×

জাতীয়

মেয়র পদে জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর ৭০ হাজার ভোটার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০১৮, ০৩:২১ পিএম

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন সামনে রেখে এখন নানান ধরনের হিসেব-নিকেশ চলছে। টেবিলের আলোচনায়, এলাকাভিত্তিক, শ্রেণিগত, আঞ্চলিকতা, বিগত সময়ের পেক্ষাপট এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে দলের সাংগঠনিক অবস্থার বিবেচনায় ভোটের হিসাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো এবং ধানের শীষের আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে সমর্থন দেয়ায় ভোটের সমীকরণ আরো কঠিন হলো। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী সংখ্যালঘু, তরুণ, নারী ও বস্তিবাসী এবং প্রতিদ্ব›দ্বী প্রধান দুই প্রার্থীর দলীয় ও জোটগত ভোটের হিসাব। এই ভোটাররাই এবারের সিসিক নির্বাচনের বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার ভোটার এবারের সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হবে। নৌকার কাণ্ডারি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবং ধানের শীষের আরিফুল হক চৌধুরী তাদের কৌশলগত অবস্থানে সামান্য ভুল করলে জয়-পরাজয়ের সব হিসেব ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। প্রধান দুই মেয়রপ্রার্থীও এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে ভোটারদের কাছে টানতে নানা ধরনের কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার ভোটার এবারের নির্বাচনে ফ্যাক্টর হবে। প্রায় ১০ হাজার তরুণ ভোটার এবার প্রথমবারের মতো তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এই ভোটারা সিসিক নির্বাচনে দুই মেয়রপ্রার্থীর জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। তরুণ প্রজন্মের বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সিলেট সিটির উন্নয়ন চান। বদর উদ্দিন কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র হিসেবে অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। দুজনের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলনামূলকভাবে বিচার করেই ভোট দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার ভোটার সুবীর চৌধুরী বলেন, দুই প্রার্থীর নির্বাচনের ইশতেহার দেখে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেব। সিলেটে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন নারী ভোটার। নারী ভোটাররা সব নির্বাচনে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ইসরাত জাহান জানান, বিগত বছরগুলোতে সিলেটে আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। সিলেটে উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা আছে। তাই এবার একটু বুঝেশুনেই নিজে ভোট দেবেন এবং অন্যদের ভোট দেয়ার জন্য বলবেন। যে কোনো নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটারদের একটু আলাদা করে দেখা হয়। তাদের ভোট নিয়েও হিসেব-নিকেশ চলে। সিলেট সিটিতে প্রায় ২৫ হাজার সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। এদের ভোট মেয়রপ্রার্থীর বিজয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার দায়িত্ব পালনকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শ্মশান নির্মাণসহ এলাকার রাস্তাঘাটের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এই উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে তাদের ভোট নিজের বাক্সে নিতে চাইছেন তিনি। অপরদিকে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানও নতুন নতুন প্রতিশ্রæতি দিয়ে ভোটারদের নিজের পক্ষে নিতে চাইছেন। শেষ মুহূর্তে সংখ্যালঘু ভোট কার বাক্সে বেশি পড়বে তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সিসিক নির্বাচনে আঞ্চলিক ভোটাররাও একটি বড় ফ্যাক্টর। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেটে এসে বসবাসরত ভোটারাই আঞ্চলিক ভোটার হিসেবে পরিচিত। সিলেট সিটিতে টাঙ্গাইল ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার মানুষের বসবাস রয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ঢাকা, বরিশালসহ দেশের অন্য এলাকা থেকে আসা অনেকেই সিলেটে ভোটার হয়েছেন। এদের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ভোটাররা ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা দিয়েছে। দুই মেয়রপ্রার্থীর শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহ অঞ্চলে। তারা এই আঞ্চলিক ভোট নিজের পক্ষে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। উভয় প্রার্থীর স্ত্রীরাও স্বামীর জন্য ভোট চাইতে বাপেরবাড়ির মানুষদের কাছে ছুটছেন। আরিফুল হকের শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহে। কামরানের শ্বশুরবাড়ি টাঙ্গাইলে। যে কোনো নির্বাচনেই সিলেট বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। এবারো এবং হেরফের হয়নি। সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই সিলেটের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। প্রার্থীরা তাদের কর্মকাণ্ড ও আবেগ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়েছেন। এবার এই ৭০ হাজার ভোটার দুই প্রার্থীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৌকার প্রার্থী কামরান যদি এই ভোটে বড় অংশ নিজের পক্ষে নিতে পারেন তবে তিনি অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন। অপরদিকে আরিফুল হক নিতে পারলে তিনিও এগিয়ে থাকবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App