×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যস্ত গণসংযোগে, বিএনপি পর্যবেক্ষণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০১৮, ০১:৫৮ পিএম

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যস্ত গণসংযোগে, বিএনপি পর্যবেক্ষণে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আ.লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যস্ত গণসংযোগে, আর বিএনপি নেতারা ব্যস্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে। তবে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছেন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নতুন নতুন মুখ নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করছেন। তারা জেলা শহর, উপজেলা, হাটবাজারসহ গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বড় বড় গেট, বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দোয়া চাচ্ছেন। আবার অনেকে হেলিকপ্টারে এসে মোটর শোভাযাত্রা করে নির্বাচনী এলাকায় শোডাউন করছেন। এসব দৌড়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের ১৩ জন সম্ভাব্য প্রার্থী এ আসনে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এর মধ্যে নবাগতদের সংখ্যাই বেশি। এতে প্রবীণ নেতারা রয়েছেন চাপের মধ্যে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপির জেলা কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করছেন নেতারা। কেউ কেউ এলাকায় নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে দলের পরীক্ষিত কাণ্ডারি সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুনই পেতে পারেন দলীয় টিকেট। আর বিএনপি থেকে শামসুজ্জামান দুদু, শরিফুজ্জামান শরীফ, কর্নেল (অব.) কামরুজ্জামান ও অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের নামই আলোচনায় রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদরের ৫টি ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসন। বর্তমানে এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৮৪০ ও নারী ২ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ জন। নির্বাচনের এখনো প্রায় ৫ মাস বাকি। তবে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে হাফ ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে জাতীয় সংসদের হুইপ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুন, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিবিসিআইর পরিচালক দীলিপ কুমার আগরওয়ালা, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদিন খোকন, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের দপ্তর সম্পাদক নাজমুল ইসলাম পানু ও জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী। ১৯৭৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দুর্গে আঘাত হানে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতা অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে পর্যুদস্ত করে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনেও তিনিই নির্বাচিত হন। এরপর দলের মধ্যে বিভেদ তীব্র আকার ধারণ করে। জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রামপর্যায়ে দলটির নেতাকর্মীরা দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েন। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলী আজগর টগর এমপি, দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ ও পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু। অপর ধারার নেতৃত্বে আছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুন, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু ও সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়াদ্দার টোটন। তবে গত কয়েক মাস ধরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আবেদিন খোকন থাকছেন সোলায়মান হকের কাছাকাছি। ইতোপূর্বে সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুন একক প্রার্থী হলেও এবার গ্রুপিংয়ের কারণে মনোনয়ন পেতে তাকে অনেক বেগ পেতে হবে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দলীয় টিকেট পেতে তাকে অন্তত ৫ শক্ত প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয় সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ দল থেকে একাধিক নেতাকর্মী মনোনয়ন চাইতেই পারেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই আমরা সবাই কাজ করব। আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। সে কারণে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। এ আসনে মনোনয়ন পেতে আরো যারা দৌড়ঝাঁপ করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীলিপ কুমার আগরওয়ালা। তারা দেবী ফাউন্ডেশন গঠন করে এর মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, প্রেসক্লাবসহ নানা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দিচ্ছেন। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সামসুল আবেদীন খোকন আগামী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এর আগে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী প্রতি সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গায় রোগী দেখার পাশাপাশি নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদুল হক বিশ্বাস কেন্দ্রের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে মাঠে নেমেছেন বলে দাবি তার অনুসারীদের। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিনই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম পানু দলীয় মনোনয়ন পেতে চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যতটা নড়েচড়ে বসেছে ঠিক সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। কারণ একটাই দলের মধ্যে তীব্র বিরোধ। বিগত ১০ বছরে জেলা বিএনপি ৩-৪টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সব গ্রুপই নামকাওয়াস্তে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করে থাকেন। একাধিক গ্রুপ থাকায় সরকারবিরোধী আন্দোলনও তারা জমাতে পারছেন না। ৪ বছর ধরে চলা আহবায়ক কমিটি আজো পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপহার দিতে পারেনি। কিছু দিন আগে ছাত্রদল ও যুবদলের জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কমিটিতে পরীক্ষিত অনেক নেতাকর্মী স্থান না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ দিকে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কয়েকজন নেতা নড়েচড়ে বসেছেন। আগামীতে দেশে কি হতে যাচ্ছে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিএনপি নেতারা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে যারা নির্বাচন করতে চান তাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য উদীয়মান নেতা শরিফুজ্জামান শরীফ, জেলা আহবায়ক কমিটির আরেক সদস্য বিডিআর বিদ্রোহে প্রাণে বেঁচে যাওয়া লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক যুগ্ম সচিব ড. এম এ সবুর ও জেলা বিএনপির আহবায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয় বিএনপি নেতা সাবেক এমপি শামসুজ্জামান দুদুর সঙ্গে। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বিগত ১০ বছরে যা উন্নয়ন হয়েছে তা একটি পরিবার ও দলের। জেলা বিএনপির আহবায়ক অহিদুল ইসলাম নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সোলায়মান হকের কাছে পরাজিত হন। নানা কারণে দলে তিনি আলোচিত। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনিও দলের একজন শক্তিশালী প্রার্থী। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, মনোনয়নের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। সেই জন্য মাঠে কাজ শুরু করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App