×

অর্থনীতি

ঈদে চামড়ার দাম কমায় বেড়েছে পাচারের আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০১৮, ০৩:৪৫ পিএম

ঈদে চামড়ার দাম কমায় বেড়েছে পাচারের আশঙ্কা
আরিফ হোসেন রাজীব : বাংলাদেশের কোরবানি করা পশুর চামড়া মানসম্মত হওয়ায় সারা বিশ্বে আমাদের দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এদিকে বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারো ঈদুল আজহায় দাম কমানো হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়ার। আর দাম কমার কারণেই সম্ভাবনা বেড়েছে পাচারের। যে কোনো পণ্য দেশের তুলনায় বিদেশে দাম বেশি পেলে তা পাচারের সম্ভাবনা থাকে। সে কারণে এই সম্ভাবনার বাইরে নয় বাংলাদেশের চামড়া খাতও। সম্প্রতি কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কাঁচা চামড়ার দাম বাড়ায়নি। দাম না বাড়ানোর কারণে পাচার হতে পারে চামড়া। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা বছর দেশে জবাই হওয়া পশুর অর্ধেকই জবাই হয় কোরবানির ঈদে। সারা বছর প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। এর মধ্যে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা এক কোটি ১৫ লাখ। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর পরিমাণ ছিল এক কোটি চার লাখ। এ বছর কোরবানিযোগ্য গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার। আর গত বছর ছিল ৪৫ লাখ ২৯ হাজার। এ বছর কোরবানিযোগ্য ছাগল ও ভেড়ার পরিমাণ ৭১ লাখ, আর গত বছর ছিল ৫৮ লাখ ৯১ হাজার। আসন্ন ঈদুল আজহায় ট্যানারির মালিকরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে রাজি করিয়ে ঢাকায় কোরবানির গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আর রাজধানীর বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। একইভাবে সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করেছেন এবং বকরির প্রতি বর্গফুট চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট কোরবানির গরুর চামড়ার দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, আর ঢাকার বাইরে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম সারা দেশে ২০ থেকে ২২ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম ১৫ থেকে ১৭ টাকা। যদিও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন কোরবানির পশুর চামড়ার দাম রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫৫-৬০ টাকা, রাজধানীর বাইরে ৪৫-৫০ টাকা, সারা দেশে খাসির চামড়া ২৫-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণে সুপারিশ করে। পাচার প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চামড়া পাচার রোধে সচেষ্ট রয়েছে সরকার। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার অবস্থা খারাপ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দাম কমেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যে কারণ দেখিয়ে প্রতি বছর চামড়ার কম দাম নির্ধারণ হয় তা সঠিক নয়। কাঁচা চামড়া কিনতে সরকার ব্যবসায়ীদের স্বল্পসুদে ঋণ দেয়। তাই ব্যবসায়ীদের অর্থ সংকট থাকার কথা না। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাভার চামড়া শিল্প নগরীর ১৫৫টি ট্যানারিসহ সারা দেশে ছাড়িয়ে থাকা চামড়া খাতের প্রায় তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান পুরো বছরের কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে এবং তা মজুদ রাখে। এদিকে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বিজিবিকে আগাম প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়েছে। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি নিয়ে লিখিত চিঠি দেয়া হয়েছে বলেও সূত্র জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিজিবিকে লেখা চিঠিতে কোরবানির আগে দেশের সবকটি সীমান্তে বাড়তি নজরদারি রাখার কথা বলা হয়েছে। সে লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা ও জনবল ঠিক রাখার কথাও বলা হয়েছে। প্রয়োজনে মহাসড়কগুলোয় পুলিশের বাড়তি টহল ও চেকপোস্ট বসানোর কথা বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া ও হিলি স্থলবন্দর এবং ভারতের দিকে কালীরানী, আংরাইল, হরিদাসপুর, জয়ন্তীপুর, বানোবেরিয়া, সুটিয়া, বাঁশঘাট ও আশপাশের এলাকা দিয়ে চামড়া পাচারের আশঙ্কা বেশি। ভারতের চামড়া ব্যবসায়ীদের চাহিদা কাজে লাগিয়ে উভয় দেশের চামড়া পাচারকারী চক্র কোরবানির ঈদের সময় সক্রিয় হয়। ঈদের দিন বা তার পরের দিন থেকে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে সীমান্ত দিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া পাচারে উঠেপড়ে লাগে। এ জন্যই সেখানে আগাম নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App