×

জাতীয়

সরকারি হাসপাতালে চার বেলা খাবার ১২৫ টাকায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০১৮, ১১:৫৪ এএম

সরকারি হাসপাতালে চার বেলা খাবার ১২৫ টাকায়
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পাঁচ বছরেও বাড়েনি সরকারি হাসপাতালে রোগীদের পথ্য (খাবার) বাবদ বরাদ্দ। বর্তমানে এই বাবদ জনপ্রতি বরাদ্দ দৈনিক ১২৫ টাকা। এই টাকায় রোগীদের চারবেলা খাবার সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক বছরের মূল্যস্ফীতির কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও এই বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে। জানা যায়, ২০০৯ সালে রোগী প্রতি বরাদ্দ ৫০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা করা হয়। ২০১৩ সালে এই বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ১২৫ টাকা। তবে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বরসহ জাতীয় দিবস এবং ধর্মীয় উৎসবের দিনে খাবারের বরাদ্দ বেড়ে হয় ২০০ টাকা। রাজধানীর প্রধান কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীদের প্রতিদিনই দেয়া হচ্ছে পাউরুটি, জেলি, কলা, চা, বিস্কুট, ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, পায়েস ইত্যাদি। তবে খাবারের মান নিয়ে রোগীদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সীমিত টাকায়ও রোগীদের খাবারের মান বেড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ৪৫০ হাসপাতালে ১৮ হাজার শয্যা রয়েছে। এর বাইরে মেডিকেল কলেজসহ জেলা পর্যায় ও বিশেষায়িত ১২৪টি হাসপাতালে ৪৭ হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তির জন্য শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। জানা যায়, সরকার প্রতি রোগীর জন্য অর্থ ও একটি সাধারণ মান নির্ধারণ করে দিয়েছে। রোগীর খাবার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। খাবারের জন্য প্রতিটি হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিদিনের খাবার সংগ্রহ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিনের রোগীর সংখ্যা জানায়। সরবরাহকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে আয়োজন করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন ভোরের কাগজকে জানান, ২ হাজার ৬শ বেডের এই হাসপাতালে ৩ হাজার ৭শ থেকে ৩ হাজার ৯শ জন রোগী ভর্তি থাকেন। রোগীদের চারবেলা খাবার দেয়া হয়। তিনি বলেন, সরকার থেকে প্রতি রোগীর জন্য অর্থ বরাদ্দ করা আছে। এ ক্ষেত্রে শয্যা গণনা করা হয়। ১২৫ টাকায় রোগীদের চার বেলা এবং রোগভেদে খাবার দেয়াটা কঠিন কাজ। এ জন্য বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। বরাদ্দ বাড়লে খাবারের মান আরো বাড়ানো যাবে। সেই সঙ্গে খাদ্য তালিকায় নতুন একটি আইটেমও আমরা যোগ করতে পারব। রোগীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রেটিন ও ভিটামিন পাবে। একই কথা বলেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়–য়া। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ১২৫ টাকা খুব একটা বেশি নয়। সীমিত বরাদ্দের মধ্যেও আমরা রোগীকে ভালোটাই দেয়ার চেষ্টা করি। তবে বরাদ্দ বাড়লে রোগীরাই এর উপকার পাবে। দুই পরিচালকই জানান, রোগীর খাবারের জন্য শয্যা প্রতি অর্থ বরাদ্দ হলেও অতিরিক্ত যে সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তাদের জন্যও সরকার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। মাস শেষে হাসপাতাল থেকে একটি বিল তৈরি করে জমা দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী অর্থ দেয় সরকার। জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, সীমিত বাজেটের কারণে রোগীদের জন্য আমিষ, প্রোটিন, ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার যে পরিমাণ ও মাত্রায় সুপারিশ করেন চিকিৎসকরা এর সামান্যও দেশের অধিকাংশ হাসপাতালের রোগীরা পাচ্ছেন না। রোগ অনুযায়ী খাবার না দিলে রোগীদের জটিলতা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে আসা দরিদ্র ও দূরবর্তী এলাকার রোগীরাই বেশি সমস্যায় পড়েন। কেননা, তারা হাসপাতালের খাবারের ওপরই নির্ভর করে। খাবারের মান বাড়াতে হলে বাজেটও বাড়াতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App