×

বিনোদন

আলোচিত নাটকের কথা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৮, ০৩:৪১ পিএম

আলোচিত নাটকের কথা
ছোটপর্দার দর্শকদের কাছে ঈদ এখন নাটকের মহোৎসব বলে পরিচিত। ডজন ডজন চ্যানেলে শত শত নতুন নাটক প্রচারিত হয়। সেগুলো নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আলোচনারও অন্ত থাকে না। সংখ্যাধিক্যের ভিড়ে মানসম্পন্ন কাজ খুঁজে পেতে হয়রান হতে হয় ঈদের শেষে। ‘মেলা’ ঈদের অগণিত প্রডাকশন থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বেছে নিল টেলিভিশন জগতে আলোচিত ১০টি নাটক ও টেলিফিল্ম। গ্রন্থনা করেছেন স্বাক্ষর শওকত
ফেরার পথ নেই সমসাময়িক দুই ইস্যু নিয়ে নাটক। আপনার কাছের মানুষ এক সকালে বাসা থেকে বেরোনোর পর আর ফেরে না। হারিয়ে যাওয়া মানুষের জন্য অপেক্ষায় থাকে প্রিয় মানুষগুলো। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের আজ ফেরার পথ নেই। দুটো গল্পে দেশের অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা বর্ণিত হয়েছে খুবই সূ²ভাবে। আশফাক নিপুণ পরিচালিত নাটকে আমার-আপনার জীবনের নয়তো ঠিক পাশের মানুষটির জীবনের হাহাকার উঠে এসেছে। বিষয় হিসেবে ভিন্নতা থাকায় নিপুণের পরিচালনা নজর কেড়েছে। অভিনয়ে মেহজাবীন পরিণত অভিনয় করেছেন। তার স্ক্রিন প্রেজেন্স ছিল বেশি। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন আফরান নিশো। দুটি দম্পতির দুই অবস্থান থেকে বর্ণিত গল্পে আছে নাটকের টাইটেল ‘ফেরার পথ নেই’ নামের সার্থকতা। সব মিথ্যে সত্যি নয় গল্পটি বেড়ে উঠেছে রাহাতের ছোট পরিবারকে ঘিরে। তার ছোট্ট পরিবারে আপন বলতে কেবল তার মা আর স্ত্রী রয়েছে। রাহাতের অসুস্থ মাকে নিয়ে তার স্ত্রী ফারিনের সময় কেটে যায়। দুজনে এক অদ্ভুতুড়ে রিয়েলিটি শোয়ের চরম ভক্ত। রাহাত আবার এই আগ্রহকে অনেকটা বিদ্রƒপের চোখে দেখে। অনীহা দেখায়। একটা সময়, সময়ের চাকা মায়ের চিকিৎসার আর্থিক টানাপড়েনের দরুন রাহাতকে সেই রিয়েলিটি শোয়ের সম্মুখীন হতে হয়। শাফায়েত মনসুর রানা পরিচালিত নাটকটিকে এবারের ঈদে নজরকাড়া কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অভিনয়ের দিক থেকে জন কবির, অপর্ণা ও দিলারা জামান সবাই নিজেদের জায়গা থেকে ভালো করার চেষ্টা করেছেন। শাড়ি এক নিম্ন মধ্যবিত্ত দম্পতির গল্প। করপোরেট অফিসের লিফটম্যান শাহাদাত। লিফটে বসের ফেলা যাওয়া শাড়ির প্যাকেট শাহাদাত নিজের কাছে রাখে পাছে কেউ ভুল করে তুলে নেয়ার ভয়ে। শাড়ি নিয়ে শাহাদাত উপস্থিত হন নিজের বাড়িতে। তার নতুন স্ত্রী নিজের শাড়ি ভেবে পরে ফেলেন। শাহাদাত তার বউয়ের মুখের হাসি কেড়ে নিতে চায়নি। