গরু আসছে অবৈধ পথে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১১:০৮ এএম
দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদের প্রধান আনুষ্ঠানিকতা হলো পশু কোরবানি। দেশে মূলত কোরবানি করা হয় গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট। এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর কোনো সংকটের আশঙ্কা নেই বলে দাবি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। তারপরও বৈধ-অবৈধ দুভাবেই সীমান্ত পথে মিয়ানমার, ভুটান ও ভারত থেকে গরু আসছে। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় গরু আসার সংখ্যা এবার কম। গত বছর ঈদের আগ মুহূর্তে সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু আসার কারণে বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল, এ জন্য পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কোরবানি উপলক্ষে দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে এক কোটি ১৬ লাখ গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এ বছর দেশে কোরবানির চাহিদা এক কোটি চার লাখ পশু। ফলে দেশীয় পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণের পরও ১২ লাখ গবাদি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। কোরবানির পশুর জোগান দিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক খামার গড়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর থেকে এসব দেশীয় খামার কোরবানির পশুর চাহিদার প্রায় শতভাগই পূরণ করছে। তারপরও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে বৈধ অবৈধ পথে কিছু গবাদিপশু আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে দেশীয় খামারিদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
দেশের মাংস ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশে সারা বছরে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ গরু জবাই হয়। শুধু কোরবানি ঈদে জবাই হয় ৫০-৫৫ লাখ গরু। এর সিংহভাগই (৭০-৮০ শতাংশ) আসে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে। বাকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। মাংস ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ১৪ লাখ গরু এসেছিল ভারত থেকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখে। চলতি বছরে আরো কম গরু আসবে বলে দাবি করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ঘরে ঘরে পশু পালনের জন্য সরকার ঋণ দেয়ার ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। ফলে দেশে পশু উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এবার দেশীয় পশুতেই কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে বৈধ পথে বিদেশ থেকে পশু আমদানি করলেও কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ রাজস্ব দিয়ে একটা পশু আমদানি করতে যে খরচ পড়বে তা দেশীয় পশু উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম হবে না। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হবে। এতে বরং দেশীয় চাষীরা লাভবানই হবে। এবার ভারত বা মায়ানমার থেকে গরু আসছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
ভোরের কাগজের জেলা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশি পরিমাণে না হলেও এবার রাজশাহী, কুমিল্লা, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে গবাদিপশু আসছে। ভারতীয় সীমান্তের ৩৬টি পথ দিয়ে গরু আনার ব্যাপারে আগের কঠোর অবস্থান শিথিল করেছে বিএসএফ। জুলাই মাসে সীমান্ত পথে প্রায় এক লাখ গরু ঢুকেছে। ভারতীয় সীমান্তের ১৭টি করিডোর এলাকায় সেখানকার ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় গরু এনে জড়ো করেছেন। এ সব গরু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কোরবানির হাটে নেয়া হবে।
তারা আরো জানান, সীমান্তের দুই দিকেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আসছে পশু। ভারত ও মিয়ানমার ছাড়াও নেপাল এবং ভুটান থেকেও প্রতিদিন কিছু গরু আসছে। নেপাল এবং ভুটানের গরু আসছে ভারত ঘুরে। মিয়ানমারের গরু আসছে টেকনাফ এবং বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে। যশোরের পশ্চিম প্রান্তজুড়ে ভারত সীমান্ত। এ সীমান্তের বেশিরভাগ রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। তবে যেসব স্থানে বেড়া নেই, সেসব পথে অনায়াসে গরু চলে আসছে বাংলাদেশে। এ ছাড়া যেখানে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে, সেখানে নেয়া হচ্ছে ভিন্ন কৌশল। গরু-ছাগল মাঠে চরানোর সময় সুযোগ বুঝে গেট দিয়ে পার করে দেয়া হয়। এ জন্য বিজিবি ও বিএসএফকে দিতে হয় অর্থ। কোরবানির দিন যত ঘনিয়ে আসবে, এই প্রবণতা ততই বাড়বে।
সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে গরু না আসতে পারলেও ভারতের বশির হাট থেকে ইছামতি নদী পার হয়ে চোরাই পথে অনেক গরু আসছে বলে জানা গেছে। দোভাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে অনেক গরু আসছে। এসব গরু করিডোর দিয়ে সিল না মেরেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে খুলনাসহ বড় বড় শহরে। এসব গরু করিডোর দিয়ে না নেয়াতে রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে সরকার।