×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগের একাধিক একক প্রার্থী বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০১৮, ০৪:৩৩ পিএম

আওয়ামী লীগের একাধিক একক প্রার্থী বিএনপির
পাহাড় অরণ্যে ঘেরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সংসদীয় আসন। জেলার ৯টি উপজেলার বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসন। এ আসনে মোট ভোটার প্রায় ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৮ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) মধ্যেই মূলত ভোটযুদ্ধ হয়ে থাকে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। চলছে নীরবে নানা সমীকরণের রাজনৈতিক সমঝোতাও। অন্যান্য এলাকার তুলনায় পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার আসনটা ভিন্ন। কারণ পাহাড়ে বড় ফ্যাক্টর আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বিশেষ করে পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রভাব বেশি। বিগত সময়ে স্থানীয় ইউপি ও উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেশির ভাগ পাহাড়ি সংগঠন সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তবে স্থানীয় নির্বাচনে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোকে পাহাড়ি ভোটাররা সমর্থন দিলেও সংসদ নির্বাচনে তারা জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রতীককেই বেছে নেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্তে্বও আওয়ামী লীগ প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন লাগবে বলে মনে করেন কেউ কেউ। নব্বইয়ের পট পরিবর্তনের পর পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চারটিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন। কেবল ২০০১ সালে জয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী। খাগড়াছড়ি জেলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের চরম কোন্দলের মধ্যেই চলে রাজনৈতিক কার্যক্রম। এক পক্ষের নেতৃত্বে বর্তমান এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা আরেক পক্ষের পৌর মেয়র রফিকুল আলম। রফিকুল আলম পৌর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০১৫ সালে পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। পৌরসভা নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। শানে আলম বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় গ্রুপিংয়ের সূত্রপাত। তা ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক দিদারুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক এস এম সফিসহ সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রার্থী পরাজিত হওয়ার পর দল থেকে জাহেদুল আলমকে বহিষ্কার করলে কোন্দল ছড়িয়ে পড়ে তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে। দুগ্রæপ একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে আওয়ামী লীগের দুগ্রুপ ভিন্ন ভিন্নভাবে দলীয় কর্মসূচিগুলো পালন করে। হয়ে যায় আওয়ামী লীগের দুটি কার্যালয়। এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নেতৃত্বে জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে এবং রফিকুল আলমের নেতৃতে কলেজ রোডে অবস্থিত কার্যালয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করা হয়। কেন্দ্র বারবার দুগ্রুপকে এক করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের সম্পর্কে বরফ গলতে শুরু করেছে। গত রমজানে দলীয় ইফতার পার্টিতে সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার আমন্ত্রণে মেয়র রফিকুল ইসলাম অংশ নিয়েছেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের মেয়ের বিয়ের দাওয়াতে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি অংশ নিয়েছেন। এতে করে দুগ্রুপ কাছে আসতে শুরু করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ শুভাকাক্সক্ষীরা দুগ্রুপকে মিলে রাজনীতির মাঠে দেখতে চান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য মেয়র গ্রুপের যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা মনোনয়ন প্রত্যাশী। বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বিভিন্ন জনসভায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করব। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। নৌকার পক্ষে থাকব। সাবেক সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব, এর কোনো বিকল্প নেই। এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপিতে দুগ্রুপে বিরোধ থাকলেও তা দৃশ্যমান নয়। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়ার নির্বাচিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। তত্ত্ববধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতি মামলায় ওয়াদুদ ভূইয়ার সাজা হলে ২০০৮ সালে সমীরণ দেওয়ানকে বিএনপি মনোনয়ন দেয়। সে সময় ওয়াদুদ ভূইয়ার ভাতিজা জেলা যুবদলের সহসভাপতি দাউদুল ইসলাম ভূইয়া বিদ্রোহী হলে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়। বিএনপির গ্রুপেও বর্তমানে ওয়াদুদ ভূইয়ার নেতৃত্বে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যায়। কিন্তু সমীরণ দেওয়ান গ্রুপকে দলের কর্মসূচিতে তেমন দেখা যায় না। তবে আগামী নির্বাচনে ওয়াদুদ ভূইয়াই বিএনপির মনোনয়ন পাবেন এমন প্রত্যাশা সাধারণ নেতাকর্মীদের। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য এলাকায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) আত্মপ্রকাশ ও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। ফলে দলটি প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় সাংগঠনিকভাবে ব্যাপক প্রচার লাভ করে। গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির প্রার্থী উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা ও প্রসীত বিকাশ খীসা প্রায় ৬০ হাজারের বেশি ভোট পান। এ দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা পরে জানানো হবে বলে ইউপিডিএফের তথ্য ও প্রচার বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা জানিয়েছেন। খাগড়াছড়িতে আরেক আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) মৃনাল কান্তি ত্রিপুরা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১০ হাজার ৬২৬ ভোট পান। আগামী নির্বাচনে এ দল অংশ নেবে কি না এখনো স্পষ্ট নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App