×

জাতীয়

শ্রীপুরে অবৈধ সিসা কারখানা প্রতিবাদে মানববন্ধন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০১৮, ১২:২৯ পিএম

শ্রীপুরে অবৈধ সিসা কারখানা প্রতিবাদে মানববন্ধন
শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অননুমোদিত সিসা ও ব্যাটারি কারখানা গড়ে উঠেছে। এর প্রতিবাদে গত শনিবার শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্ব খন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ও বৃহস্পতিবার উত্তর পেলাইদ চৌরাস্তায় মানববন্ধন হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। জানা গেছে, সিসা ও ব্যাটারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারণে গবাদি পশুর মড়ক, আবাদি জমি নষ্ট ও স্থানীয়রা শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যাসহ নানারকম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। শ্রীপুরের কেওয়া পূর্ব খন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এলাকাবাসী ও জেলা প্রশাসন জানায়, কারখানাগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। তবে থানা পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। কেওয়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রীপুরের কেওয়া পূর্ব খন্ড এলাকার গেলি (এবষর) ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেডের আশপাশের আবাদি জমিতে এখন আর ফসল হচ্ছে না। স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খলিলুর রহমানসহ তার অন্য সহকর্মীরা জানান, শিশু, শিক্ষককরা দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে পারছেন না। ঝাঁজালো গন্ধে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, চেহারা জীর্ণশীর্ণ হওয়াসহ নানা ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্থানীয় অধ্যাপক এমদাদুল হক বলেন, বারবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ করেও কোনো ফল পাচ্ছি না। আগামীতে কারখানা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। শ্রীপুর গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়কারী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে কারখানার আশপাশের সকল রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন করা হবে। সরেজমিন উত্তর পেলাইদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কারখানাগুলোর আশপাশে কোনো সাইনবোর্ড নেই। ভাড়া করা জায়গায় ভেতরে গর্ত করে আগুন ধরিয়ে সেখানে পুরনো ব্যাটারি পোড়ানো হয়। আগুনে পুড়ে ব্যাটারি থেকে গলিত সিসা বের হচ্ছে। ওই গলিত মন্ড থেকে প্লেট আকারে তৈরি করে সেগুলো সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষিত সিসাগুলো দিয়ে আবার ব্যাটারি তৈরি করা হচ্ছে। এগুলোর বর্জ্য আবাদি জমি ও উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে। কারখানাগুলোর শ্রমিকেরা জানান, প্রতিনিয়ত ঝাঁজালো গন্ধ আর দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম নিয়ে জীবিকার তাগিদে তারা কাজ করছেন। উত্তর পেলাইদ এলাকার দোখলা ব্রিজের দুই পাশে দুটি ও সিসিডিবি সড়কের পাশে একটি কারখানা রয়েছে। উত্তর পেলাইদ এলাকার কৃষক মাজহারুল হক বলেন, ব্যাটারি কারখানার আশপাশের পতিত জমিতে গরু ঘাস খাওয়াতে গেলে তিন মাস আগে একটি ও ৬ মাস আগে দুটি গরু মারা গেছে। বিধবা হোসনা বেগম বলেন, গত চার মাস আগে ব্যাটারি কারখানার আশপাশে গরুর ঘাস খাওয়াতে গেলে দুই মাসের ব্যবধানে তার তিনটি গরু মারা যায়। কৃষক আক্কাস আলী জানান, একটি ষাঁড় ও একটি গাভি গত এক বছর আগে ব্যাটারি কারখানার গ্যাসের প্রভাবে মারা যায়। কৃষক হারুন অর রশীদ জানান, গত আট মাস আগে সিসা কারখানার কাছে দোখলা ব্রিজের পানি ও খাল পাড়ের পানি খেয়ে তার দুটি গরু মারা যায়। কৃষক শহীদ জানান, তার একটি গরু গত পাঁচ মাস আগে মারা যায়। কৃষক মোন্তাজ উদ্দিন বলেন, উপায়ন্তর না দেখে আমরা মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছি। উত্তর পেলাইদ এলাকার এক কারখানায় গিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাবু মিয়া নামে একজন কারখানাটি পরিচালনা করছেন। জাকির হোসেন নামে তার এক কর্মচারী জানান, কর্তৃপক্ষ থানার অনুমতি নিয়ে ভাড়া জমিতে কারখানা চালাচ্ছেন। কারখানা পরিচালনার জন্য নিয়মিত থানায় মাসোহারা দেয়া হচ্ছে। তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ অনেক দিন থেকে পেয়ে আসছি। এ ব্যাপারে কারখানা মালিকদের নিষেধ করা সত্তেও রাতের আঁধারে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা সংগ্রহ করছে। এতে কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগির মড়ক দেখা দিয়েছে। এদের উচ্ছেদ করা দরকার। এ কারখানার কারণে ভবিষ্যতে ওই এলাকায় বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হবে। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল জলিল বলেন, এ ধরনের অভিযোগ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া গেছে। উপজেলার গাজীপুর, গোসিঙ্গা, পটকা, বেড়াবাড়ি এলাকাতেও সিসা উৎপাদন ও ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানা গড়ে উঠেছিল। পরে ওইসব কারখানার আশপাশে গবাদি পশুর মড়ক শুরু হয়। এরপর এলাকাবাসীর চাপের মুখে কোনো কোনো কারখানা মালিক কৃষকদের জরিমানা পরিশোধ করে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। কারখানা বন্ধ করে দেয়ার পর গবাদি পশুর মড়ক আর দেখা যায়নি। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, থানা থেকে কারখানার পরিবেশের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। মাসোহারাও নেয়া হয় না। এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেব। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান হুমায়ুন কবীর বলেন, সিসা কারখানাগুলো ভেঙে ফেলা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App