×

পুরনো খবর

বিএনপিতে একক, আ.লীগে ডজনখানেক সম্ভাব্য প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০১৮, ০১:২০ পিএম

বিএনপিতে একক, আ.লীগে ডজনখানেক সম্ভাব্য প্রার্থী
জেলার শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা নিয়ে গঠিত শেরপুর-৩ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে বিজয়ী দল সরকার গঠন করায় এটি লাকি আসন হিসেবে পরিচিত। যে কারণে সবার কৌত‚হল থাকে এ আসনটিকে নিয়ে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। হাইকমান্ডে যোগাযোগের পাশাপাশি তাদের শুভেচ্ছা ব্যানার ও পোস্টার শোভা পাচ্ছে নির্বাচনী এলাকার সর্বত্র। শুভেচ্ছা বিনিময়, সেবা, সহায়তা, দান-অনুদান, সভা-সমিতিতে অংশ নিয়ে নানাভাবে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। কেউ কেউ আবার দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রæতি। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য হলেনÑ আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক। নবম জাতীয় সংসদেও তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে এবার নৌকার মাঝি হতে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন ডজনখানেক প্রার্থী। প্রার্থীর ছড়াছড়ি ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ আসনে আওয়ামী লীগে এখন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড তদারকিতে তার বিশেষ তৎপরতা ও গণসংযোগ লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে নির্বাচনী আসনের দুই উপজেলাতেই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছে তার দূরত্ব। এই দূরত্ব ও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে জোরাল মনোনয়ন প্রত্যাশী ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এস এম ওয়ারেজ নাইম। আগের নির্বাচনগুলোতে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় এবার তিনি মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই গণসংযোগ করে আসছেন। এ এস এম ওয়াজেন নাইম বলেন, বর্তমান এমপি দলের ভেতর বিভেদ সৃষ্টি করার কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এ জন্য এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও ঝিনাইগাতী উপজেলা থেকে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এ কারণে এ উপজেলাটি নানাভাবে অবহেলিত। এ নিয়ে ঝিনাইগাতীর নেতারা একাট্টা। সাধারণ মানুষও আমাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আমি বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ। তাতে আসনটি ধরে রাখা সম্ভব হবে। এবার আওয়ামী লীগ থেকে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবু সালেহ মো. নুরুল ইসলাম হিরু। তিনি অগ্রণী ব্যাংকের জিএম হিসেবে অবসর গ্রহণের পর থেকে শেরপুরেই অবস্থান করছেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ আর সভা-সমাবেশে নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন হিরু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে হলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ এবং দলীয় নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছে। আমি নৌকার মনোনয়ন পেলে বিজয় আমারই হবে। এ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির বেগম ফাতেমা। তিনিও নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। মো. মোতাহারুল ইসলাম লিটন শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তার প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন। শ্রীবরদীর খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলামও মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসম্পাদক কৃষিবিদ ড. ফররুখ আহমেদ ফারুক মনোনয়নের প্রত্যাশায় নানা কৌশলে ভোটার ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি আ.লীগ সভানেত্রীকে উপহার দিতে পারব। সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার মুহাম্মদ খুররম সম্প্রতি মারা যাওয়ার পর থেকে তার ভাই খন্দকার মো. ফারুখ আহমেদ পোস্টার-লিফলেটের মাধ্যমে প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান রাজা। দীর্ঘদিন ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকার পর ইদানিং আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দল যদি শিক্ষিত, মার্জিত ও জনপ্রিয় যুবক হিসেবে প্রার্থীর মূল্যায়ন করে তাহলে আমাকেই মনোনয়ন দেবে। আর দলীয় মনোনয়ন পেলে জয়ী হতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি। এ ছাড়া এ আসন থেকে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তারা হলেন ঝিনাইগাতী উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত এম এ বারীর ছেলে মহসিনুল বারী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক ইফতেখার হোসেন কাফী জুবেরী। এদিকে একক প্রার্থী নিয়ে অনেকটা খোশ মেজাজে রয়েছে বিএনপি। এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য দলের জেলা সভাপতি মো. মাহমুদুল হক রুবেল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও এ আসনের প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। দলের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই শক্ত থাকায় আগামী নির্বাচনে তাকে পরাজিত করা খুবই কঠিন হবে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বাবা সাবেক এমপি ডা. সেরাজুল হকের ইমেজ আর নিজের দলীয় অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, নির্বাচনে মাহমুদুল হক রুবেল এ আসনটি ছিনিয়ে আনতে পারবেন। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতীতে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। এ আসনে দল খুবই সংগঠিত। দলের ভেতরেও এখন আর কোনো দ্ব›দ্ব-কোন্দল নেই। শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতীর সব নেতাই এখন আমাকে পুরোপুরি সমর্থন করছেন। তা ছাড়া জনসমর্থনও এখন বিএনপির দিকে। মানুষ বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমাদের নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। বিজয় আমাদেরই হবে ইনশাআল্লাহ। এদিকে ২০ দলীয় জোট থেকে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী শ্রীবরদী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মো. নুরুজ্জামান বাদল। তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন। এবারো জোট থেকে মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়ে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে এবারো মনোনয়ন চাইবেন শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম ফর্সা। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থী প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক চাঁনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া হাসান খালেদ কাজল ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু নাসের বাদল জাপা থেকে মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন ও প্রার্থী বাছাইয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে এ আসনটি এবার আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App