×

মুক্তচিন্তা

চাল নিয়ে ‘চালবাজি’ বন্ধ হোক

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৮, ০৭:৫৩ পিএম

কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বেশি ভোগান্তির মুখে পড়ে দেশের নিম্ন, মধ্যম ও সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে যাদের দিন যায়- নুন আনতে পান্তা ফুরাতে। সে সব দরিদ্র, নিম্ন আয়ের লাখো মানুষ এখন অনেকটা ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থায় পতিত। গত কয়েকদিন ধরে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সব মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। চালে দাম বৃদ্ধি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। হঠাৎ করেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালের দাম বেড়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। সে হিসাবে ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। মূলত চালের মজুদ, সরবরাহ পর্যাপ্ত হলেও রহস্যজনক কারণে চালের দাম বাড়িয়েছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে পরিচালিত সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের অনুসন্ধানেও এ রকম চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তারা এও বলেছে, চাল নিয়ে অসাধু চক্র ‘চালবাজি’ করছে।

সরকারি হিসাবে দেশে চালের ঘাটতি ১০ লাখ টন, আমদানি হয়েছে প্রায় ৬-৭ গুণ বেশি, ৮২ লাখ টন। সরকারি হিসাবে গত বছরের বন্যায় প্রায় ১০ লাখ টন চালের উৎপাদন কম হয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরে সব মিলিয়ে ৩৭ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। আরো ৪৫ লাখ টন রয়েছে আমদানির প্রক্রিয়ায়। ২০১৭ সালের এপ্রিলে আকস্মিক পাহাড়ি ঢল-বন্যায় সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওরে ফসলহানি ঘটে। প্রকৃতির এ রোষে এ সব অঞ্চলে চাল উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। মৌলভীবাজারসহ আরো দুই-তিনটি জেলায় অকাল বন্যা-ঢলে দুই লাখ টনের মতো চাল উৎপাদন কম হয়েছে। কয়েকটি জেলায় এ বছর বোরো ধান উৎপাদন ব্লাস্ট রোগের কারণে কম হয়েছে। আবার কোনো কোনো জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি হয়েছে। যে দেশে এক বছরে প্রায় চার কোটি টন চাল, গম ও ভুট্টা উৎপন্ন হয়, সে দেশে এই ঘাটতি চালের বাজারকে অস্থির করে তুলতে পারে না। এমনি অবস্থায় বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখে দ্রুত অসাধু চাল সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে এবং তাদের গুদামে শিগগিরই অভিযানে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অসাধু চক্র চালের অবৈধ মজুদ গড়ে তোলা এবং খোলা বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আশা করা হচ্ছে, এ বছর চালের উৎপাদন চার কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে। অথচ চালের দাম বাড়ছে। দেশের কৃষক যাতে তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পায় সে জন্য ৩৮ টাকা কেজি দরে মোটা চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কৃষকরা সরকার নির্ধারিত ৩৮ টাকা কেজি দরেই সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করছেন। মফস্বলের বাজারগুলোয় মোটা চালের দর ৩৮ টাকার বেশি নয়। এ ছাড়াও সেখানে সব ধরনের চিকন চালের কেজি ৪৮ থেকে ৪৯ টাকার বেশি নয়। অথচ রাজধানীতে চালের বাজারের চিত্র মফস্বলের বাজারের তুলনায় পুরোপুরি বিপরীত। রাজধানীতে প্রতি কেজি চিকন (মিনিকেট) চালের দর এখন সর্বনিম্ন ৬২ থেকে ৬৬ টাকা। এ ছাড়াও ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে নাজির শাইল চাল।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকার সব সময় বাজার নিয়ন্ত্রণে মোটা চালের ওপর গুরুত্ব দেয়। চিকন চালের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারকে তেমন ভাবিয়ে তোলে না। এই সুযোগে অসৎ ব্যবসায়ীরা রাজধানীতেই সব সময় চালের দাম বাড়ায়। এ ছাড়াও রাজধানীতে মোটা চালের তুলনায় চিকন চালের বিক্রি বেশি। তাই দাম বৃদ্ধির পর তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়। এক ধরনের হুলস্থূল শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে দেশের চালের বাজারে কোনো অস্থিরতা নেই। গ্রামগঞ্জে মোটা-সরু সব ধরনের চালের দামই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বিশ্ববাজারে চালের বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে চালের দাম প্রতি টনে ৩৫ থেকে ৪০ ডলার কমে গেছে। বিশ্ববাজারে প্রতি টন চালের দাম এখন ৪০০ ডলারের নিচে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দেশে বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় দুই কোটি টন। আমন উৎপাদন হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টন। চলতি মাস পর্যন্ত এক বছরে আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ টন চাল। সোয়া তিন কোটি টন চাহিদার বিপরীতে দেশে বছরজুড়ে চাল ছিল প্রায় চার কোটি টন। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকার পরও দাম না কমে কেন বাড়ছে, তার কোনো সদুত্তর কারো কাছে নেই। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সরকার দেশের নিম্ন, মধ্যম শ্রেণিসহ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মোতাহার হোসেন : সাংবাদিক ও লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App