×

জাতীয়

রোগী জিম্মি করে ধর্মঘট আহ্বান অনৈতিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০১৮, ১১:৩৯ এএম

রোগী জিম্মি করে ধর্মঘট আহ্বান অনৈতিক
রোগীদের জিম্মি করে কোনো ধর্মঘট না করতে বিভিন্ন সময় ডাক্তার ও নার্সদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। কিন্তু এরপরও ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা ধর্মঘট পালন করেই চলেছেন। চিকিৎসক নেতারা বলছেন, রোগীদের জিম্মি করে ডাক্তারদের এ কর্মবিরতি বা ধর্মঘট পালন সম্পূর্ণ অনৈতিক। সম্প্রতি ম্যাক্স হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগের মুখে থাকা ম্যাক্স হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন মালিকরা। এর আগে ৪ জুলাই সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা ৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শুরু করে কর্মবিরতি। ১৭ এপ্রিল কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দুই শিক্ষানবিশ ডাক্তারকে মারধর করায় হাসপাতাল তালাবদ্ধ করে সেবা দেয়া থেকে বিরত থাকেন ডাক্তাররা। ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি সার্জিস্কোপে হাসপাতালে রীমা নামে এক রোগীর মৃত্যু এবং ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ছাত্রের মলদ্বারে অস্ত্রোপচারের পর সুই রেখে সেলাই দেয়ার ঘটনায় চার ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা হলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করেছিল ডাক্তাররা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ডাক্তাররা ধর্মঘট বা কর্মবিরতি পালন করেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) এক নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, এ পর্যন্ত ডাক্তাররা কতবার ধর্মঘট পালন করেছে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলে হাসপাতাল বা ক্লিনিক ভাঙচুর, ডাক্তারকে হেনস্থা করলে ডাক্তাররা কর্মবিরতি বা ধর্মঘট পালন করে। এর আগে বিভিন্ন সময় ডাক্তারদের ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে ডাক্তারদের ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি পালন না করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি তার অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন, রোগীকে জিম্মি করে কোনো পেশার মানুষেরই ধর্মঘটে যাওয়া উচিত নয়। ডাক্তারদের তো নয়ই। রোগী জিম্মি করা যাবে না। ধর্মঘট ডাকলে একজন রোগী মারা গেলে দায়িত্ব নেবে কে? জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভাঙচুরের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। জরুরি সেবা বন্ধ করে ডাক্তাররা ধর্মঘট পালন করতে পারে না। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বলা আছে, এ রকম ঘটনায় ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তবে প্রথমেই ভাঙচুর বন্ধ করতে হবে। যথপোযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘটনাটি তদন্ত করে বিচার ব্যবস্থা করতে হবে। অনান্য দেশেও এমন আইন রয়েছে। কিন্তু আমারে দেশে সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় এখনো পর্যন্ত একটি আইন তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, একজন ডাক্তার সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক তার বলার কোনো অধিকার নেই আমি রোগীর চিকিৎসা করব না। ডাক্তারদের ধর্মঘট করা অনৈতিক। এক অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, চিকিৎসা এমন একটি সেবামূলক পেশা, যা কখনোই বন্ধ থাকা উচিত নয়। তাদের ধর্মঘট করার অধিকার পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশেই এভাবে স্বীকৃত নয়। ধর্মঘট দিয়ে ডাক্তাদের সেবা দান থেকে বিরত থাকা, এটা কোনো সভ্য আইন ব্যবস্থায় সমর্থনযোগ্য নয়। এটা শতভাগ অনৈতিক এবং অমানবিক। ম্যাক্স হাসপাতালের ঘটনায় অভিযুক্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ : চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএমডিসিকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত এক সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী অভিযুক্ত চিকিৎসকরা হলেন ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত এবং ডা. শুভ্র দেব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্তের সুপারিশ অনুযায়ী ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্স নিয়ে অনিয়ম আগামী ১৫ দিনের মধ্য দূর করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App