×

জাতীয়

তিন সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নেপথ্যে

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০১৮, ১১:৩৪ এএম

স্বাধীনতার পর অধিকাংশ সময় রাজশাহীর ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। কিন্তু কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। অন্যদিকে দলীয় কোন্দল এবং ব্যক্তিগত নেতিবাচক ইমেজের কারণে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরেছেন বদর উদ্দিন কামরান। আর ভোট বর্জনের কারণে বরিশালে হেরেছেন বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার।

লিটনের জয়ের মূল হাতিয়ার উন্নয়ন

তানভীর আহমেদ ও সাইদুর রহমান, রাজশাহী থেকে : রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পঞ্চম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি প্রথমবার নগরপিতা নির্বাচিত হয়ে রাজশাহী শহরের ব্যাপক উন্নয়ন করে আধুনিক নগরীর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন পদ্মা পাড়ের বাসিন্দাদের। তাই নগরবাসী পুনরায় তাকে নির্বাচিত করেছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ক্ষমতায় থেকেও উন্নয়ন না করার কারণেই বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পরাজিত হয়েছেন বলে তাদের ধারণা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রাজশাহী শহরে অধিকাংশ সময়ই ক্ষমতার বাইরে ছিল আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ‘বিএনপি অধ্যুষিত’ এই নগরীর মেয়র হয়েছিলেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বিজয়ী হয়ে অনেক উন্নয়ন কাজই করেছিলেন। এর পরও ২০১৩ সালের নির্বাচনে তাকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এরপর রাজশাহীর উন্নয়নের চাকা থমকে ছিল পাঁচটি বছর। তাই উন্নয়নের স্বার্থে পুনরায় লিটনকে ভোট দিয়েছেন নগরবাসী। অন্যদিকে সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনে অধিকাংশ সময় নির্বাচিত হয়েছে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে জনগণের জন্য কোনো কাজ না করায় জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে ২০১৩ সালে দলীয় কোন্দলে পরাজিত হওয়া খায়রুজ্জামান লিটন এর থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের ঊর্ধ্বে থেকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়। আর বিএনপিতে প্রকাশ্যে কোন্দল দেখা না গেলেও ভেতরে এর ছাপ ছিল। বিএনপি সমর্থিত বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরকে প্রকাশ্যে লিটনের পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া মহানগরের অনেক বিএনপি নেতাও লিটনের পক্ষে কাজ করেছেন। নির্বাচনের জয়ের কারণ জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাবলু সরকার ভোরের কাগজকে বলেন, রাজশাহীর নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে একটি বিষয় প্রমাণিত হলোÑ মানুষ আসলে উন্নয়নকেই গ্রহণ করেছে। বিএনপি বারবার বিভিন্ন কথা বলছিল। যার অধিকাংশই ছিল অভিযোগ ও অজুহাত। মানুষ এখন আর এমন অভিযোগ ও অজুহাত শুনতে চায় না। এখন মানুষ চায় তার ভাগ্যের পরিবর্তন, এলাকার পরিবর্তন ও উন্নয়ন। যে কারণে আগে যেভাবে ভোট হতো এখন কিন্তু তা হচ্ছে না। মানুষ আর জোয়ারে গা ভাসায় না, না বুঝে ভোট দেয় না। মানুষ চিন্তা করে, খতিয়ে দেখে তার কিসে ভালো হবে, উন্নতি হবে, কিসে মঙ্গল হবে। রাজশাহী চেম্বারের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, রাজশাহী সিটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই প্রমাণিত হলো উন্নয়ন নির্বাচনের একটি বড় ফ্যাক্টর। এতদিন বলা হতো উন্নয়ন দিয়ে নির্বাচন হয় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। মানুষের আশা, আকাক্সক্ষা, রুচি, চাহিদা পাল্টে গেছে। এক সময় হরতাল ও অবরোধ ইত্যাদি ছিল দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক কর্মসূচি। এখন এসব কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করেছে মানুষ। এখন আর এমন ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না সাধারণ জনগণ। এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন তপু দাবি করেছেন, এবারের নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উল্লেখ করার মতো কোনো কোন্দল বা মতপার্থক্য ছিল না। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। নানামুখী চাপের কারণে তারা নির্বাচনের কাজ করতে পারেননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সরোয়ারের হারের নেপথ্যে ভোট বর্জন

এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল : ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই বর্জন করে মাঠ ছেড়ে যাওয়া বিএনপির শোচনীয় পরাজয়ের কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও বিষয়টিকে এভাবেই দেখছেন। সোমবার তুচ্ছ কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছিল। সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ছিল ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি। তবে ভোট শুরুর ১ ঘণ্টার মধ্যেই বিএনপির পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। কিছুক্ষণ পরই তিনি অভিযোগ করেন, অনেক কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে। এরপর দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন মজিবর রহমান সরোয়ার। শুধু বিএনপিই নয়, অন্যান্য দলের বাকি ৪ মেয়রপ্রার্থীও সরে দাঁড়ান ভোটের মাঠ থেকে। এরপর ভোটকেন্দ্র ফাঁকা হয়ে যায় অনেকটা। এ বিষয়ে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, ভোটের মাঠ ছেড়ে দিলে বিরোধী প্রার্থীর জন্য তো ভালোই হয়। আর এখানে তাই হয়েছে। আমাদের প্রার্থী মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপির সমর্থক ও ভোটাররাও কেন্দ্র ত্যাগ করেন। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে একচেটিয়া ভোট পড়াই স্বাভাবিক। বিএনপির তৃণমূলের নেতা নগরীর চাঁদমারি এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, আমরা মাঠে থাকলে এত ব্যবধানে হারাতে পারত না। আমাদের তো ভোটব্যাংক ছিল, তা কাজে না লাগিয়ে ভোট বর্জন করায় আজ শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে হচ্ছে। বরিশালের ইতিহাসে বিএনপি এত কম ভোট পায়নি, যা এবার আমাদের দেখতে হচ্ছে। এজন্য তিনি দলের ভোট বর্জন সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন। সাংস্কৃতিক কর্মী এডভোকেট এস এম ইকবাল বলেন, বিএনপি সকাল থেকেই নানা অভিযোগ করতে থাকে মিডিয়াকর্মীদের কাছে কখনো এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ, কখনো বা ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার অভিযোগ। এসব না করে কর্মীরা কেন্দ্রে সক্রিয়ভাবে কাজ করলে তারা আরো ভালো ফল করত। প্রার্থীর আরো শক্তি ও সাহস নিয়ে মাঠে থাকা দরকার ছিল। যার কিছুই করেননি মেয়রপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। বরং কখন ভোট বর্জন করবেন তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এস এম ইকবালের মতে, শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে লড়ে যাওয়াই বিএনপির জন্য ভালো ছিল। এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান দাবি করেছেন, যে সব অভিযোগ এনে তারা ভোটের মাঠ ছেড়ে গেছেন সেগুলো গুরুতর নয়। পুরোটা সময় আমরা নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রাখতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরো বলেন, এখানে কোনো কেন্দ্রেই গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ দেখাতে পারেননি অভিযোগকারীরা। তারপরও সরে দাঁড়ানোর কারণ প্রার্থীরাই ভালো বলতে পারবেন। যারা ভোটে না থেকে সরে গেছেন, তাদের প্রত্যেকেই জামানত বাজেয়াপ্তের মতো ভোট পেয়েছেন। উল্লেখ্য, সোমবার সকাল ১০টা থেকেই আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর কর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ জোরালো হতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে বেলা সোয়া ১১টার দিকে নগরীর সদর রোডে অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহাবুব। এরপর দুপুর ১২টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। এর পরপরই তাদের সঙ্গে যোগ দেন অপর মেয়রপ্রার্থী জাপার ইকবাল হোসেন তাপস, বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তী ও কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ। তারা একযোগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের অভিযোগসহ ভোট বর্জনের কথা জানান। এ সময় তারা ভোট স্থগিতের জন্যও লিখিত আবেদন করেন।

