×

মুক্তচিন্তা

অভিনন্দন ফ্রান্স : ঢেউ লাগুক দেশের ফুটবলেও

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৮, ০৮:২৮ পিএম

বিশ্বকাপের উত্তেজনা প্রমাণ করে যে, দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা, ফুটবল নিয়ে দেশবাসীর আগ্রহ এতটুকু ম্লান হয়নি। বিশ্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেশিদূর যেতে না পারলেও নিজেরা ফুটবলের আনন্দ উপভোগ করার জন্য দেশের ফুটবলের প্রসার ও মানোন্নয়নে সচেষ্ট হতে পারি। বিশ্বকাপের আনন্দ-উত্তেজনার রেশ ধরে আমরা নিশ্চয়ই চাই দেশের ফুটবলের মানোন্নয়নে দৃষ্টি দেয়া হোক, এ দেশের ফুটবলের সোনালি দিন আবারো ফিরে আসুক।

আবারো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো ফ্রান্স। রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বার ফুটবল বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল ফ্রান্স। অভিনন্দন ফ্রান্স। ফরাসি বিপ্লবের ঢেউ ক্রোয়োটদের হৃদয় ভেঙে আগামী চার বছরের জন্য ফুটবলের ক্যানভাসটা করে দিল নীল। মস্কোর লুজনিয়াকি স্টেডিয়ামে রবিবাসরীয় রাতে ফাইনালের মধ্য দিয়ে দুনিয়া কাঁপানো ফুটবলের ভাঙলো মিলনমেলা। গত এক মাস ধরে বিশ্বকাপ জ্বরে কম্পমান ছিল গোটা বিশ্ব, ফুটবল তার নান্দনিকতায়, রহস্যময়তায়, উত্তেজনায় মাতিয়ে রেখেছিল বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলভক্ত শিশু-কিশোর-যুবা-বৃদ্ধকে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনকেও প্রভাবান্বিত করেছিল ফুটবল। আরো অভিনন্দন জানাচ্ছি রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া, স্বাগতিক রাশিয়াসহ অংশগ্রহণকারী সব দলকে যারা তাদের অসামান্য নৈপুণ্য কুশলতায় আমাদের বিমোহিত রেখেছে। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতির কারণেও খেলা, খেলার খুঁটিনাটি তথ্য এবার বিশ্বজুড়ে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছে, যা খেলার উন্মাদনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। গত ১৪ জুন মস্কোর লুজনিয়াকিতে বিশ্বকাপের বোধনের দিনে ৩২ দলের ৭৩৬ ফুটবলারের সবার চোখেই ছিল শিরোপা-স্বপ্ন। একে একে সেই স্বপ্নের মশালবাহকের সংখ্যাটা কমেছে। তবে অঘটনপ্রসবা এই বিশ্বকাপ সবার স্মৃতিতেই অমলিন থাকবে। এই আসরটা মনে রাখার মতো উপলক্ষের অভাব নেই। হট ফেভারিট ব্রাজিলের হেক্সা অভিযান শেষ আটে থেমে গেলেও মাঠে দলটির প্রাণভোমরা নেইমারের নাটুকেপনা বিতর্কের পাশাপাশি বিনোদনের এক নতুন অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। ফ্রান্সের তরুণ তুর্কি কিলিয়ান এমবাপ্পের গতির ঝড় যেমন শিহরণ জাগিয়েছে, ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ড জেনারেল লুকা মডরিচ তেমনি বুড়ো হাড়ের ভেলকিতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির গ্রুপপর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার ব্যাপারটি একপাশে সরিয়ে রাখলে এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে লাতিন দলগুলো। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গ্রুপপর্ব পেরোনো আর্জেন্টিনা কাটা পড়ে দ্বিতীয় রাউন্ডেই। কলম্বিয়াও পেরোতে পারেনি শেষ ষোলোর সীমানা। ব্রাজিল ও উরুগুয়ের বিদায়ঘণ্টা বাজে শেষ আটে। ফলে সেমির আগেই বিশ্বকাপ থেকে লাতিন নিশানা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। হাসি-কান্নায় দোলানো এবারের বিশ্বকাপের আসর। আরো চারটি বছরের অপেক্ষা কাতারে আগামী বিশ্ব আসরের জন্য।

একটি বিষয় এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, ফুটবলের বিশ্ব আসরে এশিয়া মহাদেশের অবস্থানই দুর্বল, এর মধ্যে আরো দুর্বল এ উপমহাদেশ, যার মধ্যে দুর্বলতর আমরা। তবে আমাদের দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা দীর্ঘকালের। হালে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পেলেও এক সময় ফুটবলই ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা। চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডানের খেলা নিয়ে গোটা দেশ একসময় উত্তেজনায় কাঁপতো। সেকালের কয়েকজন তারকা খেলোয়াড় এখনো কিংবদন্তির আসন নিয়ে আমাদের মাঝে আছেন। কিন্তু ঘরোয়া ফুটবলের সেই সুদিন কেমন করে হারিয়ে গেছে। দেশের ফুটবলের আকাশ এখন কালো অন্ধকার। তবে বিশ্বকাপের উত্তেজনা প্রমাণ করে যে দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা, ফুটবল নিয়ে দেশবাসীর আগ্রহ এতটুকু ম্লান হয়নি। বিশ্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেশিদূর যেতে না পারলেও নিজেরা ফুটবলের আনন্দ উপভোগ করার জন্য দেশের ফুটবলের প্রসার ও মানোন্নয়নে সচেষ্ট হতে পারি। বিশ্বকাপের আনন্দ-উত্তেজনার রেশ ধরে আমরা নিশ্চয়ই চাই দেশের ফুটবলের মানোন্নয়নে দৃষ্টি দেয়া হোক, এ দেশের ফুটবলের সোনালি দিন আবারো ফিরে আসুক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App