×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষার্থীদের দাবি গুরুত্ব দিয়ে অচলাবস্থার অবসান করুন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০১৮, ০৭:৩২ পিএম

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং সড়ক নিরাপদ করতে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় দায়িত্বশীল হতে হবে। কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা আমরা আর দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্ব দিয়ে এই অচলাবস্থার অবসান করুন।
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় উত্তাল রাজধানী। বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। জাবালে নূর পরিবহনের ঘাতক বাসচালকের ফাঁসি দাবি এবং নৌপরিবহনমন্ত্রীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে তারা। গতকাল বুধবার টানা চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও বাসে অগ্নিসংযোগের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এতে নগরজুড়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আতঙ্কের কারণে রাস্তায় গণপরিবহন কম চলাচল করায় নগরবাসীর ভোগান্তি চরমে উঠছে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের দাবি গুরুত্ব দিয়ে এমন অচলাবস্থার অবসান জরুরি। অন্যথায় এটা জিইয়ে রাখলে সুযোগসন্ধানীরা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে- এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজধানীর গণপরিবহনে নজিরবিহীন নৈরাজ্য চলছে। শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। ভাড়া আদায়ে স্বেচ্ছাচারিতা, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ফিটনেসবিহীন গাড়ির ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল, চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনাসহ নানা কারণে গণপরিবহন এখন যাত্রীদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থের সিন্ডিকেটের কারণে পদে পদে লাঞ্ছনা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। গত রবিবার জাবালে নূর পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস বিমানবন্দর সড়কের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের গোড়ায় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। আহত হয় আরো ১০/১২ জন। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা টানা চার দিন ধরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। শিক্ষার্থীরা দাবি জানায়, নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে সংসদীয় কমিটি, মালিক-শ্রমিক ফেডারেশন ও মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পেশাদার লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা, সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, বিগত দিনের সব দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় ওভারব্রিজ, সব প্রকার দলীয় আচরণ ত্যাগ করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করার দাবি তুলছে। শিক্ষার্থীদের এই দাবিগুলো যৌক্তিক। সরকারও এই দাবিগুলোর সঙ্গে মতপোষণ করেছে। ইতোমধ্যে দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং রাজধানীর অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। একইসঙ্গে দ্রæত সময়ের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে কমপক্ষে ১৫ সদস্যের একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই কমিটির মাধ্যমে ফিটনেসহীন পরিবহনের ওপর জরিপ চালিয়ে তিন মাসের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং সড়ক নিরাপদ করতে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। রাজধানীতে দেড় লাখ বাসের কোনো ফিটনেস নেই। বাইরে থেকে রঙ দিয়ে এসব গাড়ির চাকচিক্য বাড়ানো হয়। অথচ এগুলোর বেশির ভাগই চলাচলের অনুপযোগী। বিআরটিএ নিজেই এসব যানবাহনের ফিটনেস সনদ দিচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় দায়িত্বশীল হতে হবে। কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা আমরা আর দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্ব দিয়ে এই অচলাবস্থার অবসান করুন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App