×

পুরনো খবর

চাপের মুখে বদলে গেছে চেনা দৃশ্যপট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০১৮, ১১:৩৮ এএম

চাপের মুখে বদলে গেছে চেনা দৃশ্যপট
বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে চাপের মুখে মিরপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ের দৃশ্যপট বদলে গেছে। নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন, লাইসেন্স নবায়নের আবেদন, লাইসেন্স হারানোর পর ডুপ্লিকেট লাইসেন্সের জন্য আবেদন ও উত্তোলন, ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়া, মোটরযানের ফিটনেস পরীক্ষা সম্পন্ন করা, মালিকানা পরিবর্তন করা এবং ডিজিটাল নম্বরপ্লেট পাওয়াসহ বিভিন্ন কাজে আসা লোকজনকে শৃঙ্খলার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে এই দপ্তরে, যা দুসপ্তাহ আগেও ছিল কল্পনাতীত। সেবা নিতে আসা লোকজন নিজের কাজ নিজে করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির কারণে নেই দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। কর্মকর্তাদের কক্ষের সামনেও দালাল ও তদবির পার্টির জটলা দেখা যায়নি। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিআরটিএ কার্যালয়ে অবস্থান করে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে। তবে এই শৃঙ্খলা কতদিন থাকবে তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ের সামনের সড়কে ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। বেশিরভাগই প্রাইভেটকার ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর যানবাহনও বাদ ছিল না। এ ছাড়া ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশাও অনেক। কিন্তু আনসার সদস্যদের তৎপরতার কারণে কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। সিরিয়াল অনুযায়ী প্রতিটি যানবাহন ভেতরে ঢুকে ফিটনেস পরীক্ষা করছে। পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বেড়িয়ে যাচ্ছে। নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আসা লোকজন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম সেরে নিচ্ছেন। ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার সময়ও সবাইকে শৃঙ্খলার সঙ্গে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। লোকজনের দীর্ঘ লাইন ও ভিড়ের কারণে একইদিনে সব প্রক্রিয়া অনেকেই সম্পন্ন করতে পারছে না বলেও অভিযোগ মিলেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং ট্রাফিক সপ্তাহের কারণে এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটসেনের জন্য বিআরটিএতে ভিড় বেড়েছে। তবে গত কয়েকদিনের চেয়ে বুধবার ভিড় একটু কমই ছিল বলে বিআরটিএ এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভিড় বাড়লেও শৃঙ্খলা ফিরেছে। বেশি ভোগান্তি দেখা গেছে ব্যাংকে বিভিন্ন ফি এর টাকা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে। টাকা জমা দেয়ার জন্য এনআরবি ও ব্র্যাক ব্যাংকের কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছতেই লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ৩/৪ ঘণ্টায়ও ট্যাক্সের টাকা জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন শফিকুল ইসলাম নামের এক গাড়ি মালিক। এই লাইনে ছাত্র, চাকরিজীবী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, পুলিশ, বিজিবি, সেনা সদস্যসহ প্রায় ১ হাজার ব্যক্তিকে টাকা জমা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ব্যাংকের টাকা জমা না দিলে অন্য কোনো কাজই সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। পাঁচ টনের ট্রাক নিয়ে সকাল ১০টার দিকে ফিটনেস পরীক্ষার পর বিআরটিএ এর ভেতর থেকে বাইরে বের হন ট্রাকচালক মোসলেম উদ্দিন। কতক্ষণ লাগল এবং কি ঝামেলায় পড়তে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে এসে রাস্তার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। সাড়ে ৯টার দিকে গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে আবার লাইনে পড়েন। আধা ঘণ্টা পর তিনি ফিটনেস পরীক্ষার সুযোগ পান। আগে দালালদের মাধ্যমে ফিটনেস পরীক্ষা করাতেন। গাড়ি না আনলেও চলত। কিন্তু এবার আর তা সম্ভব হয়নি। হেলপারকে দিয়েই কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। দালাল এবার দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি। আনসারদের কঠোরতার কারণে সিরিয়ালও ব্রেক করা সম্ভব হয়নি। কেউ টাকাও চায়নি। ফিটনেসের জন্য একটি রপ্তানিমুখী গার্মেন্টের কাভার্ড ভ্যান নিয়ে বিআরটিএ অফিসে আসা চালক সাইফুল জানালেন, এবার আর সিরিয়াল ব্রেক করার সুযোগ নেই। আনসার সদস্যরাও ভালো হয়ে গেছে। আগে টাকা দিলে সিরিয়াল ব্রেক করে গাড়ি সামনে নিয়ে যেতে পেরেছেন। এবার তা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার কারণে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু কাজের শৃঙ্খলা ফিরেছে। একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ইসমাইল সামদানী মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্সের নবায়নের আবেদন জমা দিতে এসেছিলেন। তিনি জানান, আগে লোকজনকে দালালদের খপ্পরে পড়তে দেখেছি। যদিও দালালদের টাকা দিলে তাড়াতাড়ি কাজ হতো। এবার দালালের সাহায্য নেইনি। নিজেই সব করেছি। সিএনজি অটোরিকশা চালক আহসানউল্লাহ জানান, গেটের বাইরে এক দালাল ৩ ঘণ্টার মধ্যে ফিটনেস পরীক্ষা শেষ করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। অপর এক ড্রাইভার নিজ হাতে করতে বলল। ভোররাতে এসে লাইন দিয়েছিলাম। অনেক পেছনে ছিলাম। দুপুর ১২টার দিকে কাজ হয়েছে। ডিজিটাল নম্বরপ্লেট পাওয়া রাশেদুল ইসলাম জানান, কোনো ঝুঁকি নেই। আজ তারিখ ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই হাতে পেয়েছি। যারা নম্বরপ্লেট লাগিয়ে দিচ্ছে তারাও টাকা চাইছে না। শৃঙ্খলা ফিরেছে, তবে কতদিন থাকে তা দেখার বিষয়। বিআরটিএ এর উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মাসুদ আলম বলেন, আন্দোলনের কারণে অফিস খোলার পর প্রচন্ড ভিড় ছিল। গত দুদিনে ভিড় কমেছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছে। সবাই সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে। জনবলের স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জনবল বাড়ানো হলে আরো বেশি মানুষকে সেবা দেয়া সম্ভব হতো। তিনি আরো বলেন, এখন আর বিআরটিএতে দালাল নেই। গত দুদিনে ১০ জন দালালকে ধরা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দালালদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। গেটের বাইরে দালালরা রয়েছে। দুর্নীতির ব্যাপারে সব কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারাও সব কিছু মনিটরিং করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App