×

জাতীয়

ডিজিটাল পুলিশের এনালগ ট্রাফিকিং

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৮, ১১:৩০ এএম

ডিজিটাল পুলিশের এনালগ ট্রাফিকিং
বর্তমান ডিজিটাল যুগেও এনালগ সিস্টেমে রয়ে গেছে পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থা। তিলোত্তমা ঢাকা মহানগরীর যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে পুরনো পদ্ধতির হাত উঁচিয়ে। এমন এনালগ পদ্ধতিতে রাজধানীর লাখো যানবাহন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৬৫টি পয়েন্টে আধুনিক প্রযুক্তির সিগন্যাল বাতি, টাইমার কাউন্টডাউন যন্ত্র স্থাপন করলেও সেগুলো কোনো কাজে আসছে না। রাজধানীর অনেক স্থানের সিগন্যাল বাতি দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর রয়েছে। আর যেগুলো চালু আছে সেসব সিগন্যালে লাল, হলুদ, সবুজ বাতি জ্বললেও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় ‘হাত ও লাঠি’ উঁচিয়ে। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তার দাবি সব সিগন্যাল বাতিই চালু আছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, অনেক সিগন্যাল নষ্ট থাকায় তারা বাধ্য হয়েই হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন। মাঠপর্যায়ের ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা শহরের যানবাহনের চাপের বাস্তবতার কারণে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল মানা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আমরা বাধ্য হয়ে বাঁশি, হাত, লাঠির ইশারায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছি। এ ছাড়া প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচলের কারণেও ডিজিটাল সিগন্যাল মানা সম্ভব হচ্ছে না। টাইমার মেশিনে কোনো সিগন্যাল ৬০ সেকেন্ড, কোনোটা ৭০ সেকেন্ড দেয়া আছে। কিন্তু একটি রিকশা রাস্তার এক পাশ থেকে অপর প্রান্তে যেতেই ৩০-৩৫ সেকেন্ড লাগে। সেক্ষেত্রে এক সিগন্যালে ৩-৪টির বেশি রিকশা পার করা যাচ্ছে না, এর সঙ্গে মটরযান রয়েছে। আবার সিগন্যাল দেয়ার আগেই রিকশা রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে। একটা রিকশাকে থামাতে গেলে ওই সুযোগে অন্য ৫টি রিকশা চলে যায়। বাসচালক, রিকশাচালক, পথচারী কেউই নিয়ম মানছে না। তাহলে সিগন্যাল মানাব কীভাবে? সিগন্যাল বাতির রক্ষণাবেক্ষণকারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘ক্লিন এয়ার এন্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট’ (কেস) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান খান ভোরের কাগজকে বলেন, রাজধানীর যেসব পয়েন্টে আধুনিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়েছিল সেগুলো কার্যকর আছে। সিগন্যাল বাতি স্থাপনের সময় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে কোনো বাতি কতক্ষণ জ্বলবে সেটাও ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সিগন্যাল কার্যকর করার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। কিন্তু অনেক পয়েন্টে সিগন্যাল বাতি নষ্ট, আর যেসব পয়েন্টে সিগন্যাল বাতি জ্বলে-নিভে সেখানেও ‘হাত উঁচিয়ে’ গাড়ি চলার কারণ সম্পর্কে মফিজুর রহমান খান বলেন, ট্রাফিকিং ব্যবস্থা আধুনিকায়নে সিগন্যাল বাতি, টাইমারসহ আমরা সবকিছু স্থাপন করেছি। এর পরও ট্রাফিক বিভাগ সিগন্যাল কার্যকর করতে না পারলে সেটার দায়ভার তাদের। তবে কাকরাইল মোড়ের সিগন্যাল বাতি সমস্যার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উড়াল সড়ক নির্মাণের কারণে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ ও শান্তিনগর মোড়ে সিগন্যাল বাতি বন্ধ রয়েছে। বাকি সবগুলো পয়েন্টেই কার্যকর আছে। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, সিগন্যাল বাতি স্থাপন ও এগুলোর দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তারা নগরীর বেশ কিছু পয়েন্টে ডিজিটাল সিগন্যাল বাতি চালু করেছিল। এর মধ্যে অনেকগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো দীর্ঘদিনেও ঠিক করেনি তারা। এ কারণে আমরা আগের নিয়মে হাত ও লাঠি উঁচিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছি। এ প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান খান আরো বলেন, ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ এখন রিমোট কন্ট্রোল চাচ্ছে। তারা বলছে, হঠাৎ করেই ভিআইপি গাড়ি আসছে তখন একদিকের সিগন্যাল বাতি বেশি সময় ধরে চালু রাখতে হয়। কিন্তু বর্তমান সিস্টেমে সিগন্যাল বাতির সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। ভিআইপি গাড়ি এলে সিগন্যাল কার্যকর রাখা সম্ভব হয় না। যেদিকে যতটুকু সময় প্রয়োজন হবে রিমোটের সাহায্যে সেটুকু দেয়া হবে এ জন্য পুলিশ রিমোট চাচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা শেরাটন মোড়, বিজয় স্মরণী, গুলশান-১ ও বনানীতে ৪টি রিমোট পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছি। নগরীর ৬২টি পয়েন্টে রিমোট কন্ট্রোল যন্ত্র চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে টেন্ডার, ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেছে। ভারত থেকে এগুলো আসার পর আগামী আগস্টের মধ্যে রাজধানীর ৬২টি সিগন্যালে রিমোট কন্ট্রোল চালু করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App