×

জাতীয়

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ-ডাংধরা সড়কের বেহাল দশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০১৮, ০২:৫০ পিএম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ-ডাংধরা সড়কের বেহাল দশা
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ দেওয়ানগঞ্জ-তারাটিয়া বাজার-ডাংধরা সড়কটি তিন বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে কারপেটিং উঠে ছোট-বড় দুই শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও বকশীগঞ্জ উপজেলার আংশিক এবং পাশের কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলাসহ প্রায় ৫ লাখ মানুষের কান্নায় পরিণত হয়েছে সড়কটি। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে চরম অচলাবস্থাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নয়ন কাজে পিছিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। প্রশস্তকরণসহ সড়কটি নতুন করে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, তারাটিয়া বাজার থেকে দেওয়ানগঞ্জ সদর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার সড়কে সবচেয়ে বেশি ভাঙা ও গর্ত রয়েছে। উপজেলার সীমান্তবর্তী ডাংধরা ইউনিয়নের কদমতলী বাজার থেকে তারাটিয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কেরও বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে ওই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের এটিই একমাত্র সড়ক। এর কোনো বাইপাস সড়কও নেই। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন সানন্দবাড়ী বাজার, তারাটিয়া বাজার, ঝালরচর বাজার ও বাহাদুরাবাদ বাজার বেশ প্রসিদ্ধ। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জামালপুর সদর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান সরাসরি ব্যবসায়ীদের আড়তে বা দোকানে পৌঁছে দিতে পারছে না। পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো জামালপুর শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ঝগড়ার চর-ইসলামপুরের ব্রহ্মপুত্র সেতু হয়ে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করতে পারে। উত্তরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নে যেতে জামালপুর-শেরপুর-বকশীগঞ্জ হয়ে চলাচল করতে হয়। ফলে পরিবহন খরচ ও সময় দুটোই লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। অন্যদিকে পাশের জেলা কুড়িগ্রামের চিলমারী, রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলার লোকজন এই সড়কে দেওয়ানগঞ্জে গিয়ে ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করতেন। কিন্তু তারা এখন ঝুঁকি এড়াতে সরাসরি বকশীগঞ্জ-শেরপুর সড়কে যাতায়াত করে থাকেন। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় উপজেলার উত্তরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের ধান, পাট, ভুট্টা থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য নিয়ে বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা। বকশীগঞ্জ ঘুরে ঢাকায় পণ্য পরিবহনে প্রতি কেজি পণ্যে অস্বাভাবিক বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে কিছু ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করলেও প্রায়ই গর্তের মধ্যে তা আটকে পড়ে। ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে তুলতে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। একদিকে নড়বড়ে, অন্যদিকে সেতুর মাঝখানে ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটি যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় কৃষক সাদার আলী (৫৫) বলেন, এই সেতুতে একটি রিকশা উঠলেও গর্তে আটকা পড়ে। রাস্তা ভাঙা থাকলেও কিছু গাড়ি চলত। কিন্তু সেতুর কারণেই গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেতুর কাছাকাছি সাপমারী এলাকায় বেশ বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের নিচে যেন একটা বিশাল চোরাগুপ্তা সুড়ং। স্থানীয় কৃষক সাহেবুর রহমান (৬২) বলেন, এখানে রাস্তার নিচ দিয়া মেলা বড় গাতা অইছে। কহন যে কি অয়। ভয়ে আমরাই মাইনষেরে এই রাস্তায় গাড়ি চালাবের না করি। পাররাম রামপুর ইউনিয়নের ডিগ্রির চরের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলিম বলেন, দেওয়ানগঞ্জ যেতে রাস্তা অনেক জায়গায় ভাঙা। অনেক সময় গাড়ি উল্টে মানুষ আহত হয়, কয়েকজন মারাও গেছে। রোগী নিয়ে দেওয়ানগঞ্জ হাসপাতালের দিকে রওনা হলে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়। গর্ভবতী বা অন্য জটিল রোগীদের দেওয়ানগঞ্জ হাসাপাতালে না নিয়ে বেশির ভাগ রোগীকে পাশের বকশীগঞ্জ বা শেরপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ অঞ্চলের রোগীদের নিয়ে জামালপুরে যেতে পারে না। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যেতে খুবই সমস্যা হয়। সামান্য সাইকেলে রওনা দিলেও অনেকবার নামতে হয়। সড়কটির কারণে এ অঞ্চলের সবাই চরম দুর্ভোগে আছি। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাররাম রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী জুয়েল বলেন, সড়কটির বেহাল দশায় পাররাম রামপুর, ডাংধরা এবং চর আমখাওয়া ইউনিয়নের লোকজন নিতান্তই দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনে এবং উপজেলা পরিষদে দাপ্তরিক কাজ ছাড়া যায় না। চিকিৎসা ও কেনাকাটাসহ প্রয়োজনীয় কাজ পাশের বকশীগঞ্জ উপজেলায় গিয়ে করছি। বিকল্প পথে বাড়তি খরচের কারণে কৃষিপ্রধান এ এলাকার কৃষকরা কৃষিপণ্যও বিক্রি করতে পারছেন না। সরকারি উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। আদৌ সড়কটি নির্মাণ হবে কিনা তা নিয়েও আমরা সন্দিহান। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বেহাল সড়ক প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সড়কটি প্রশস্তকরণসহ নতুন করে নির্মাণের জন্য এলজিইডিকে প্রকল্প তৈরি করতে বলেছি। জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, দেওয়ানগঞ্জ-ডাংধরা রাস্তাটিকে পুনর্বাসন প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে রাস্তাটির দেওয়ানগঞ্জ থেকে তারাটিয়া বাজার পর্যন্ত মোট ২১ কিলোমিটার প্রশস্তকরণসহ নির্মাণ করা হবে। এ জন্য দুটি আলাদা প্রাক্কলন তৈরি করছি। শিগগির তা এলজিইডির সদর দপ্তরে পাঠানো হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App