×

বিনোদন

প্রাচ্যনাট স্কুলের ‘রাজরক্ত’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৮, ১২:৪৭ পিএম

প্রাচ্যনাট স্কুলের ‘রাজরক্ত’

ছবি : রাজীব হালদার

প্রাচ্যনাট স্কুলের নাট্য প্রযোজনা মানেই যেন তারণ্যের উন্মাদনা। অতীতের ধারাবাহিকতা তো তাই বলে। এমনই নবীন প্রাণের উচ্ছ্বাস দেখতে রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন সে দিন পূর্ণ। গত ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিং এন্ড ডিজাইন-এর ৩৪তম ব্যাচের সনদ প্রদান এবং সমাপনী প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়। এ দিন স্কুলের শিক্ষার্থীরা মঞ্চস্থ করে নাটক ‘রাজরক্ত’। মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রদ্যুৎ কুমার ঘোষ। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়- শোষক রাজা নিজের ভাষায়, তার আঙুলগুলো যেমন শক্ত তেমনি কোমল। মিষ্টি করে ধরতে জানে আবার দম বন্ধ করে দিতেও জানে। মিষ্টি কথায় নরম আঙুলের ছোঁয়ায় যাদের তিনি বশে আনতে পারেন না, তাদের রক্তে কী থাকে সেই কারণটা তিনি খুঁজে বের করতে চান। এ জন্য তাদের সব রক্ত সংগ্রহ করে ঘেঁটেঘুঁটে দেখেন কোথায় রোগের জীবাণু লুকিয়ে থাকে। এই রক্তই তাড়া করে রাজাকে। আবহমান কাল থেকেই সমাজের ধনিক শ্রেণির লোকেরা জমিদার, রাজা, বাদশা বা সাহেবের ছদ্মবেশে মানব সমাজে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি  বিস্তারের মাধ্যমে নানারকম শোষণ, অত্যাচার, অবিচার করে আসছে। ‘রাজরক্ত’ নাটকের রাজার কাছে জগৎ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এবং সে নিজেকে প্রসারিত করতে ভালোবাসেন বলে জানান। প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা এমনই যে শোষক শ্রেণির লোকেরা সবসময়ই নিজের ক্ষমতার পরিধি বৃদ্ধি করতে চায়। আর তার প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারে যদি কখনো কোনো বাধার সম্মুখীন হয়, তখন সে পরিস্থিতি সাপেক্ষে নিজের রূপবদল করে। এভাবে সে জীবনের নানা পর্বে নিজেকে নানারূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কখনো সে হচ্ছে ভ‚স্বামী, জমিদার, মজুদদার, কখনো বা কারখানার মালিক বা সরকার যন্ত্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তবে যে রূপেই সে নিজেকে প্রকাশ করুক না কেন! তার কাজ সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের খুনে নিজেকে পরিতৃপ্ত করা। সে অদৃশ্য শোষকের মাধ্যমে মানুষের রক্ত চুষে নেয়। নানা অত্যাচারে অতিষ্ঠ করে তোলে মানব-আত্মা। তখন মানব মুক্তির ডাক আসতে শুরু করে। মেহনতি মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। শোষকের মূলোৎপাটনের প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু তখন আবার তারা তাদের রূপ পরিবর্তন করে নতুন প্রতিমায় নিজেকে প্রকাশ করে। সে চায় মানুষকে সর্বদা তার অধীনে রেখে অনন্তকাল ধরে শোষণ করতে। কিন্তু তার এই নানারূপে বিচরণ, ছদ্মবেশ ধারণ তাকে অমর করতে পারে না। একটা সময় সে তার বিবেকের তাড়নায় দগ্ধ হয়। এমনটাই দেখছি প্রদ্যুৎ কুমার ঘোষের নির্দেশনায় ‘রাজরক্ত’ নাটকে। নাটকের কুশীলবরা বাস্তবতাকে অত্যন্ত নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ‘রাজরক্ত’ নাটকে মনুষ্যত্বের কথা ফুঠে উঠেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে রাজা সাহেবের মতো লোকেরা কতটা ভয়ঙ্কর। তারা মানবের মুক্তির ধ্বনি উঠলে ভয় পায়। আর তাদের ভয়কে আড়াল করে রাখার জন্য তারা তাদের অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তখন রুস্তমের মতো সবাই বলতে শুরু করে, ‘একা একা যুদ্ধ হয় না’! রূপকধর্মী এই নাটকটিকে প্রাণ সঞ্চালনা করেছে এর কোরিওগ্রাফি, আলোকসজ্জা, পোশাক, সঙ্গীত এবং মঞ্চের অভিনেতারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App