×

পুরনো খবর

এমপি রানার আসন দখলে নিতে আ.লীগের অর্ধডজন নেতা মাঠে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০১৮, ০২:৪৭ পিএম

এমপি রানার আসন দখলে নিতে আ.লীগের অর্ধডজন নেতা মাঠে
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা নিজ দলের এক নেতা খুনের মামলায় কারাগারে। তার আসন দখলে নিতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের অর্ধডজন নেতা। মনোনয়ন দৌড়ে নেমে জড়িয়ে পড়েছেন কোন্দলে। সংসদ সদস্যের অনুসারীরাও তৎপর। অপরদিকে বিএনপি থেকে সাবেক মন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ ছাড়াও এবার দলীয় মনোনয়ন চাইছেন জেলা বিএনপির নেতা মাইনুল ইসলাম। মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। মনোনয়ন নিয়ে দুই নেতার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও কোন্দল নেই বললেই চলে। এ আসনটিতে ১৯৭০, ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি আমানুর রহমান খান রানার চাচা আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামসুর রহমান খান শাহজাহান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী শওকত ভুঁইয়া। ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী সাইদুর রহমান খান মোহন এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের শামসুর রহমান খান শাহজাহান আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হতে পারেননি। পরপর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ শামসুর রহমান খানকে মনোনয়ন না দিয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মতিউর রহমানকে মনোনয়ন দেয়। তিনি বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর আসনটি আওয়ামী লীগের হাতে আসে। সংসদ সদস্য ডা. মতিউর রহমান ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন শামসুর রহমান খানের ভাতিজা তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানুর রহমান খান রানা। তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমানুর রহমান খান রানা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের আগস্টে পুলিশি তদন্তে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় আমানুর রহমান খান রানা ও তার ভাইদের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তারপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে আছেন। এমপি আমানুর রহমান খান রানার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু, জাপা থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া জাকারিয়া মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ তুহিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শহীদুল ইসলাম, প্রয়াত সংসদ সদস্য ডা. মতিয়ার রহমানের ছেলে ঢাকা ভিক্টোরিয়া হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান তানভীর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক পিপিএস আকবর খান, তেজগাঁও কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অধীর চন্দ্র সরকার। জাতীয় পার্টির সাবেক উপজেলা সভাপতি আলহাজ আব্দুল হালিম ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এডভোকেট মিয়া মোহাম্মদ হাসান আলী রেজা মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে গণসংযোগ করছেন। এত বেশি সংখ্যক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় এমপি রানা বিরোধী অংশের মধ্যে বিভক্তি দেয়া দিয়েছে। রানা বিরোধী নেতাকর্মীরা নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন এমপি রানার অনুসারীরা। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে এমপির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। এমপি রানার অনুসারী ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন জানান, ঘাটাইলে রানার বিকল্প নেই। নৌকার বিজয়ের জন্য একমাত্র যোগ্য প্রার্থী তিনি। জনমত জরিপে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তায় তিনি এগিয়ে আছেন। ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হেস্টিং বলেছেন, ঘাটাইলের তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখনো রানা এমপিকে সমর্থন করেন। রানাকে মনোনয়ন দিলেই এ আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। অন্য কোনো প্রার্থী এলে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারবেন না। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, এমপি রানার কোনো জনসমর্থন নেই। দলকে আমি সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে রেখেছি। রানার সমর্থকরা তেমন প্রভাব ফেলতে পারবেন না। উপনির্বাচনেও আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। তাই আশা করছি আগামী নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন পাব। আর মনোনয়ন পেলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ। বিশিষ্ট শিল্পপতি আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ তুহিন এ আসনে দলীয় মনোনয়নের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত ঘাটাইল গড়ে তুলব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নৌকা মার্কাকে আবারো বিজয়ী করতে হবে। তিনি মনোনয়নের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ঘাটাইলকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। গণসংযোগকালে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ছাড়া পেয়েছি। একমাত্র আমি মনোনয়ন পেলে দলে কোনো কোন্দল থাকবে না এবং এ আসনে নৌকা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ আসনে বিএনপির রয়েছে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা ১৫ বছর এমপি থাকায় লুৎফর রহমান খান আজাদ এলাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন অনেক। দলে তার একক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তিনি খুব শক্তিশালী বলে এলাকার মানুষ মনে করেন। তবে এর আগে তার বিপক্ষে কেউ মনোনয়ন না চাইলেও এবার দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী হচ্ছেন জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মাইনুল ইসলাম। তিনি এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা ও গণসংযোগ করছেন। জেলা বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব মাইনুল ইসলামকে সমর্থন করেছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। মন্ত্রী থাকাকালীন ঘাটাইল উপজেলার রাস্তাঘাট অবকাঠামোসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। জনগণ সে কারণে আমাকে সব সময়ই সমর্থন করেছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বড় রাজনৈতিক দল হওয়ায় একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন চাইতেই পারেন। তবে দলীয় মনোনয়ন লাভে তিনি আশাবাদী। জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মাইনুল ইসলাম বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছি। এতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে এবং তারা আমাকে সমর্থন করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App