×

মুক্তচিন্তা

সড়ক দুর্ঘটনা পরিস্থিতির উন্নতি নেই

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১০:২৭ পিএম

ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহনের নতুন আইন সংসদে পাস হয়েছে। এই আইন সড়ক দুর্ঘটনারোধে যুগোপযোগী বলে আশা করা হচ্ছে। আমরা সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর দেখতে চাইনা। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নতুন আইন দ্রুত বাস্তবায়নে যেতে হবে পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।

এমন কোনো দিন নেই যে, সংবাদমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর থাকে না। সড়কে মর্মান্তিক প্রাণহানি আমাদের আর কত দেখতে হবে। গত বুধবার ৩ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রীসহ নিহত হয়েছেন ৭ জন। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাজশাহীতে বাস এবং চুয়াডাঙ্গায় ট্রাক দোকানে ঢুকে পড়ে ৪ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বাস-সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে ৩ জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। সড়কে এরকম প্রাণহানি কাম্য নয়।

অতিসম্প্রতি রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম ও দিয়া খানম মিম নিহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলন রাজধানী থেকে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সড়কে প্রাণহানি কমে আসবে, চালকরা সতর্ক হবে এমনই প্রত্যশা ছিল। কিন্তু তা নয়। বরং বাড়ছে। আধুনিকতার এই যুগে সড়কে গাড়ি নামক দানবের হিংস্রতার চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। বস্তুত গত কয়েক দশকে সড়ক নেটওয়ার্ক দেশের মহানগরী থেকে আনাচে-কানাচে বিস্তৃত হয়েছে; দিনের পর দিন বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা এবং নাগরিকদের চলাচল; কিন্তু সেই অনুপাতে সড়কপথের নিরাপত্তা যে বাড়ানো সম্ভব হয়নি, তার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রাণের বিনিময়ে। সড়ক নিরাপত্তাহীনতার এই সার্বিক চিত্রের কারণ সাধারণভাবে যানবাহনের বেপরোয়া গতি, লেন না মানা, অপ্রশিক্ষিত চালক, ত্রুটিযুক্ত যানবাহন দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘সড়ক নিরাপত্তা দশক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ সময়ের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনার বিষয়ে সদস্য দেশগুলো একমতও হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু দেশে সড়ক নিরাপত্তায় দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। সড়ক নিরাপত্তায় যুক্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের ইতোপূর্বে নেয়া পরিকল্পনাগুলো ছিল গতানুগতিক। এর মাধ্যমে কী অর্জিত হয়েছে আর কী অর্জিত হয়নি বা কী অর্জন করা প্রয়োজন তার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। সড়ক দুর্ঘটনারোধে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদকে। এর অগ্রগতি কি তা আমরা জানি না। ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহনের নতুন আইন সংসদে পাস হয়েছে। এই আইন সড়ক দুর্ঘটনারোধে যুগোপযোগী বলে আশা করা হচ্ছে। আমরা সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর দেখতে চাইনা। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নতুন আইন দ্রুত বাস্তবায়নে যেতে হবে পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App