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে তার বসের কথা। দ্বিধাদ্ব›েদ্বর খেলায় শাহাদাত চিন্তার সাগরে ডুবে যায়। শাহাদাতের মানসিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় গল্প। মাসুম শাহরিয়ারের রচনায় নাটকটি নির্মাণ করেছেন হিমেল আশরাফ। অভিনেতাদের মধ্যে এই ঈদে আলোচিত আফরান নিশো সেরাটা দিয়েছেন। তার স্ত্রীর চরিত্রে সাবিলা নূরের অভিনয়ের উন্নতি চোখে পড়েছে সবার। হোম টিউটর একজন টিউটর মানেই কি বাসায় কলিং বেল টিপে নির্দিষ্ট সময় পড়িয়ে টাকা গুনে নেয়া? একজন শিক্ষার্থী পড়ালেখা শেষ করেও লাগাতার ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি নামক সুখপাখির দেখা পাচ্ছে না। বন্ধুদের পরামর্শ মতে হোম টিউশনের যাত্রা শুরু হয়। এতে কেবল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হয় না যুবকটি, বরং সে নিজেও আত্মতৃপ্তিতে মোহিত হয়ে টিউশনের পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে যায় পরিবারের একজন সদস্যের মতো। নাম ভ‚মিকায় আফরান নিশো ভালো অভিনয়ের জন্য দর্শকদের বাহবা পেয়েছেন। তানজিন তিশা সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করেছেন নিশোকে। ছাত্রের ভ‚মিকায় শাওন ভালো। এই ঈদে সবচেয়ে বেশি নাটক বানিয়েছেন মাবরুর রশিদ বান্নাহ। তার কাজগুলোর মধ্যে সেরা কাজ বলে বিবেচিত হয়েছে ‘হোম টিউটর’। নাইট ওয়াচম্যান ইশতিয়াক আহমেদের উপন্যাস ‘সিনেমা হলের গলি’ অবলম্বনে এই নাটকটি নির্মাণ করেছেন ইমেল হক। ওয়াচম্যানের জন্য আস্থাই হলো সবচেয়ে বড় পুঁজি। একজন নাইট ওয়াচম্যানের গল্প ‘নাইট ওয়াচম্যান’। গল্পটি নাইটগার্ড বজলুর। পুরোই পাগলাটে স্বভাবের সহজ-সরল ধাঁচের বজলু মানুষটি বড়ই সাধারণ। এলাকার সব মানুষের সঙ্গে তার সখ্য। কিন্তু তার একান্ত বেদনার সুর তার মুখে ফুটে ওঠে না কখনো। বজলু গার্ডের চরিত্রে আজাদ আবুল কালামের অভিনয় নৈপুণ্য কারোরই নজর এড়িয়ে যায়নি। অনেকটা ট্র?্যাজিক কমেডির ছাঁচে সাজানো হয়েছে সংলাপগুলো। নাটকের শেষার্ধ্ব ছিল বেশ ভিন্ন রকমের। ক্লাইমেক্স ছিল আনপ্রেডিক্টেবল। কিন্তু রিয়েলিস্টিক। ইমেল হকের পরিচালনায় নাটকটি দর্শকদের ভালো লেগেছে। সিনেমা জীবন আশির দশকের শেষ ভাগ। মফস্বলে জায়গা করে নিয়েছে ভিসিআর। সিনেমা দেখে দেখে তরুণ-তরুণীরা স্বপ্নে ভাসেন। সেই স্বপ্ন দেখা দুজনের ভালোবাসার গল্প নির্ভর এই নাটক। জেসমিন ও নিপা দুই বোন অভিনেত্রী সুচিত্রার অনেক বড় ভক্ত। পাড়ার ছেলেরাও জেসমিনকে সুচিত্রা হিসেবেই সম্বোধন করে। রাজ্জাক নামের এক সরল যুবক সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময়, সুচিত্রার মুখপানে চেয়ে ভালোবাসার অতলে হারিয়ে যায়। রাজ্জাক তার মনের গহিনে সৃষ্ট হওয়া ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ চিঠির আলোকে জানায় সুচিত্রারূপী জেসমিনকে। তার মনে গভীর বিশ্বাস সিনেমায় রাজ্জাক শাবানার হলেও এই রাজ্জাক কেবলই সুচিত্রার। নবীন নির্মাতা হাবিব শাকিলের পরিচালনায় নিশো-মেহজাবীন জুটি অভিনীত এই নাটকটি পরিচিত গল্পে উপভোগ্য। ডালিম কুমার মাহমুদ দিদারের পরিচালনা। মজনু নামটি প্রেমিক শোনালেও ভয়াবহ প্রেমবিরোধী লোক। এমনকি তার এলাকার কাউকে প্রেমও করতে দেয় না। নারীবিদ্বেষী স্বভাবের মজনুর এমন আচরণের ভেতরে আছে বেদনার সুর। বাইরেরটা মুখোশে ঢাকা। অন্যদিকে রূপবতী