×

আন্তর্জাতিক

তুরস্কে জরুরি পরিস্থিতির অবসান, চোখ রাঙাচ্ছে নতুন আইন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০১৮, ০৬:৪৯ পিএম

তুরস্কে জরুরি পরিস্থিতির অবসান, চোখ রাঙাচ্ছে নতুন আইন
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর ২০১৬ সালে তুরস্কে জরুরি পরিস্থিতি জারি করা হয়। দুই বছর পর অবশেষে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হলো। তবে সমালোচকরা বলছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন চালুর ফলে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের এখনো বিরুদ্ধমত দমনের ক্ষমতা রয়েছে। যে কারণে তুরস্কে জরুরি পরিস্থিতি জারি করা হয় ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই ব্যর্থ অভ্যত্থানের পর তুরস্কের সরকার দাবি করে, বিদ্রোহীদের পেছনে মুসলিম ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের ইন্ধন রয়েছে। সেই অভ্যত্থানচেষ্টাকে জঙ্গিবাদী প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করেন এরদোয়ান। ওই সময় তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে একের পর এক ধরপাকড় শুরু হয় বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের। এরদোয়ান সরকারের ধরপাকড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে সাতবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়। আটকদের সংখ্যা জরুরি অবস্থার মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ৭০ হাজারের বেশি মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদরা রয়েছেন সেই তালিকায়। এক লাখ ৫৫ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। প্রথমদিকে কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহমূলকভাবে আটক করে ৩০ দিন রাখা হতো। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনার মুখে সেই সময়সীমা ১৪ দিনে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়। বহিষ্কারের সংখ্যা তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক লাখ ২১ হাজার তিনশ ১১ জনকে সরকারি চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে সাত হাজার জনকে। পাঁচ হাজার সাতশ কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া গুলেনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে স্কুল এবং বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশটির বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে রীতিমতো খড়গহস্ত হয়েছেন এরদোয়ান। অন্তত একশ জন মেয়রকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ৭০টি সংবাদপত্র, ২০টি ম্যাগাজিন, ৩৪টি রেডিও স্টেশন, ৩০টি প্রকাশনা সংস্থা এবং ৩৩টি টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার বিরোধী প্রোপাগান্ডা চালানো এবং জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সহায়তার অভিযোগে সাংবাদিকদের আটকের ঘটনাও ঘটেছে। তুরস্কের সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের দাবি, একশ ৪৩ জন সাংবাদিক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের লেখনি চালিয়ে যেতে পারেন না সাংবাদিকরা। তাহলে প্রেসিডেন্টকে কটূক্তির অভিযোগ তোলা হয়। জরুরি অবস্থা না থাকায় যা হতে পারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এরদোয়ান যেহেতু সে দেশের প্রেসিডেন্ট, সে কারণে জারি করা ডিক্রি দ্বারা তার শাসন অব্যাহত থাকবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি আগের মতোই রাষ্ট্রের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেন। জরুরি অবস্থার অাদলে প্রেসিডেন্টের আদেশগুলো আইনত মানা বাধ্যতামূলক এবং অনতিবিলম্বে সেগুলো কার্যকর করা হবে। সরকার এখনো সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। সে কারণে বিক্ষোভ কিংবা যে কোনো ধরনের আন্দোলন ঠেকানোর জন্য সন্ত্রাসের অভিযোগ যে সরকার ভালোভাবেই কাজে লাগাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে যে কাউকে আটকে দেওয়া যাবে। সে কারণে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হলেও পরিস্থিতি খুব একটা পাল্টাবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তার ব্যবস্থাও করে ফেলেছেন এরদোয়ান। কারণ, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে তুরস্ক নিরাপত্তা ক্ষেত্রে হুমকির মুখে। বিরোধীদের ওপর এই আইন জরুরি অবস্থার মতো করেই ব্যবহার করার আশঙ্কা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App