×

অর্থনীতি

কোরবানির পশুর চামড়ার ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০১৮, ০৩:২২ পিএম

কোরবানির পশুর চামড়ার ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশয়
কয়েক দিন পরেই কোরবানির ঈদ। এ ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই এই সময়ে চলে ট্যানারি মালিকদের নানা পরিকল্পনা। গত বছর থেকে কোরবানির ঈদে সাভারে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী সাভারে পুরোদমে ট্যানারির কার্যক্রম চলার কথা। অথচ হেমায়েতপুরের হরিণধরায় গড়ে তোলা চামড়া শিল্পনগরের কাজ যেন শেষ হতে হতে থেমে যাওয়ার অবস্থা। এ যেন শেষ হইয়াও হইল না শেষ...। এর ফলে এবারের কোরবানির পশুর চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আশঙ্কা রয়েছে, কাঁচা চামড়া পাচারের। তবে পশুর চামড়া কেনা ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ঢাকার পোস্তার চামড়ার আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবারের ঈদে ভোটার তুষ্টিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নিজ এলাকায় বেশি করে পশু কোরবানি দেবেন। যার ফলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চামড়া সংগ্রহও হবে বেশি। এ বছর সারা দেশ থেকে ২০ কোটি বর্গফুট পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির এসব চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য সাভারের ট্যানারি পল্লী প্রস্তুত নয়। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, এক বছর চারমাসেও কঠিন বর্জ্য ফেলার বিষয়টি সুরাহা করতে পারেনি শিল্প মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে (সিইটিপি) নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক ক্রোমিয়াম পুনরুদ্ধার বা রিকভারি ইউনিট চালু হয়নি। রাস্তাঘাট সংস্কার কাজের অগ্রগতি সামান্যই। ১৫৪ ট্যানারির মধ্যে প্রায় ৫০টির মতো ছোট বড় প্রতিষ্ঠান বøু ওয়েটের কাজ করছে। বাকি প্রতিষ্ঠান এখনো কার্যক্রম শুরু করেনি। কয়েকজন আবার ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার পরিকল্পনায় আছেন। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে এ শিল্পখাতের ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার। চামড়াশিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ কয়েকবার সময় বাড়ানো হলেও এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন করেনি চায়না প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ট্যানারি পল্লীর ভেতরের রাস্তার পরিস্থিতিও অনেক খারাপ। সাড়ে তিন মাস আগে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হলেও তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। সবচেয়ে ভয়ানক খবর হচ্ছেÑ ট্যানারির বর্জ্যে সাভারের ধলেশ্বরী নদী দূষণের কবলে পড়েছে। শিল্পনগরী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানি ঈদের আগে যাতে অন্তত রাস্তাঘাট পুরোপুরি ঠিক করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিসিকের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) সাব্বীর আহমেদও অনিয়মের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বর্জ্য পরিশোধন শতভাগ হচ্ছে না। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রমতে, সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় ধলেশ্বরী নদীর তীরে ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমিতে গড়ে তোলা চামড়া শিল্পনগরে অধিকাংশ ট্যানারি ওয়েট বøু থেকে ফিনিশড পর্যন্ত কাজ শেষ করছে। পরে ফিনিশড ও ক্রাস্ট চামড়াগুলো রপ্তানি করা হয়। আবার কিছু ট্যানারি সাভারে ওয়েট বøুসহ কয়েকটি ধাপের কাজ করার পর শুকানোর কাজ করছে ঢাকার হাজারীবাগে। বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির কর্ণধার সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, কয়টি ট্যানারি স্থানান্তর হয়েছে। কোরবানি ঈদে সারা দেশ থেকে যখন পশুর চামড়া আসবে সে ক্ষেত্রে চামড়া প্রক্রিয়াকরণে তাদের সক্ষমতা রয়েছে। বর্জ্য অব্যবস্থাপনা : চামড়ার উচ্ছিষ্ট, ঝিল্লি, চামড়ার টুকরা, পশুর কান, শিং ইত্যাদি কঠিন বর্জ্য ফেলার জন্য এখন পর্যন্ত ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ করতে পারেনি বিসিক। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ওয়েট বøু থেকে যাবতীয় কাজ যখন থেকে বর্জ্য ফেলা শুরু করে ট্যানারিগুলো তখন থেকে ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য প্রায় পাঁচ একর জমিতে তৈরি করা বিশাল একটি পুকুরে বর্জ্যগুলো ফেলা শুরু করলে ভাগাড়ে পরিণত হয়। এতে স্থানীয় যমযম সিটি দেয়াল ভেঙে বেশ কয়েকবার ধলেশ্বরী নদীতে পড়ে। ভাগাড়ের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণায় বর্জ্য যখন পুকুরটিতে বেশি হয়ে যায় এবং বৃষ্টি হয় তখনই বাঁধ ভেঙে সেই বর্জ্য ধলেশ্বরী নদীতে পড়ে। একটি সূত্র জানায় ডাম্পিং ইয়ার্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা থাকলেও আপাতত তা হচ্ছে না। সংযোগ সড়কের বেহাল দশা : চামড়া শিল্পনগরীর ভেতরের সংযোগ সড়কগুলোর পাশের ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলে ট্যানারিগুলোর রাসায়নিক তরল পদার্থ, ক্যামিকেলমিশ্রিত রঙিন ও চুনা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। এমন কী বেশির ভাগ ম্যানহোলের মুখ খোলা থাকায় তরল বর্জ্যগুলো সারাক্ষণ বের হয়। ট্যানারির ভেতরের সড়কের পাশের ড্রেনগুলো বন্ধ রয়েছে। এটি সংরক্ষণ বিসিকের কাজ হলেও তারা ড্রেনগুলো পরিষ্কার কারার জন্য মালিকপক্ষকে বলছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহম্মেদ বলেন, কাজের তেমন অগ্রগতি নেই। অবকাঠামোগত সম্পর্কে তিনি বলেন, ৫০ বছরের কাজ রাতারাতি করা সম্ভব নয়। আমাদের জমি রেজিস্ট্রেশন দেয়নি। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) চলছে কোনোমতে। কেমিকেল ঠিকমতো দেয় না। এদিকে, কাঁচা চামড়ার ওপর ভর করে দেশের অভ্যন্তরে চামড়াজাত পণ্যের শিল্পের দ্রæত বিকাশ ঘটেছে। চামড়ার সঙ্গে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন বিশেষ করে স্যান্ডেল, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, পার্সসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু নানামুখী সমস্যায় এ শিল্পে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদে প্রয়োজন হয় লবণের। কোরবানি ঈদ এলেই সেই লবণের দাম বাড়তে থাকে। কোরবানি ঈদের আগে লবণের দাম বাড়লে চামড়া সংরক্ষণ বাধাগ্রস্ত হবে। পচে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি কাঁচা চামড়ার বাজারে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App