×

খেলা

ফরাসি বিপ্লব না ক্রোয়াট ইতিহাস?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০১৮, ১১:০২ এএম

ফরাসি বিপ্লব না ক্রোয়াট ইতিহাস?
ফরাসি বিপ্লব না ক্রোয়াট ইতিহাস?
বিশ্বকাপজয়ী দেশগুলোর তালিকায় ক্রোয়েশিয়ার নাম যুক্ত হবে নাকি দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জিতবে ফ্রান্স এ প্রশ্নকে সামনে রেখে শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আজ রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুদল। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত খেলা প্রতিটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে মিডফিল্ডার লুকা মড্রিচের নেতৃত্বাধীন ক্রোয়েশিয়া। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত খেলা ৬টি ম্যাচের ৫টিতে জয় এবং ১টি ম্যাচ ড্র করেছে ফ্রান্স। অর্থাৎ গোলরক্ষক হুগো লরিসের নেতৃত্বাধীন দলটি এখনো কোনো ম্যাচে হারেনি। তবে আজ ফ্রান্স অথবা ক্রোয়েশিয়া যেকোনো একটি দলকে যে হারতেই হবে। ফাইনালের এই লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসবে কে সেটি দেখার অপেক্ষায় এখন সারাবিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা। অপেক্ষার অবসান হবে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর লুজনিয়াকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। ফ্রান্স এর আগে আরো তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। যেখানে নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের শিরোপাও জিতেছে তারা। তবে ক্রোয়েশিয়া এবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছে। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে জিনেদিন জিদানরা যেভাবে সৌরভ ছড়িয়ে শক্তিশালী ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল এবার কি কিলিয়ান এমবাপ্পেরা সেভাবে ফরাসি সৌরভ ছড়িয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতার আনন্দে মাতিয়ে তুলতে পারবেন নিজ দেশের সমর্থকদের নাকি তাদের হারিয়ে প্রতি ২০ বছর পর পর নতুন একটি দেশের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ধারাবাহিতা ধরে রেখে ক্রোয়েশিয়াই জিতবে বিশ্বকাপের শিরোপা তা দেখার অপেক্ষায় এখন সারা বিশ্বের অগণিত ফুটবলপ্রেমীরা। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিস নাকি ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মড্রিচের হাতে উঠবে শিরোপা সে হিসাবের ফয়সালা হবে আজকে। আজকের ফাইনাল ম্যাচটিকে অবশ্য ক্রোয়েশিয়ার জন্য প্রতিশোধের মিশন বলেও অভিহিত করা যায়। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছিল তারা। তবে সেবার স্বাগতিকদের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল ডেভর সুকারদের। এরপর দুদল এবারই প্রথম বিশ্বকাপের ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। তাই এ ম্যাচে ফ্রান্সকে হারাতে পারলে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের প্রতিশোধ যেমন নেয়া হবে তেমনি প্রথমবারের মতো শিরোপাও জিততে পারবে কোচ জ্লাতকো দলিচের শিষ্যরা। অতীত রেকর্ড ও অভিজ্ঞতার বিচারে আজকের ম্যাচে ফ্রান্স ফেভারিট হলেও সাম্প্রতিক পারফরমেন্স বলছে পিছিয়ে নেই ক্রোয়েশিয়াও। রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত খেলা সবকটি ম্যাচেই জিতেছে মড্রিচরা। ফাইনাল পর্যন্ত আসার পথে তারা হারিয়েছে আর্জেন্টিনা, ডেনমার্ক, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে। অন্যদিকে ফাইনালে আসার পথে কোচ দিদিয়ের দেশ্যামের শিষ্যরা হারিয়েছে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও বেলজিয়ামের মতো কঠিন প্রতিপক্ষকে। এ ছাড়া গ্রপপর্বে অস্ট্রেলিয়া ও পেরুকেও হারিয়েছে তারা। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের মতো শক্তিশালী দলকে হারানো ফ্রান্স নিঃসন্দেহে রাশিয়া বিশ্বকাপের শিরোপার অন্যতম দাবিদার। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে যাচ্ছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলে শিরোপা জিতেছে তারা। তবে ২০০৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও ইতালির কাছে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল তাদের। এবার ১২ বছর আগের সে আক্ষেপ পূরণের পালা ফরাসিদের। স্বপ্নের ফাইনালে কোচ দিদিয়ের দেশ্যামের দলের সম্ভাব্য লাইন-আপ হতে পারে ৪-৩-২-১। যেখানে গোল দেয়ার দায়িত্বটা থাকবে মূলত স্ট্রাইকার অলিভার জিরোদের ওপর। এ ছাড়া তার দুপাশে থাকবেন এমবাপ্পে ও গ্রিজম্যান। তাদের বল জোগানের দায়িত্বে থাকবে মূলত পল পগবার ওপর। অন্যদিকে কোচ জ্লাতকো দালিচ তার দলের লাইন-আপ সাজাতে পারেন সম্ভবত ৪-২-৩-১ ফরম্যাশনে। যেখানে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন মারিও মানজুকিচ। এ ম্যাচে বিশেষ নজর থাকবে তার ওপর। কেননা, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে দারুণ এক গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে জিতিয়েছেন তিনি। আক্রমণভাগে মানজুকিচের সঙ্গী হবেন পেরিসিচ ও আন্তে রেভিচ। আর মাঝমাঠ সামলাবেন লুকা মড্রিচ ও ইভান রাকিটিচ। এ ম্যাচে অবশ্য এমবাপ্পে, গ্রিজম্যান, জিরোদ, পগবাদের নিয়ে গড়া ফ্রান্সের শক্তিশালী আক্রমণভাগের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগকে। তবে ক্রোয়েশিয়ার ভরসা মাঝমাঠ; যেখানে আছেন লুকা মড্রিচ ও ইভান রাকিটিচের মতো তারকারা। লড়াইটা অবশ্য দুই দলের গোলরক্ষকের মধ্যেও হবে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ানো দুই গোলরক্ষক সামলাবেন দুই দলের গোলপোস্ট। যেখানে ফ্রান্সের গোলপোস্ট সামলাবেন হুগো লরিস ও ক্রোয়েশিয়ার গোলপোস্ট সামলাবেন ডেনিয়েল সুবাসিচ। এর আগে ক্রোয়াটরা মোট ৫ বার ফরাসিদের মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে ফ্রান্সের ৩টি জয়ের বিপরীতে ক্রোয়েশিয়ার কোনো জয় নেই। এ ছাড়া ড্র হয়েছে বাকি ২টি ম্যাচ। তবে এখন অতীত রেকর্ডের দিকে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই মড্রিচদের সামনে। এখন তাদের সামনে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার মধ্য দিয়ে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার হাতছানি। অন্যদিকে ফ্রান্সের সামনে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে না পাারার আক্ষেপ পূরণের সুযোগ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App