×

জাতীয়

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৮, ০২:৩৮ পিএম

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন
ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ব্রহ্মপুত্র নদে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের মুখে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১৫টি বাড়িসহ অসংখ্য গাছপালা। হুমকির মুখে পড়েছে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ভাঙনকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধসহ ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। সরেজমিন গত শনিবার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামালপুর শহরের হরিপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ঘূর্ণি স্রোতে ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে হাশেম আলী, আজিজুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, মোফাজ্জল, মোন্তাজ আলী ও রহিজল মিয়াসহ ১৫ জনের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে গাছপালা কেটে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন নদী পাড়ের মানুষ। নদী ভাঙনের শিকার হরিপুর গ্রামের রেনু বেগম (৬৫) বলেন, স্বামী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। ভিক্ষা করে কোনোমতে জীবন চালাই। দুদিন আগে একমাত্র মাথাগোঁজার ঠাঁই ছাপড়া ঘরটি নদীতে চলে গেছে। অন্যের বাড়িতে গাছের নিচে অসুস্থ স্বামীসহ ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাত কাটাচ্ছি। এখন কি করমু, চোখেমুখে অন্ধকার দেখতেছি। একই গ্রামের রিকশা চালক রহেজ আলী (৫০) বলেন, ‘আশা সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুই শতাংশ জমি কিনে টিনের দু’চালা ঘর তুলেছিলাম। জমিসহ ঘরটি নদীতে চলে গেছে। ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখন জমি কিনে ঘর বানাবো কীভাবে? লোন পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় আছি। সরকার আমাগো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না নিলে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাইতে হবো।’ গ্রামবাসীরা জানান, প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ছনকান্দা থেকে হরিপুর পর্যন্ত নদের পাড়ে ২০/২৫টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙনের তীব্রতা। স্থানীয় কাউন্সিলর ফজলুল হক জানান, যেভাবে নদী ভাঙছে আর ১৫ ফুটের মধ্যে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো মুহূর্তে মহাসড়কটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী বলেন, নদীর গতি প্রবাহ ডান দিকে মোড় নিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর গভীরতা বেড়ে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপর মহলে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। জামালপুর বালু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হবিবুর রহমান ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজারে প্রভাব পড়েনি, প্রকৃতিকভাবে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বলেছেন, একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্দ করলেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App