×

মুক্তচিন্তা

স্বর্ণ হেরফেরের ঘটনায় সঠিক তদন্ত হোক

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০১৮, ০৭:৩০ পিএম

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাড়তি সুনাম ছিল এতদিন। কিন্তু একের পর এক কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসায় সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে ক্রমে। স্বর্ণ হেরফেরের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতিতেই এই সংকট বলে অনেকে মনে করছেন। তবে বিষয়টিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। পর্যালোচনা করে কারো বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা স্বর্ণ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়েও জোর আলোচনা হচ্ছে। ব্যাংক খাতের অভিভাবক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি যেন মানুষের আস্থার সংকট সৃষ্টি না হয়, সেজন্য নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। বিষয়টির দ্রুত সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্যকে গণভবনে ডেকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরাও মনে করি, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ এ ঘটনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি মানুষ আস্থা হারালে, অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে না

সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের তৈরি একটি গোপনীয় তদন্ত রিপোর্টের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা স্বর্ণের মান নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভল্টে রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের চাকতি ও আংটি হয়ে গেছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ এখন হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। এরপর থেকে চাঞ্চল্যকর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এদিকে মঙ্গলবার অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের প্রতিবেদন সঠিক নয়। অপরদিকে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের প্রতিবেদন সঠিক। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে যে স্বর্ণ রাখা হয়েছে সেগুলো ঠিক মতোই আছে। কোনো হেরফের হয়নি। এর আগে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। শুরু থেকেই অর্থ চুরির ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রাখঢাক ভাব দেখিয়ে আসছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হলেও তা প্রকাশ পায় এক মাস পর মার্চে। এ নিয়ে তখন যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং অর্থ ফেরত আনার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। নৈতিক দায় নিয়ে তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগও করেছিলেন। রহস্য উদঘাটনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠিত হয়, তারা যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। কিন্তু সরকার সেই প্রতিবেদন আজো প্রকাশ করেনি।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাড়তি সুনাম ছিল এতদিন। কিন্তু একের পর এক কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসায় সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে ক্রমে। অভ্যন্তরীণ সুশাসন ও তদারকির বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে সংস্থাটিতে। স্বর্ণ হেরফেরের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতিতেই এই সংকট বলে অনেকে মনে করছেন। তবে বিষয়টিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। পর্যালোচনা করে কারো বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এই ঘটনার যদি কোনো সুরাহা না হয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হবে, জনমনে সংশয় ও প্রশ্ন আরো বাড়তে থাকবে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App