×

মুক্তচিন্তা

সেবার নামে এই নির্মমতার দায়ভার কে নেবে?

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০১৮, ০৭:৩৮ পিএম

চিকিৎসার মতো মৌলিক সেবায় এ রকম নৈরাজ্য চলতে দেয়া যায় না। ভুল চিকিৎসায় ২০ জন সাধারণ মানুষ চোখ হারিয়েছেন এটা প্রমাণিত। এই অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক সমাজ আন্তরিক হবেন- এমন প্রত্যাশা রাখছি।

চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু জীবন রক্ষার শেষ এই আশ্রয়স্থলের ওপর ভরসা রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। ভুয়া চিকিৎসক, ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অনেকেরই অঙ্গ হারাচ্ছেন আবার অনেকের প্রাণনাশও হচ্ছে। দেশের এমন চিকিৎসকদের নৈতিকতার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আদালত। আদালত বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে ২০ জনের চোখ হারানোর ঘটনায় তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট প্রমাণ করে দেশে ডাক্তারদের নৈতিকতার মান কোথায়। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক রুলের শুনানির সময় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। হাইকোর্টের এই বক্তব্যের সঙ্গে আমরাও একমত পোষণ করছি। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু, ক্ষতি বা সেবার নামে নির্মমতা এ সব দায়ভার চিকিৎসকরা এড়াতে পারে না।

গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরে ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। সেখানে অপারেশনের পরই তাদের চোখে ইনফেকশন হয়। এর মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্টের পক্ষ থেকে ১২ মার্চ বাকি রোগীদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ততদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে যে, ২০ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়। এই সংবাদ দেখে আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১ এপ্রিল রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি শেষে ওই হেলথ সেন্টারকে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বর্তমানে সে রুলের শুনানি চলছে। জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত রোগীরা সবাই দরিদ্র। কেউ স্বজনের কাছে ধারদেনা করে, কেউবা এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে ভর্তি হয়েছিলেন হেলথ সেন্টারে। কিন্তু হিতেবিপরীত হলো। তবে ঢাকার হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা ব্যয় দিয়েই নিজেদের দায় সেরেছে হেলথ সেন্টারটি। যদিও সংশ্লিষ্টদের বিচার ও চিরদিনের জন্য অন্ধত্বের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এই দাবি যৌক্তিক। দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। অস্ত্রোপচারের পর পেটের ভিতর ছুরি বা গজ রেখেই সেলাই দেয়া, অসুস্থ অঙ্গের পরিবর্তে সুস্থ অঙ্গ কেটে ফেলা, দাঁত তোলার নামে শিক্ষানবিশ ডাক্তাররা হাত পাকাচ্ছেন, অনেক হাসপাতালে ডাক্তারের পরিবর্তে ওয়ার্ড বয়রাই আবার সর্বেসর্বা। জটিল কঠিন অপারেশন করতেও দ্বিধা করছেন না তারা। প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই দেখা যায় দেশের কোথাও না কোথাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা ডাক্তারের অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার খবর। দেশের মফস্বল এবং গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কত মানুষ যে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করছে তার ইয়ত্তা নেই। চিকিৎসার মতো মৌলিক সেবায় এ রকম নৈরাজ্য চলতে দেয়া যায় না। ভুল চিকিৎসায় ২০ জন সাধারণ মানুষ চোখ হারিয়েছেন এটা প্রমাণিত। এই অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক সমাজ আন্তরিক হবেন- এমন প্রত্যাশা রাখছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App