দলীয় ঐক্য ও ব্যক্তি ইমেজেই এগিয়ে আরিফ

দেব দুলাল মিত্র, ফারুক আহমদ ও জাহিদুল ইসলাম, সিলেট থেকে : সিটি নির্বাচনের চ‚ড়ান্ত ফলাফল আটকে থাকলেও ‘আওয়ামী লীগের পরাজয় ও বিএনপির শেষ মুহূর্তের চমক’ নিয়ে উভয় দলের নেতাকর্মী এবং সিলেটবাসীর মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা থেমে নেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ষড়যন্ত্রের কাছে গণতন্ত্রের পরাজয় হয়েছে। আবার বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, গণতন্ত্র ও সিলেটবাসীর বিজয় হয়েছে। এদিকে সিসিক নির্বাচন যেন ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’। নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মেয়র পদে জয়-পরাজয় ঘোষণার কোনো সুযোগ নেই। স্থগিত দুটি ভোটকেন্দ্রের পুনর্নির্বাচনের পরই চ‚ড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে বদরউদ্দিন কামরানের পরাজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেই দায়ী করছেন তার সমর্থকরা। কেউ কেউ তার ইমেজ সংকটের কথাও বলছেন। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, এবার নৌকার জোয়ার ছিল। তারপরও এই ফলাফলে আমরা হতবাক হয়েছি। কেন এমন হয়েছে, আমাদের কোথায় কোথায় দুর্বলতা ছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি আরো বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপি দলীয় প্রার্থী ছিলেন। গত নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করার পর নগরীর উন্নয়নে কাজ করেছেন। তাই হয়তো জনগণ খুশি হয়ে এবারো তাকে ভোট দিয়েছে। সিলেট মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মুসফিক জায়গীরদার বলেন, এবারের সিটি নির্বাচনে ‘ষড়যন্ত্রের কাছে গণতন্ত্রের পরাজয়’ হয়েছে। নৌকার পক্ষে যে জোয়ার ছিল, তাতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস করার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মুখোশ পরে নির্বাচনী মাঠে অবস্থান করেছেন। উপরে উপরে কামরানের পক্ষে থাকলেও ভেতরে ভেতরে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন, নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন। এ কারণেই ভোটের মাঠে কামরান পিছিয়ে পড়েছেন। গতকাল মির্জাজাঙ্গাল, জিন্দাবাজার, সুবিদবাজার ও বন্দরবাজার এলাকার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে ভোরের কাগজের কথা হয়। তারা জানান, এবারের নির্বাচনে কামরানকে নৌকার মনোনয়ন দেয়াই ঠিক হয়নি। সিলেট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী তাকে পছন্দ করেন না। কিন্তু দলীয় কারণে কামরানের হয়ে মাঠে ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী বিগত সময়ে আরিফের কাছ থেকে কাজ পেয়েছেন, কামরানের সময়ে পাননি। তাদের ভেতরেও আরিফের জন্য সমর্থন ছিল। সিলেটের সুশীল সমাজের আওয়ামী ঘরানার প্রতিনিধিদের ভাষ্য, কামরানের বদ্ধমূল ধারণা ছিল তিনি এবার জয়লাভ করবেন। তাই দলের ভেতরের কোন্দলের বিষয়টি জানলেও তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেননি। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আওয়ামী লীগ নেতা রনজিত সরকার, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম তুষার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর সভাপতি আফতাব আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিনুল রশিদ সুজনের সঙ্গে কামরানের দূরত্বের বিষয়টি সবারই জানা। এ ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। কামরানবিরোধী এ সেন্টিমেন্টই নির্বাচনী ফলাফলে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে বিএনপির প্রাথী আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রস্তুতির চিত্র ছিল ভিন্ন। শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য সবাই আরিফের পক্ষে কাজ করেছেন। আরিফের ব্যক্তিগত ইমেজ এবং দলীয় ঐক্যের কাছেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী কামরানের পরাজয় হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, শুরুতে মান-অভিমানের কারণে অনেক নেতাকর্মী আরিফের বিপক্ষে থাকলেও পরে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে। সিলেটবাসী উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এই ফলাফল থেকে এটাই বোঝা যায় যে, সিলেটবাসী ‘উন্নয়ন’ চায়। বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, দলের ভেতরে কারো কারো সঙ্গে আরিফুল হকের কিছুটা বিরোধ ছিল। এদের মধ্যে বদরুজ্জামান সেলিম একজন। কিন্তু আরিফ কৌশলে হলেও শেষ পর্যন্ত এই বিরোধ মেটাতে সক্ষম হয়েছেন। সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় দ্বিধাবিভক্ত নেতাকর্মীরা আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। অন্য যেসব নেতাকর্মীর সঙ্গে বিরোধ ছিল, তাদের ডেকে আরিফ কথা বলেছেন। এটাও ভালো ফলাফলের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া আরিফের জামায়াতবিরোধী মনোভাবও সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য জামায়াতের মালিকানাধীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের সীমানা প্রাচীর ভাঙতেও দ্বিধা করেননি তিনি। ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্যও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এসবই ভোটের মাঠে তাকে এগিয়ে রেখেছে। দুই কেন্দ্রের পুনর্নির্বাচনের পরই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা : এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান জানিয়েছেন, স্থগিত দুটি কেন্দ্রের পুনর্নির্বাচন ছাড়া মেয়র পদে জয়-পরাজয় ঘোষণার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, এবারের নির্বাচনে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৬ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে আরিফুল হক চৌধুরী ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট এবং বদরউদ্দিন কামরান ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট পেয়েছেন। কামরানের চেয়ে ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে আছেন আরিফ। স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৭। এই দুই কেন্দ্রের ভোটের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় আরিফ ১৬১ ভোটে পিছিয়ে আছেন। এ কারণে পুনর্নির্বাচনের প্রয়োজন হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App