×

মুক্তচিন্তা

দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন কতদূর?

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০১৮, ০৮:০১ পিএম

ব্যক্তি যতক্ষণ সচেতন না হবে, ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ যতদিন না বড় হবে, ততদিন অনেক কিছুই ভালো হবে না। হতে পারে না। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কীভাবে সড়কে শৃঙ্খলা রাখা যায় চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। এরপরও কি আমরা সচেতন হব? সড়ক সুরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদকে। একমাস অতিবাহিত হয়ে গেল অগ্রগতি কি তা আমরা জানি না।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই রাজধানীসহ আট জেলায় সড়কে প্রাণ গেল আরো ১২ জনের। এমন কোনো দিন নেই যে, সংবাদমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর থাকে না। সড়কে এরকম প্রাণহানি মর্মান্তিক। শুক্রবার রাতে ঢাকার ধামরাইয়ে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন, একইদিন দুপুরে ঢাকার মগবাজারে বাসের চাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের ধাক্কায় দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ সময় ওই পিকআপের ১২ বছর বয়সী চালক মেয়েটিকে ইভটিজিং করছিল। তাকে উত্ত্যক্ত করতে গিয়েই সে তার গায়ে গাড়ি তুলে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী সিএনজি অটোরিকশা চাপায় নিহত হয়। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, নাটোর ও নারায়ণগঞ্জে অন্যরা নিহত হয়েছেন। গত রবিবার রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম ও দিয়া খানম মিম নিহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলন রাজধানী থেকে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে সড়কে প্রাণহানি কমে আসবে, চালকরা সতর্ক হবে এমনই প্রত্যশা ছিল। কিন্তু তা নয়। বরং বাড়ছে। আধুনিকতার এই যুগে সড়কে গাড়ি নামক দানবের হিংস্রতার চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এটিই আমাদের দেশে বাস্তবতা। বস্তুত গত কয়েক দশকে সড়ক নেটওয়ার্ক দেশের মহানগরী থেকে আনাচে-কানাচে বিস্তৃত হয়েছে; দিনের পর দিন বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা এবং নাগরিকদের চলাচল; কিন্তু সেই অনুপাতে সড়কপথের নিরাপত্তা যে বাড়ানো সম্ভব হয়নি, তার খেসারত দিতে হচ্ছে মূল্যবান জানমালের বিনিময়ে। সড়ক নিরাপত্তাহীনতার এই সার্বিক চিত্রের কারণ সাধারণভাবে যানবাহনের বেপরোয়া গতি, লেন না মানা, অপ্রশিক্ষিত চালক, ত্রুটিযুক্ত যানবাহন দায়ী। দুর্ঘটনা রোধে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। আমরা কি তা সত্যিই মানি? অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গাড়িতে তো আমরাই উঠি। উল্টোপথে গাড়ি আমরাই চালাই। নষ্ট বাস চলাচলের অযোগ্য। সেটার মালিক তো আমাদের মধ্যেই কেউ না কেউ। এমন বাস চলাচলে বাধা দেয়া হয় না কেন? ব্যক্তি যতক্ষণ সচেতন না হবে, ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ যতদিন না বড় হবে, ততদিন অনেক কিছুই ভালো হবে না। হতে পারে না। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কীভাবে সড়কে শৃঙ্খলা রাখা যায় চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। এরপরও কি আমরা সচেতন হব? সড়ক সুরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদকে। একমাস অতিবাহিত হয়ে গেল অগ্রগতি কি তা আমরা জানি না। আগামী সোমবার সড়ক পরিবহনের নতুন আইন সংসদে উপস্থাপিত হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এই আইন সড়ক দুর্ঘটনারোধে নিশ্চয়ই যুগোপযোগী হবে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর যেন দীর্ঘ না হয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নতুন আইন দ্রুত পাশ করার পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App