×

মুক্তচিন্তা

অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধ করুন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০১৮, ০৭:৪৯ পিএম

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কুরবানি পশুর হাটগুলো থেকে প্রাপ্য রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করতে হলে দরপত্র প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতামূলক করার কোনো বিকল্প নেই। বন্ধ করতে হবে সিন্ডিকেটবাজি, অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট। এর জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা রক্ষা, করপোরেশনের দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

রাজধানীতে কুরবানির পশুর হাটের ইজারা নিয়ে সিন্ডিকেটবাজি-টেন্ডারবাজি, অনিয়মের অভিযোগ বরাবরের। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। পুরনো ইজারাদারদের সিন্ডিকেটে এবারো জিম্মি রাজধানীর কুরবানির পশুর হাটগুলো। দফায় দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও হাটগুলোতে কাক্সিক্ষত দর পায়নি দুই সিটি করপোরেশন। সাতটি হাট বিনা ইজারায় নেয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠছে। এতে প্রায় এ বছর কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

গতকালের ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এবার রাজধানীতে মোট ২২টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই সিটি। এর মধ্যে দক্ষিণে ১৩টি, উত্তরে ৯টি। কিন্তু গত শনিবার পর্যন্ত ১৫টি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে দুই সিটি করপোরেশন। কোনো দরপত্র না পাওয়ায় ৭টির ইজারা হয়নি। ডিএসসিসির ৬টি ও ডিএনসিসির ১টি হাটের টেন্ডারে কেউ অংশ নেননি। এমনকি এই হাটগুলোর জন্য দরপত্র ক্রয় করেও জমা দেননি। অভিযোগ আছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র এই ৭টি হাট বিনা ইজারায় পাওয়ার জন্য তৎপর। দরপত্রে কেউ অংশ না নেয়ার মূল কারণ হচ্ছে সিটি করপোরেশন এই হাটগুলোতে যেন খাস আদায়ে যেতে বাধ্য হয়। এতে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট চক্র ইজারামূল্য ছাড়াই হাটগুলো সিটি করপোরেশনকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে হাট থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করে নেবেন। আরো জানা যায়, উভয় সিটি করপোরেশনেই যারা ইজারা পেয়েছেন তারা সরকারি দল বা তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পরিচয়ধারী। সবসময়ই দেখা যায়, বেনামে এসব হাটের ইজারা পায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। বস্তুত এসব প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বাইরের কারো দরপত্র সাধারণত জমা পড়ে না। এ সিন্ডিকেটবাজির কাছে জিম্মি হয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। হাটের কাক্সিক্ষত দর পাওয়া যায় না। অথচ ইজারা দামের চেয়ে কয়েকগুণ হাসিল আদায় হয়। দেখা যায়, হাটগুলো থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ইজারা মূল্যের প্রায় চারগুণ। মূলত টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নানারকম অনিয়ম ও যোগসাজশের মাধ্যমে প্রতি বছর অস্থায়ী পশুর হাটগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এবারো সেরকম হওয়ারই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যে। এখানে স্মরণ করা দরকার যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরকারের রাজস্ব আয় নিশ্চিত করা না গেলে প্রকল্প ব্যয় কাটছাঁট করতে হয়, ব্যাহত হয় উন্নয়নের গতি। আমরা মনে করি, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কুরবানি পশুর হাটগুলো থেকে প্রাপ্য রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করতে হলে দরপত্র প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতামূলক করার কোনো বিকল্প নেই। বন্ধ করতে হবে সিন্ডিকেটবাজি, অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট। এর জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা রক্ষা, করপোরেশনের দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এর পাশাপাশি দরকার মানসিকতার পরিবর্তন, বিশেষ করে রাজনৈতিক মহলের। রাজধানীর পশুর হাট রাজস্ব আয়ের অন্যতম একটি খাত। যদি এ খাতটিকে নিয়মের মধ্যে আনা যায়, তাহলে সরকারের আয় বাড়বে। অন্যদিকে অতিরিক্ত হাসিল আদায় নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হাট ব্যবহারকারীদেরও ব্যয় সাশ্রয় হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App