার দাম নির্ধারণ বিষয়টিও দেখা উচিত। কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন ও চাহিদা কমার অজুহাত তুলে কুরবানির পশুর চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করছেন ট্যানারি মালিক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের চামড়ার মান ভালো অথচ দাম অনেক কম থাকায় প্রতি বছরই ভারতে চামড়া পাচার হয়ে যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানিশিল্প চামড়া খাতটি ধ্বংসের দিকে যাবে। চামড়া সংগ্রহের বিষয়টি সুষ্ঠু নিয়মনীতির আওতায় আনা জরুরি।

আমরা মনে করি, চামড়া কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এতে চামড়া পাচার যেমন বন্ধ হবে, তেমনি চামড়া বিক্রেতারা ন্যায্যমূল্য পাবেন। চামড়া শিল্পও গতিশীল হয়ে উঠবে। ভারতে চামড়া পাচার রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীকে সতর্ক ও কঠোর অবস্থান নিতে হবে। পাশাপাশি সাভার ট্যানারি পল্লী নির্মাণকাজে গতি বাড়াতে তদারকি জোরদার করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App