×

মুক্তচিন্তা

বিচার কাজ শেষ হবে কবে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০৯:৫৮ পিএম

বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এই দাবি বিবেচনায় নিতে পারে সরকার। অন্যদিকে যে জঙ্গিরা সামনে এসে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিচার হচ্ছে। কিন্তু তাদের পেছনে তথ্য এবং অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে অনেকে। এই পর্দার পেছনের হোতাদের খুঁজে বের করতে কাজ করতে হবে।

সারা দেশে জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার তেরো বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে জেএমবি একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চরম ঔদ্ধত্যে তাদের শক্তিমত্তা জানান দিয়েছিল। ওই ঘটনার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিচারকাজ একযুগেও শেষ হয়নি। বিচার কাজে এই দীর্ঘসূত্রতা বিস্ময়কর। অন্যদিকে এখনো এই নিষিদ্ধ সংগঠনটির কার্যক্রম নির্মূল করা যায়নি। তাদের দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি চক্রগুলো। তাদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। এটিও উদ্বেগের।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট আজকের দিনে দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) বেলা ১১টার দিকে সিরিজ বোমা হামলা চালায় জেএমবি। মাত্র আধঘণ্টার ব্যবধানে দেশের পাঁচশ স্থানে চালানো সেই হামলায় অন্তত ৫ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হামলায় দুজন নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। হামলা চালানো হয় হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি আধাসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টেলিজেন্স এন্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স শাখার তথ্য মোতাবেক, সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৯টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এর মধ্যে ১০টি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। বাকি ১৪৯টি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়। এসব মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছে এক হাজারের বেশি আসামি। আসামিদের মধ্যে ৩৩৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। ২৭ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। এ মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপর জঙ্গি আসাদুর রহমান আরিফ পলাতক রয়েছে। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই ৬ জঙ্গির পর আর কারো ফাঁসি কার্যকর হয়নি। রাজধানীতে দায়ের হওয়া ১৮টি মামলার বিচারকাজ এখনো অসমাপ্ত। কোনো কোনো মামলার যুক্তিতর্ক চলছে। আবার কিছু মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। কখন এসব মামলার বিচার সম্পন্ন হবে তা কেউ বলতে পারছে না। বিভিন্ন সাক্ষ্যগ্রহণ এবং বিশ্লেষণে বিচার কাজে তৈরি হয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। তাই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এই দাবি বিবেচনায় নিতে পারে সরকার। অন্যদিকে যে জঙ্গিরা সামনে এসে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদেরই বিচার হচ্ছে। কিন্তু তাদের পেছনে তথ্য এবং অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে অনেকে। এই পর্দার পেছনের হোতাদের খুঁজে বের করতে কাজ করতে হবে। উদ্বেগের বিষয় হলো, সেই সিরিজ বোমা হামলার সময় থেকে আজো জেএমবি আতঙ্কে ভুগছে বাংলাদেশ। নিষিদ্ধ ঘোষিত এই জঙ্গি সংগঠনটির কার্যক্রম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্মূল করতে পারেনি। বরং জেএমবি প্রতিনিয়ত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কাজেই নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর পলাতক, ছাড়া পাওয়া, জামিন পাওয়া সদস্যদের নিয়েও ভাবতে হবে। তাদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টা ঠেকাতে হবে। এটা শুধু আইনের প্রয়োগ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দিয়ে হবে না। এর জন্য দরকার সচেতন সামাজিক প্রতিরোধ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App