×

জাতীয়

উত্তরাঞ্চলে দ্রুতগতিতে বাড়ছে নদ-নদীর পানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০১৮, ১২:২০ পিএম

উত্তরাঞ্চলে দ্রুতগতিতে বাড়ছে নদ-নদীর পানি
দেশের পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও উত্তরাঞ্চলে প্রায় সব নদীর পানিই দ্রুত বাড়ছে। ইতোমধ্যে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে তিস্তা, ধরলাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি। ব্রহ্মপুত্রও বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। ফলে নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক আবাদি জমি। এদিকে কিছু কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : কুড়িগ্রাম : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কুড়িগ্রাম সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় ধরলা নদী অববাহিকার চরাঞ্চলের অন্তত ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে পটোল, ঢেঁড়স, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। এসব এলাকার কাঁচা সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলায় ধরলা অববাহিকার রাঙ্গামাটি, খোচাবাড়ী, বড়ভিটা, বড়লই, চর বড়লই, ধনীরাম, কবির মামুদ, প্রাণকৃঞ্চ, চন্দ্রখানা, সোনাইকাজী, রামপ্রসাদ, যতিন্দ্র নারায়ণ, ঝাউকুটি, শিমুলবাড়ী, চড় গোরক মণ্ডল, গোরক মণ্ডলসহ ধরলার তীরবর্তী এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। শিমুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এজাহার আলী ও বড়ভিটা ইউপি খয়বর আলী জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পূর্বপাড়ের বেরিবাঁধটি। এতে চরাঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী লোকালয়ে পানি ঢুকে অনেক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ৪৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির এ গতি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হবে। কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) : তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এতে জেলার পাঁচটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫ হাজার পরিবার। তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকালে তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭১ সেন্টিমিটার। তবে দুপুরের পর থেকে পানি কমতে শুরু করে। সেইসঙ্গে বাড়তে শুরু করে নদীভাঙন। গত কয়েকদিনে জেলায় অর্ধশত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড় বালুর বাঁধের প্রায় দুইশ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধটি রক্ষায় কাজ শুরু করেছে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। এদিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ সদর উপজেলার কুলাঘাট ধরলা নদীর পানিবন্দি এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঝুঁঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে কাজ চলমান রয়েছে। আতঙ্কের কিছু নেই। ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) : দুই-তিন দিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে উপজেলার নদীবেষ্টিত চরগুলোর নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়ায় কয়েক হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেইসঙ্গে শতশত একর ফসলি জমি, পাট, পটোল, কাঁচামরিচ ও শাকসবজির ক্ষেতসহ সদ্য রোপণকৃত বীজতলা তলিয়ে গেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি পয়েন্টে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুএক দিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করে যাবে। ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামাণিক জানান, পানি বৃদ্ধি কারণে নি¤œাঞ্চলের বেশ কিছু বাড়িঘর ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত এক সপ্তাহে ফজলুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০০টি পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। সুনামগঞ্জ : গত ৬ দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের ৫ উপজেলার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে সুরমার পানি কমতে শুরু করলেও এখনো তা বিপদসীমার উপরে রয়েছে। গতকাল সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৭ সে মি উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ^ম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় যান চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় লোকজন নৌকা দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে ঢলের পানিতে বসতভিটায় পানি না উঠলেও সড়কে পানি থাকার কারণে চরম ভোগান্তিতে আছেন ৫ উপজেলার বাসিন্দারা। গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্মে উপজেলা ও জেলা সদরে যেতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস জানান, এখনো বন্যা পরিস্থিতি হয়নি। বন্যা হলে প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App