×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগ চায় ধরে রাখতে,বিএনপি মরিয়া পুনরুদ্ধারে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০১৮, ০৩:৪১ পিএম

আওয়ামী লীগ চায় ধরে রাখতে,বিএনপি মরিয়া পুনরুদ্ধারে
আর মাত্র কয়েক মাস পরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত দেশের বড় দুই রাজনৈতিক জোট। মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা ইতোমধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। এর রেশ পড়েছে প্রবাসী অধ্যুষিত ও অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনায় সিলেটের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উপজেলা বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসনেও। এ আসনে আগামী নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকবেলা করতে হতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপিকে। উভয় দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতার সংখ্যা একাধিক। আওয়ামী লীগ চায় আসনটি ধরে রাখতে আর ২০ দলীয় জোটভুক্ত বিএনপি মরিয়া সেটি পুনরুদ্ধারে। এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এ আসন ধরে রেখেছিলেন তিনি। আগামী নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনয়ন পাবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। মনোনয়নের ব্যাপারে নাহিদ ও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা একেবারেই নির্ভার হতে পারছেন না। কারণ, দীর্ঘদিন মন্ত্রী থেকেও এলাকায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগেরই অনেকে। দলের ভেতর কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারওয়ার আহমদ চৌধুরীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন তাদের অনেকে। প্রবাসী এই নেতা গত ৪ বছর ধরে এলাকায় নিজের জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে কাজ করে গেছেন। এ ছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়েছেন অল্প দিনেই। চলতি বছরের বন্যায় নিজস্ব তহবিল থেকে ত্রাণ বিতরণ করে এলাকায় সাড়া ফেলেন সারওয়ার। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে কর্মিসভা, ঘরোয়া বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে এলাকায় তার রয়েছে আলাদা ইমেজ। ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে সারওয়ার আহমদ বলেন, তৃণমূল কর্মীরাই আমার মূল শক্তি। তাদের সমর্থনেই আমি নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। তবে দলের সিদ্ধান্ত যাই হোক আমি মেনে নিতে রাজি আছি। এ ছাড়া সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসিরউদ্দিন খানও এখানে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচন করলে তিনি প্রার্থী না হয়ে কর্মীদের নিয়ে তাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে জানা গেছে। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলুও এ আসনে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। এদিকে এ আসনটিকে ঘিরে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিও কোমর বেঁধে নেমেছে। আসন্ন নির্বাচনে এ দলটি অংশগ্রহণ করবে কিনা তা এখনো ঠিক না হলেও বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ২০০১ সালে এ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেন লেচু মিয়া। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। সৈয়দ মকবুল হোসেন এ আসনে একটি ফ্যাক্টর হতে পারেন। বিএনপি ঘরানার এ শিল্পপতি ব্যবসায়ী গত বছর বিএনপি থেকে ইস্তফার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে মকবুল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক হলে তিনি তাতে অংশ নেবেন। তবে বিএনপি নয়, আবারো স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী তিনি। ভোটের মাঠে এর সুযোগ পুরোপুরি আদায় করে নিতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও ব্যবসায়ী ফয়ছল আহমদ চৌধুরী বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তিনিও এলাকায় বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। বিএনপির তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে বছরজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরব ছিলেন তিনি। তবে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হবে তাকেও। কারণ বিএনপিতে রয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরীর নামও আছে আলোচনায়। বিএনপির হয়ে এ আসনে নির্বাচন করতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন জাসাস সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এডভোকেট মাওলানা রশীদ আহমদ। অন্যদিকে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী থেকে মাওলানা হাবীবুর রহমান ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিবের নামও আছে আলোচনায়। সম্প্রতি সিলেট সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াতের বিতর্কিত অবস্থান সিলেট জামায়াতকে কোণঠাসা করে রাখলেও মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তা খুব একটা ভ‚মিকা রাখবে না বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামী সিলেট জেলা দক্ষিণের আমির মাওলানা হাবীবুর রহমান। তবে সিলেট বিএনপির বেশির ভাগ নেতাই মনে করেন জামায়াতকে এ আসন ছাড় দেবে না বিএনপি। সিলেট মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সালেহ আহমদ খসরু বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনের পর সিলেটে জামায়েতের ভোটের হিসাব বলে এখন আর বিএনপি নেতাকর্মীদের ভোলানো যাবে না। গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার অঞ্চলে বিএনপির নিজস্ব যে ভোট তাই এ আসনে জয়লাভের জন্য যথেষ্ট। তবে জোট কাকে মনোনয়ন দেবে তা দলীয় হাইকমান্ডের ব্যাপার। এদিকে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিও চাইছে এ আসনটি তাদের দেয়া হোক। সিলেট-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম উদ্দিন নিজেকে এ আসনে চান। ভোটের হিসাবে খুব শক্ত না হলেও সেলিম উদ্দিন এ আসনের শক্ত দাবিদার। গত নির্বাচনে নুরুল ইসলাম নাহিদের কারণে সেলিম উদ্দিনকে সিলেট-৫ আসনে মনোনয়ন দেয় মহাজোট। এবার আর এমনটি নাও হতে পারে বলে মনে করেন অনেকেই। এদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা সভাপতি লোকমান আহমদের। তিনি ১৯৯১ সালে এ আসনে মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App