কঙ্কাবতীর নাম করে লর্ড ক্লাইভ নামধারী ব্যক্তি দিনের পর দিন টাকা কামিয়ে যাচ্ছে। যদিও নারীদের প্রতি কোনো প্রকারের মোহ নেই মজনুর। তবুও সমাজকে প্রেমমুক্ত করতে কঙ্কাবতীর শরণাপন্ন হয় মজনু। ডালিম কুমার নাটকের পৃথিবী এ পৃথিবীর মতো দেখতে হলেও এ অন্য এক পৃথিবী। চরিত্রগুলোর পোশাক-আশাকে সেই ভিন্নতা ফুটে উঠেছে। গল্প বলার ভঙ্গির সঙ্গে পরিবেশন ধাঁচ অদ্ভুত হওয়ায় প্রডাকশনটি এবারের ঈদে অনেক কাজের ভিড়ে হারিয়ে যায়নি। এই শহরে কেউ নেই মিথি ঢাকা শহরে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য। আকস্মিকভাবে তার ছিনতাই হয়ে যাওয়ার সময়, সে পথ দিয়ে যাওয়া আদিত্য ছিনতাইকারীদের বাধা দিতে চাইলে তারও একই পরিণতি হয়। আদিত্য মানবতার খাতিরে মিথির সাহায্যে এগিয়ে এলেও, একটা সময় দুজনে প্রেমে পড়ে। স্বাবলম্বী হতে এ শহরে পা রেখেছিল মেয়েটি। এই শহরে তার কেউ নেই, তবে একজনকে পেয়েছিল সে। তাকে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল। তাইতো সে দিন ছুটে যাচ্ছিল তার হাতে হাত রেখে, একসঙ্গে হাঁটবে বলে। কিন্তু সামাজিক অবক্ষয়ের চরম ঘৃণিত রূপ মুহূর্তেই পাল্টে দিল সবকিছু! রোমান্টিক নাটক হলেও ক্লাইমেক্সটা ধাক্কা দিয়েছে দর্শকদের। শিহাব শাহীনের আরেকটি ভালো কাজ। তানজিন তিশা এবং তওসিফ অভিনয়ে ছিলেন দর্শক পছন্দের। নীরার নীল আকাশ তানিম পারভেজের পরিচালনায় ড্রামা থ্রিলার ধাঁচের নাটক ‘নীরার নীল আকাশ’। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘নীরা’। নীরার আশপাশে তো অনেকেই আছে কিন্তু তারপরও নীরা খুব একা। নীরার ঘরে একুরিয়ামে রাখা ইকারাসের মতোই নীরা ডানা ছাড়া উড়ে বেড়ায়। নীরার একাকীত্বের সময়কার নিত্যকার সঙ্গী তার ডায়েরি। কর্মব্যস্ত প্রেমিক নীলের সময় দেয়ার অভাবে ডায়েরির মাধ্যমে তার অলিখিত এক ভার্চুয়াল বন্ধু আকাশের সৃষ্টি হয়। মনস্তাত্তি¡ক ঘরানার নাটক এটি। তাই দর্শকদের বিশেষ মনোযোগ দাবি করে গল্পটি। মূল চরিত্রে মিথিলার অভিনয় চলনসই। মনোজ প্রামাণিকও ভালোই করেছেন। তানিম পারভেজের গল্প বলার ধরন দর্শকদের ভালো লেগেছে। ক্লাইমেক্সও দর্শকদের ভালো লেগেছে। বেশ ভালো একটি নাটক। মুরগি মতিন ঢাকা শহরের এক প্রভাবশালী মুরগি ব্যবসায়ী ও তার নানান পাগলাটে কর্মকাÐ নিয়ে ক্রাইম ফিকশন ধাঁচের হিউমেরাস নাটক। ঢাকা শহরের অন্যতম বড় মুরগি ব্যবসায়ী মতিন। ব্যবসার প্রয়োজনে আন্ডারগ্রাউন্ডে দুচারটা মানুষ ফেলে দেয়াটাকে সে স্বাভাবিকভাবেই নেয়। সমস্যা হয় যখন, পত্রিকায় তার নামের আগে মুরগি যোগ করে মুরগি মতিন বানিয়ে দেয়। আবু শাহেদ ইমন গোল্ডেন এ প্লাসের মতো দারুণ একটি আলোচিত নাটকের পর এবার ক্রাইম কমেডি ধাঁচের নাটক রচনা ও পরিচালনা করেছেন আবু শাহেদ ইমন। মুরগি মতিন চরিত্রে দীপক সুমন চমৎকার অভিনয় করেছেন। কালার গ্রেডিং দর্শকরা খুব পছন্দ করেছেন। আবু শাহেদ ইমন পরিচালনায় অনেকটা হিউমেরাস ভঙ্গিতে পরিবেশিত একটি ভালো কাজ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App