×

জাতীয়

ঢাকায় নিয়ম মানছেন না হাটের ইজারাদাররা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১১:১২ এএম

ঢাকায় নিয়ম মানছেন না হাটের ইজারাদাররা
ঈদুল আজহার এখনো বাকি ৬ দিন। নিয়মানুযায়ী ঈদের ৩ দিন আগে ঢাকায় কোরবানির পশু কেনা-বেচায় হাট বসানোর কথা। তারও ২ থেকে ৩ দিন আগে অনুমোদিত হাটের প্রস্তুতি নেবেন ইজারাদাররা। নির্ধারিত জায়গার বাইরে হাট বসানোর কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এর কোনোটিই মানছেন না হাটের ইজারাদাররা। আর এসব নজরদারির জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নামমাত্র উদ্যোগ নেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। ইজারাদাররা নিজের ইচ্ছামতোই হাটের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জনগণের চলাচলের রাস্তায় এমনকি বাসার দরজার সামনেও গরুর হাট বসানো হয়। আর পশুর বর্জ্য ও মলমূত্রের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ঘরের ভেতরে ও আশপাশের এলাকায়। ইজারাদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় নীরবেই সহ্য করতে হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের। রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মৈত্রী সংঘের মাঠের হাটটি এ বছর ইজারা পেয়েছেন আবদুল লতিফ খান। হাটের মূল কেন্দ্র মৈত্রী সংঘের মাঠ হলেও আশপাশের প্রতিটি অলিগলিতে হাট বসানো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই হাট বসানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি হাটে অসংখ্য গরুও ওঠানো হয়েছে। তা বেঁধে রাখা হয়েছে মাঠের পাশের খালি জায়গাগুলোতে। যদিও মূল মাঠে এখনো পশু ওঠানো হয়নি, কিন্তু পাইকাররা নিজ নিজ নামে জায়গা দখল করে রেখেছেন। কিছু কিছু হাটে গরু কেনা-বেচাও শুরু হয়েছে। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গরু দেখছেন। করছেন দরদামও। ঈদের ৯ দিন আগে গত সোমবার ঝিনাইদহের হরিণাকুÐু থেকে বিক্রির জন্য ৮টি দেশি গরু এনেছেন আব্দুল কুদ্দুস। সবগুলো গরুই তার নিজস্ব খামারের। এর মধ্যে গতকাল বুধবার ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রিও করেছেন একটি গরু। বাকিগুলোরও দরদাম করছেন ত্রেতারা। যেভাবে ক্রেতা বাজারে আসছেন, তার ধারণা খুব তাড়াতাড়িই সবগুলো গরু বিক্রি করতে পারবেন। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে আরো গরু নিয়ে আসবেন এমনটিই জানালেন। এই বিক্রেতা গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, সোমবার রাতে বিক্রির জন্য ৮টি গরু এনেছি। সবগুলোই দেশি গরু। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ক্রেতারা আসছেন, ঘুরে ঘুরে দরদাম করছেন। এর মধ্যে আজ (গতকাল) দুপুরে একটি গরু ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আশা করছি হাট জমজমাট হওয়ার আগেই সবগুলো গুরু বিক্রি করতে পারব। ঝিনাইদহ থেকে শাহজাহানপুরের এই হাটটিতে ওই রাতেই ট্রাকে করে বড় ও মাঝারি আকারের ১২টি গরু এনেছেন মো. জইবুদ্দিন। গরুগুলো তার নিজস্ব খামারের। এ ছাড়া একই এলাকা থেকে ৫টি গরু এনেছেন মো. আকুল, ৭টি গরু এনেছেন জামাল। আজকে (গতকাল) রাতে তাদের এলাকার আরো কয়েকজন পাইকার গরু নিয়ে আসার কথা, এমনটিই জানালেন। রাজবাড়ী থেকে বুধবার রাতে ১০টি মাঝারি ও ছোট গরু বিক্রির জন্য এ হাটে নিয়ে এসেছেন বাবুল মিয়া। তিনি বলেন, বুধবার রাতে গরু নিয়ে এসেছি। হাটের লোকজন আপাতত রাস্তায় বেঁধে রাখতে বলেছেন। দুই/একদিন পর মাঠের ভেতরে প্রবেশ করাতে পারব। আপাতত মাঠে জায়গা নিয়ে রেখেছি। অন্যান্য বিক্রেতার মতো তার গরুগুলোও দরদাম করেছেন অনেকেই। মেরাদিয়া হাটেরও একই অবস্থা। সেখানেও ৪ দিন আগে থেকেই গরু আনা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ট্রাকে করে গরু এনে বেঁধে রেখেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান, সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই মেরাদিয়া হাটে গরু আসতে শুরু করেছে। গতকাল পর্যন্ত কয়েকশ গরু হাটের আশপাশে বেঁধে রাখতে দেখা গেছে। হাটের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১৫ দিন আগে থেকেই হাটের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছেন ইজারাদার। এদিকে কমলাপুরে ব্রাদার্স ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গাসহ বিশাল এলাকাজুড়ে হাটের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। হাটের জন্য বাঁশের খুঁটি থেকে শুরু করে বড় বড় তোরণ, হাসিল কাউন্টার, লাইট স্থাপন, বিক্রেতাদের জন্য গোসলের ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে। এমনকি গতকাল বিকেলে শতাধিক গরুও দেখা গেছে বিভিন্ন গলিতে। অথচ এ হাটটি এখনো ইজারাই দেয়নি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, হাটের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানোর আগে থেকেই ব্রাদার্স ক্লাব কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সরকারদলীয় নেতারা মিলে হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। আর এর পেছনে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা। অথচ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়েছে, ১৩টির মধ্যে ৬টি হাটের ইজারা চ‚ড়ান্ত না হওয়ায় সিদ্ধান্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে হাটগুলোর খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ খাস আদায় করবে। কামরাঙ্গীরচরের ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনের রাস্তা ও আশপাশের খালি জায়গায়ও এবারো হাট বসানো হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সেখানেও কয়েকশ গরু বিক্রির জন্য উঠানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন ভোরের কাগজকে জানান, কামরাঙ্গীরচরের এই হাটটি জমজমাট হতে শুরু করেছে। বেশকিছু গরু এনেছেন পাইকাররা। আজকালকের মধ্যেই হয়তো বিক্রিও শুরু হয়ে যাবে। এ ছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সিটি করপোরেশনে ইজারা দেয়া অন্য হাটগুলোতেও নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি, গরু ওঠানো ও বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। জানতে চাইলে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিসংলগ্ন মৈত্রীসংঘের মাঠ হাটের ইজারাদার আবদুল লতিফ খান ভোরের কাগজকে বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়েছে, হাট বসানোর ৩ দিন আগে প্রস্তুতি নিতে। আমরা সেটাই করেছি। এখনো খুব একটা কুরবানির পশু আসা শুরু হয়নি। নিয়ম না থাকায় হাটে গরুও উঠতে দেইনি। হাট শুরুর আগেই গরু বিক্রি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো গরু কেনা-বেচা শুরু হয়নি। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় ভোরের কাগজকে বলেন, ৬টি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে না পারায় সিদ্ধান্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসাপেক্ষে এই ৬টি হাটের খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসসিসি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App