আসামি ও সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়াই চলবে বিচার
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০১৮, ০৫:৩২ পিএম
তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ যুগে এর প্রযুক্তিগত ব্যবহারের দিক থেকে পিছিয়ে থাকবে না কোনো সেক্টরই। সরকারি সব সেক্টরের পাশাপাশি এবার আধুনিকতার হাওয়া লাগবে আদালত অঙ্গনেও। কারাগার থেকে আসামি আদালতে হাজির না করেই মামলার বিচারের পথ সুগম হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষীরাও দেশ-বিদেশের যে কোনো স্থান থেকে সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ পাবেন। থাকবে না নিরাপত্তা ঝুঁকি। বাঁচবে সময় ও অর্থ। কমবে মামলার জট।
এরই মধ্যে সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম (তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার) আইন, ২০১৭-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে আইন কমিশন। এ খসড়া আইনে রূপান্তরিত হলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করার প্রয়োজন হবে না। কারাগার থেকেই অডিও ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তারা আদালতে হাজিরা দিতে পারবেন। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাগারে থেকে আইনজীবীর সঙ্গে গোপন পরামর্শ ও আদালতে সাক্ষ্য কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা (জেলা জজ) ফউজুল আজিম বলেন, আইন অনুসারে ফৌজদারি মামলায় বিচার হতে হবে প্রকাশ্য আদালতে এবং উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অনেক সময় আসামি ও সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ আইন প্রণীত হলে চাঞ্চল্যকর অনেক মামলার দুর্ধর্ষ ও দাগি আসামি, জঙ্গিদের বিভিন্ন আদালতে হাজির না করেই মামলার বিচার কাজ করা যাবে।
অন্যদিকে সিভিল মামলার বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রয়োজন হয়। যেমন সাবরেজিস্ট্রি অফিসের বালাম, এসিল্যান্ড অফিসের ল্যান্ড রেকর্ড প্রয়োজন হয়। বর্তমানে মামলার পক্ষরা খরচ জমা দেন, তখন বিচারক সংশ্লিষ্ট অফিসে চিঠি দেন। চিঠি দিলে সেই অফিসের পিয়ন বা দায়িত্বশীল লোক দলিলপত্র নিয়ে আদালতে আসে।
তবে অনেকেই বিচারিক কাজে এ ধরনের ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য দেয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষীকে প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে আইনজীবীদের গোপন পরামর্শ প্রয়োজন হয়। আর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই গোপনীয় পরামর্শের গোপনীয়তা কতটুকু রক্ষা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা বাস্তবসম্মত নয়। নানা ধরনের সমস্যার পাশাপাশি ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে এটা বিরাট অন্তরায় হিসেবে দেখা দিতে পারে। কমিশনের করা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, মামলার কোনো পক্ষ অডিও-ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রমে অংশ নিতে চাইলে নির্ধারিত ফি দাখিল করে ১৫ দিন আগে বিচারকের কাছে আবেদন করতে হবে।
বর্তমানে খসড়াটির ওপর মতামত আহŸান করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ ও খাগড়াছড়ির সব পর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে কমিশন। মতামত যাচাই-বাছাই করে আইনের খসড়া চ‚ড়ান্তের পর তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে কমিশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ আইন প্রণীত হলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে সাবরেজিস্ট্রার ভলিউম দেখাবেন এবং বিচারক আদালত থেকে ক্লোজ ছবি নিয়ে নিতে পারবেন। জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মুহাম্মদ জহিরুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারি পর্যায়েও এ বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষী নিতে হতে সাক্ষ্য আইনের পরিবর্তন করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের আদালত ও কারাগারগুলোকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করতে হবে। সাক্ষ্য আইন পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের আদালত ও কারাগারগুলোকে ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়াও চলছে।