×

পুরনো খবর

আসন ধরে রাখতে চায় আ.লীগ বিএনপির আশা পুনরুদ্ধার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০১৮, ০৪:৩৬ পিএম

আসন ধরে রাখতে চায় আ.লীগ বিএনপির আশা পুনরুদ্ধার
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগদলীয় হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী। বিএনপি এ আসটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের কাদেরিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ায় এ আসনের নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী থাকায় দলীয় কোন্দলও সৃষ্টি হয়েছে বড় দুই দলে। ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তিনবার, বিএনপি প্রার্থী তিনবার, জাতীয় পার্টির একবার, জাসদ (সিরাজ) একবার এবং স্বতন্ত্র একবার জয়লাভ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুুল লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, এরপর ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। শাজাহান সিরাজ জাসদের প্রার্থী হয়ে ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে বিএনপিতে যোগদান করে ২০০১ সালে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হন। ২০০৮ সালে শাহজাহান সিরাজ কারাগারে থাকায় এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি লুৎফর রহমান মতিনকে। তিনি আওয়ামী লীগের আব্দুুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে পরাজিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পুনরায় আব্দুুল লতিফ সিদ্দিকী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পবিত্র হজ নিয়ে বিতর্কিত কথা বলায় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব হারান ও পরবর্তী সময়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে শাজাহান সিরাজ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নতুন নতুন মুখ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আব্দুুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ থেকে পদত্যাগের পর ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী। উপনির্বাচনের পর থেকেই প্রার্থিতা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এদিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে ব্যাপক গণসংযোগে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু, এফবিসিসিআইর পরিচালক আবু নাসের এবং জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী। মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করি মানুষের সেবা করার জন্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছিলাম। বিএনপি-জামায়াত শাসন আমলে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি। দল ও নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে ছিলাম, আছি এবং থাকব। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি কালিহাতীর আসন শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু নাসের বলেন, এ আসনে যে কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন তাদের মধ্যে তিনি স্বচ্ছ ইমেজ ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তির অধিকারী এবং যোগ্য। কালিহাতীর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও সামাজিক কর্মকাণ্ড কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি শতভাগ আশাবাদী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি গণসংযোগ করে এবং বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন। বিশেষ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ ও নদী ভাঙনের মানুষের মাঝে গৃহনির্মাণের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী বলেন, সৎ-স্বচ্ছ-যোগ্য ইমেজ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে সহজেই এ আসন জয়লাভ করা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে একজোট হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে আমি তা মেনে নেব। এদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী প্রতি সপ্তাহের অন্তত ৪-৫ দিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন। সময়-অসময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়ে কুশল বিনিময় করেন। মাথায় টুকরি নিয়ে নিজেই উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন, এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। যমুনা নদীভাঙনে গাইড বাঁধ নির্মাণের জন্য দরপত্র জন্য আহবান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জোকারচর ৫৫ কোটি টাকা ব্যয় ব্রিজ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাট উন্নয়নে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কালিহাতীর আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী। আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করবে দল। গ্রুপিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহতম রাজনৈতিক দল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনেকেই মনোনয়নের চেষ্টা করবেন। তিনি আরো বলেন, কালিহাতীর মানুষ আগে সংসদ সদস্যের পেছনে ঘুরতেন। এখন সংসদ সদস্য মানুষের পেছনে ঘোরেন। একাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে অনেক প্রার্থী রয়েছেন। মনোননয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা উপনির্বাচনে আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আগামী নির্বাচনেও আস্থা রাখবেন। এদিকে সরকারি দলের কোন্দলের সুযোগ নিতে চায় বিএনপি। ২০০৮ সালে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিন পরাজিত হলেও ভোট পান ৮৬ হাজার ৯১২টি। সরকার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে মামলা হামলার শিকার হয়ে জেলহাজতেও যেতে হয় লুৎফর রহমান মতিনকে। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী। সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে তৎপর মতিন। লুৎফর রহমান মতিনের পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজের স্ত্রী কেন্দ্রীয় বিএনপির তাঁতীবিষয়ক সহসম্পাদক রাবেয়া সিরাজ, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি এবং উপজেলা বিএপির উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আ. হালিম মিঞা, এলেঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি শাফী খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো। লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব ও দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তার ছোট ভাই এ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কৃষক শ্রমিক-জনতা-লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম এ আসনে ২০১৭ সালের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। সে সময় রিটার্নিং অফিসার তার প্রার্থিতা বাতিল করলে হাইকোর্টের রায়ে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেলেও সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তা বাতিল হয়ে যায়। তবে তখন থেকেই তিনি এ আসনে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে তিনি একটি ফ্যাক্টর। অপরদিকে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন এ আসনে জেলা জাতীয় পার্টির অর্থবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আহম্মেদ রতন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App