×

জাতীয়

সিরাজগঞ্জে বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০১৮, ০৪:০৩ পিএম

সিরাজগঞ্জে বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে
বাল্যবিয়ে, ইন্টারনেটের অযৌক্তিক ব্যবহার, পশ্চিমা ধাঁচের জীবনযাপন, মাদক ও উচ্চাভিলাষের কারণে পারিবারিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে, বৃদ্ধি পেয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদ। সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকায় গড়ে প্রতিদিন একটি করে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে, যা পারিবারিক স্থিতিশীলতার জন্য ভয়ানক আতঙ্ক বলে মনে করছেন অনেকে। সামাজিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ জন্য দায়ী বাল্যবিয়ে, অসময়ে বিয়ে, মাদক, ইন্টারনেটের অপব্যবহার, পশ্চিমা ধাঁচের জীবনযাপনের প্রতি ঝুঁকে পড়াসহ ভারতের প্রচারিত কয়েকটি চ্যানেল। এক হিসেবে দেখা গেছে, এ বছর জুন মাসে সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় মোট ২২টি তালাকের নোটিস এসেছে। চলতি জুলাই মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত ১৮টি তালাকের নোটিস পাওয়া গেছে। এসব নোটিস কোনোটি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে, আবার কোনোটি স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার। তালাকের নোটিস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২-১ বছর ঘর সংসার করেছে এমন তালাকের সংখ্যা বেশি। আবার ১৫-২০ বছর সংসার করেছেন, একাধিক সন্তানাদি জন্মও দিয়েছেন এমন দম্পত্তির তালাকের সংখ্যাও কম নয়। ইন্টারনেট, ফেসবুকে আসক্ত হয়ে ঘর-সংসার পরিবারে সময় না দেয়া এবং ফেসবুকে চ্যাটিংয়ে আসক্ত হতে হতে কারো প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে স্বামীর-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি সন্দেহ এবং এখান থেকে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পরিবারের শান্তি বিঘিœত হয়। এ থেকে তালাক দেয়ার ঘটনা ঘটে। অনেকে মনে করেন, ভারতীয় কয়েকটি চ্যানেলে বেপরোয়া পারিবারিক জীবনের কল্প-কাহিনী দিয়ে তৈরি করা সিরিজ নাটকের প্রতি আসক্ত হয়ে নিজেদের জীবনযাপনের সঠিক পথ থেকে সরে পড়ার পর দাম্পত্য কলহের মাধ্যমেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাকের ঘটনা ঘটছে। অনেকে মনে করছেন বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। কম বয়সে বিয়ে হওয়ার পর ওই মেয়ে শ্বশুরালয়ের পরিবেশে মানিয়ে নিতে বাধ্য হয়। অল্প বয়সে বিয়ের নানা রকম কুফল থেকেও দাম্পত্য কলহের পর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে চলেছে। এ ছাড়া মাদক একটি বড় সামাজিক-পারিবারিক সমস্যা তৈরি করেছে। মাদকসেবীর কারণে অসংখ্য নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মাদকসেবী স্বামীর নির্যাতনের কারণে স্ত্রী সংসারে টিকে থাকতে পারছেন না। মাদকসেবীর চাহিদা মেটাতে গিয়ে সংসারে নারীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে অহরহ। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কমিশনার মালসাপাড়ার মো. হানিফ জানিয়েছেন, বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য প্রধান তিন কারণ মাদক, বাল্যবিয়ে ও ফেসবুকে আসক্ত। তিনি মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে এবং বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসনের আরো শক্ত ভ‚মিকা আশা করেন। শহীদ মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হাসানুজ্জামান রঞ্জু বলেন, হাতের মোবাইলটির যথাযথ ব্যবহার না করায় পারিবারিক কলহ থেকে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে এবং সেখান থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, বাবা-মায়ের প্রতি যে সন্তান দায়িত্ববোধ পালন করে না সে স্ত্রী-সন্তানের প্রতিও দায়িত্ব পালন করতে পারে না। আমাদের শিক্ষায় অনেক ত্রুটি রয়েছে। শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক জ্ঞান অর্জন কম হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করে নৈতিক জ্ঞানের অধিকারী হলে সে ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ ও পারিবারিক কলহ হ্রাস পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App