×

জাতীয়

ধানের শীষের ঘাঁটিতে নৌকার পালে হাওয়া!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০১৮, ০১:২৮ পিএম

নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে বরিশালে। ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত এ নগরীতে এখন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে নৌকা। আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে নৌকার বিজয় শুধু সময়ের ব্যাপার, এমনটাই এখন ভোটারদের মুখে মুখে। বিএনপির দুর্গে আওয়ামী লীগের হানা কেমন করে? এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ রয়েছে ভোটারদের কাছে। বিএনপি ক্ষমতায় নেই। আগামীতে বিএনপি আসবে- এমন লক্ষণও নেই। বিএনপি দলীয় মেয়র থাকায় উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয় উন্নয়নের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিই ভোটারদের আস্থা। টানা ১০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় নতুন প্রজন্মের ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। নগরীর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য বজায় থাকায় ছাত্রলীগে যোগদান বেড়েছে। তরুণরা ক্ষমতার প্রতি আগ্রহী- স্বাভাবিক এ কারণে অধিকাংশ নিয়মিত ছাত্ররাই ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত হয়েছে।বিপরীত চিত্র জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে। তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই বললেই চলে। যা-ও রয়েছে তা ব্যক্তিকেন্দ্রিক গ্রুপে পরিণত হয়েছে। নিয়মিত ছাত্ররা এ সংগঠনের নেতৃত্বে নেই। ছাত্রনেতা নামের যারা রয়েছেন তারা অনেকেই বয়স্ক, বিবাহিত এমনকি সন্তানের জনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের যাতায়াত নেই। বয়সের পার্থক্য ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নিয়মিত ছাত্ররা ছাত্রদলে তেমন একটা ভিড়ছে না। এ কারণে এবারের সিটি ভোটে যোগ হওয়া ৩০ হাজার নতুন ভোটারের অধিকাংশই নৌকার ভোটার বলে তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া নৌকার মাঝি সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহও তুলনামূলকভাবে বয়সের দিক থেকে তরুণ। নতুন ভোটাররা এ কারণে তার দিকে বেশি আকৃষ্ট। পাশাপাশি নতুন ভোটারদের সার্বক্ষণিক পরিচর্যাও করছেন তিনি। অন্যদিকে ধানের শীষের ধারক মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে নতুন ভোটারদের বয়সের বিরাট ফারাক। তার সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই বললেই চলে। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় রাজধানীতে থাকতে হয় তাকে। বরিশালের নতুন ভোটাররা তার নাগাল পান না। তাদের প্রতি তেমন আগ্রহীও নন সরোয়ার। আগামী ৩০ জুলাই নতুন ভোটাররা ফলাফলে নিয়ামক শক্তি হিসেবে হাজির হতে পারেন বলে নির্বাচন বিশ্লেষকদের ধারণা। এ ছাড়া ভোটাররা চান বরিশালের উন্নয়ন, যা মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে আপাতত সম্ভব নয় বলে ভোটারদের বিশ্বাস। কারণ তার দল বিএনপি টানা ১২ বছর রয়েছে ক্ষমতার বলয়ের বাইরে। গত ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দিয়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন নগরবাসী। বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল গত ৫ বছরে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। নগরীর সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগও ছিল না তার। তার সময়ে বিদ্যমান সমস্যা দিন দিন আরো বেড়েছে। অনেকটা দায়সারাভাবেই ৫ বছর পাড়ি দিয়েছেন কামাল। এমনকি সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন বরাদ্দের বেশিরভাগই ভাগাভাগির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উন্নয়নের নামে গৃহীত বড় প্রকল্পগুলোর ঠিকাদারি বাণিজ্যের নেপথ্যে তার ছেলে কামরুল হাসান রুপনের সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে, যা শুধু কামালকেই নয়, ডুবিয়েছে বিএনপিকেও। এ উপলব্ধি থেকে ভোটাররা তাদের মত পরিবর্তন করেছেন। ভোটাররা চান নগরীর উন্নয়ন, সমস্যার সমাধান, যা সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষেই সম্ভব। যুক্তি হিসেবে তারা তুলে ধরেছেন, নৌকার প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর নাতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে। বঙ্গবন্ধুর রক্ত তার শরীরে বহমান। সাদিকের পিতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সাবেক মন্ত্রী ও এমপি। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। তার আত্মীয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বরিশাল সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় নগরীর উন্নয়নে বরাদ্দ আনতে সাদিককে বেগ পেতে হবে না। বরং উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে বরিশাল নগরী। অধিকন্তু তার মাথার ওপর রয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাদিককে ভোট দিলে প্রধানমন্ত্রীকে ভোট দেয়া হবে এ হিসাবও রয়েছে ভোটারদের। এসব কারণেই ভোটাররা উন্নয়নের স্বার্থে দলের চেয়ে প্রার্থীকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যার ফসল হয়তো ঘরে উঠবে সাদিকের। এমন সমীকরণে ধানের শীষের ঘাঁটিতে এবার নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে। যার চ‚ড়ান্ত রূপ দেখা যাবে ৩০ জুলাইয়ের ফলাফলে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এস এম ইকবাল ভোরের কাগজকে বলেন, বরিশালের মানুষ উন্নয়ন চায়, শান্তি চায়- এ দুটো বিষয়কে মাথায় রেখেই তারা ভোট দেবে বলে আমার বিশ্বাস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App