×

জাতীয়

সম্প্রীতি-আশঙ্কার দোলাচলে প্রার্থী ও ভোটাররা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৮, ১১:১৬ এএম

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা সম্প্রীতি ও আশঙ্কার দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একদিকে যেমন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার আশা আছে, তেমনি আবার সংশয়ও রয়েছে। এখন পর্যন্ত সিলেটের সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশ অনেক ভালো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই পরিবেশ থাকবে কিনা তা নিয়েই ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সবার মাঝেই এক ধরনের উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। একমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীরা এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন। সবাই বলছেন, ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা তা নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণের ওপর নির্ভর করবে। প্রার্থী, ভোটার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে সিলেটের নির্বাচনে প্রতিপক্ষের মধ্যে কোনো সংঘাত বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখানে একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি রয়েছে। কেউ সাধারণত সংঘাতে যেতে চান না। সবাই সর্বোচ্চ সহনশীলতা ধারণ করেন। কিন্তু এবার একটু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে তারা আশাবাদী। নৌকার পক্ষে সিলেটের জনগণের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। জনগণ গতবারের ভুল বুঝতে পেরেছে। অতএব নৌকার জয়লাভ নিশ্চিত। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জয়লাভ করতে চাই। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কামরান ভোরের কাগজকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের অধীনে অতীতের সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হতো তাহলে আরিফুল হক চৌধুরী গত নির্বাচনে কীভাবে জয়লাভ করলেন? যত নির্বাচন হয়েছে, সব নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়েছে। এখন ওনারা নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। ভোটারদের আশঙ্কার কিছুই নেই। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। গত সিটি নির্বাচনে আমি কাক্সিক্ষত ফল পাইনি। জনগণের রায় মেনে নিয়েছি। এবারো উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট হবে এবং সব ভোটার স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা নিজেদের অন্তর্কোন্দলের কারণে নিজেরাই দিশাহারা। এই অবস্থায় তারা অপপ্রচার চালিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘিœত করছে। তাদের অপপ্রচারের কারণে ভোটারদের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছেন। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে লাভ হবে না। স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার বিজয়ে সিলেটের সর্বস্তরের জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছবেই। এদিকে সিলেট বিএনপির বিভিন্ন শ্রেণির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি সরে দাঁড়ানোর পূর্ব মুহ‚র্ত পর্যন্ত বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি ছিল। এখন আর তা নেই। আরিফুল হক চৌধুরী একক প্রার্থী হওয়ায় সিলেটে বিএনপির অবস্থান অনেক শক্তিশালী হয়েছে। তারা বলছেন, এই নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। তাই বিএনপি এই মুহ‚র্তে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি ভাবছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আরিফুল হক চৌধুরী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। কিন্তু প্রশাসনের আচরণে মনে হয় না যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে নির্বাচনী পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে। সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তারপরেও সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি আশাবাদও রয়েছে। বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে যেসব লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি, তাতে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে হচ্ছে না। আমার দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর পুলিশি তৎপরতা বেড়ে গেছে। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে আমি ও আমার দলের নেতাকর্মীরা শঙ্কার মধ্যে আছি। এ ব্যাপারে আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেক অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। সবার জন্য সমান সুযোগও নিশ্চিত হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। নিকট অতীত যেহেতু সুখকর নয়, সেহেতু সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে কিছুটা সংশয় রয়েছে। তারপরেও ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত। সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই সিসিক নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে জনগণ রায় দেবে। এখানে ঐতিহাসিক ভোট বিপ্লব ঘটবে। কোনো বাধাই আরিফুল হক চৌধুরী ও ধানের শীষের বিজয় ঠেকাতে পারবে না। সুজন, সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী জানান, সিলেটে সব সময়ই সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কখনো সংঘাত বা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এবার ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ভোটারদের মধ্যে এবং কোনো কোনো প্রার্থীর মধ্যে একটা ভয় ও শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে জনগণের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। জামায়াত সমর্থিত ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের পক্ষ থেকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণাকালে তিনি সরকারদলীয় সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ানো এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য সিসিকের এবারের নির্বাচনের গুরুত্ব আলাদা। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে আগামী ২৮ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জুলাই। উল্লেখ্য, সিসিক নির্বাচনে এবার চ‚ড়ান্ত ভোটযুদ্ধে নেমেছেন ১৯৬ প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, কাউন্সিলর পদে ১২৭ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬২ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App