×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগ চায় আসন ধরে রাখতে, বিএনপির আশা উদ্ধার কাদের সিদ্দিকীও প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০১৮, ০৫:০৯ পিএম

আওয়ামী লীগ চায় আসন ধরে রাখতে, বিএনপির আশা উদ্ধার কাদের সিদ্দিকীও প্রার্থী
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ দলীয় হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী। বিএনপি এই আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর অধিনায়ক কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম প্রার্থী হওয়ায় এ আসনের নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী থাকায় দলীয় কোন্দলও সৃষ্টি হয়েছে বড় দুই দলে। এ আসনে মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ বিএনপি থেকে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে পড়েছেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তিনবার, বিএনপি প্রার্থী তিনবার, জাতীয় পার্টির একবার, জাসদ (সিরাজ) একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়লাভ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, এরপর ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। শাজাহান সিরাজ জাসদের প্রার্থী হয়ে ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে বিএনপিতে যোগদান করে ২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হন। ২০০৮ সালে শাহজাহান সিরাজ কারাগারে থাকায় এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি লুৎফর রহমান মতিনকে। তিনি আওয়ামী লীগের আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে পরাজিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পুনরায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বিনা প্রতিদ্বদ্বতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পবিত্র হজ নিয়ে বিতর্কিত কথা বলায় আবদুুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব হারান ও পরবর্তী সময়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে শাজাহান সিরাজ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নতুন নতুন মুখ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ক্লিন ইমেজধারী সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে ঘাঁটি আরো শক্তিশালী করতে চায় আওয়ামী লীগ। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ থেকে পদত্যাগের পর ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারির উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী। উপ-নির্বাচনের পর থেকেই প্রার্থিতা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও গণসংযোগের মাধ্যমে নিজের অবস্থান সংহত করেছেন। এ দিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে ব্যাপক গণসংযোগে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডা, এফবিসিসিআইর পরিচালক আবু নাসের এবং জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী। মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করি মানুষের সেবা করার জন্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছিলাম। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি। দল ও নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে ছিলাম আছি এবং থাকব। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি কালিহাতীর আসন শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু নাসের বলেন, বর্তমান এমপি হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দল বিব্রত। এমপির ব্যর্থতার কারণেই দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ আসনে যে কয়জন সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন তাদের মধ্যে তিনি নিজেকে স্বচ্ছ ইমেজ ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তির অধিকারী এবং যোগ্য বলে দাবি করেন। আবু নাসের বলেন, কালিহাতীর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও সামাজিক কর্মকাণ্ড কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে শতভাগ আশাবাদী তিনি। আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি গণসংযোগ করে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন। বিশেষ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ ও নদীভাঙনে গৃহহীন মানুষদের গৃহনির্মাণের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী বলেন, সৎ ও স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে সহজেই এ আসন জয়লাভ করা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে আমি তা মেনে নেব। এ দিকে বর্তমান সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৪-৫ দিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এলাকার মানুষের খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন। যখন-তখন দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে হাজির হয়ে কুশল বিনিময় করেন। মাথায় টুকরি নিয়ে নিজেই উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। যমুনা নদীর ভাঙন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জোকারচর ব্রিজ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে রাস্তা উন্নয়নে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কালিহাতীর আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী। আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করবে দল। গ্রæপিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনেকেই মনোনয়নের চেষ্টা করবেন। তিনি আরো বলেন, কালিহাতীর মানুষ আগে সংসদ সদস্যের পেছনে ঘুরতেন। এখন সংসদ সদস্য মানুষের পেছনে ঘোরেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে অনেক প্রার্থী রয়েছেন। মনোনয়ন দেবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপ-নির্বাচনে তিনি আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আগামী নির্বাচনেও আস্থা রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস। এ দিকে সরকারি দলের কোন্দলের সুযোগ নিতে চায় বিএনপি। ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিন পরাজিত হলেও ভোট পান ৮৬ হাজার ৯১২টি। সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে মামলা হামলার শিকার হয়ে জেলহাজতেও যেতে হয় তাকে। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী। মতিন বলেন, আওয়ামী লীগ একনায়কতন্ত্র কায়েম করে সরকার পরিচালনা করতে চায়। আগামীতে একদলীয় নির্বাচন করতে চাইলেও দেশে আর একদলীয় নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। লুৎফর রহমান মতিনের পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন, শাজাহান সিরাজের স্ত্রী কেন্দ্রীয় বিএনপির তাঁতী বিষয়ক সহসম্পাদক রাবেয়া সিরাজ, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি এবং উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আ. হালিম মিঞা, এলেঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি শাফী খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো। ইঞ্জিনিয়ার হালিম বলেন, বর্তমানে দেশে দমন-পীড়নের রাজনীতি বিদ্যমান। এরপরও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি হলে এবং আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে অবশ্যই কালিহাতী আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবেন। শাফি খান বলেন, আমার সঙ্গে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তিনি এলাকায় আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভ‚মিকা রেখেছেন। কালিহাতীবাসী তার সঙ্গে রয়েছেন। মনোনয়ন পাবেন এমনটাই মনে করেন তার ঘনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থকরা। তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। রাবেয়া সিরাজ বলেন, তার স্বামী শাজাহান সিরাজ এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন। এ আসনে তাদের ব্যক্তিগত প্রভাব রয়েছে। সুতরাং বিএনপি নির্বাচনে গেলে তিনি অবশ্যই দলের মনোনয়ন চাইবেন এবং দলের মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করবেন। লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব ও দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তার ছোট ভাই এ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। এ আসনে ২০১৭ সালের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। সে সময় রিটার্নিং অফিসার তার প্রার্থিতা বাতিল করেন। হাইকোর্টের রায়ে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেলেও সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তা বাতিল হয়ে যায়। তখন থেকেই তিনি এ আসনে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে তার প্রার্থিতা একটি ফ্যাক্টর। অপরদিকে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন এ আসনে জেলা জাতীয় পার্টির অর্থবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আহম্মেদ রতন। তিনি একক প্রার্থী হওয়ায় এখানে তার প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App